বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:৫০ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক:পরিচালনা কমিটির সভাপতি না করায় স্কুলের মধ্যেই প্রধান শিক্ষককে পিটিয়ে আহত করার অভিযোগ উঠেছে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের ছেলে ও ভাইয়ের বিরুদ্ধে।আজ মঙ্গলবার (০২ এপ্রিল) দুপুরে বরিশাল সদর উপজেলার চরবাড়িয়া ইউনিয়নের কাগাশুরা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এই ঘটনা ঘটে।ঘটনার সময় উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রেহানা বেগম নিজেও উপস্থিত ছিলেন বলে অভিযোগ রয়েছে। হামলার শিকার প্রধান শিক্ষকের নাম শফিকুল ইসলাম। তিনি বর্তমানে বরিশাল জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।আহত প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বলেন, উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রেহানা বেগম বর্তমানে কাগজে-কলমে ওই স্কুলের শিক্ষক।এজন্য তিনি স্কুলের শিক্ষক হিসেবে বেতন-ভাতা সহ সকল সুযোগ সুবিধা গ্রহন করছেন। কিন্তু তিনি কোন দায়িত্ব পালন করছেন না। মাসের শেষে এসে হাজিরা খাতায় এক সাথে এক মাসের স্বাক্ষর গ্রহন করে যান।এতে বাধা দিয়ে ইতিপূর্বে অনেকবার ভাইস চেয়ারম্যান কর্তৃক লাঞ্চিত হয়েছি।
প্রধান শিক্ষক অভিযোগ করেন, পূর্বের ন্যায়, বেলা ১২ টার দিকে পূর্বের এক মাসের হাজিরা দিতে আসেন উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রেহানা বেগম। তিনি খাতায় স্বাক্ষর করে তার ছোট ভাই রাসেল মুন্সীর স্ত্রীকে বিদ্যালয়ের ক্লার্ক পদে ও আরেক ভাইয়ের ছেলেকে বিদ্যালয়ের পিয়ন পদে জরুরি ভিত্তিতে নিয়োগ দেবার দাবি তুলেন। তখন আমি এতে আইনের বিষয় বাধ্যবাধকতা তুলে ধরলে তিনি আমার ওপর ক্ষিপ্ত হন।
এরপর বিদ্যালয়ের কমিটির বিষয়ে কথা তুলে আমাকে গালাগাল শুরু করে। এর কিছুক্ষনের মধ্যেই বিদ্যালয়ে প্রবেশ করেন ভাইস চেয়ারম্যান পুত্র রিদয়, তার ভাই মনির মুন্সি ও তার সহযোগি যুবলীগ নেতা খোকন দিদার। তারা রেহানাকে কেন কমিটির সভাপতি করা হবেনা এমন কথা বলে আমাকে মারধোর শুরু করে। একপর্যায়ে কক্ষ থেকে বের করে বিদ্যালয়ের মাঠে বসে আমাকে মারধর করে। পরে বিদ্যালয় থেকে আমাকে হুমকি দিয়ে বের করে দেয়। পরে বিষয়টি স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান, উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা, জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা এবং শিক্ষক সমিতিকে অবহিত করেছি।
প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম বলেন, ‘বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছিলেন বরিশাল সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ। তিনি ব্যস্ততার কারনে ওই পদ থেকে সরে যান। পরে তার পরামর্শে একটি এ্যাডহক কমিটি গঠন করা হয়। ওই কমিটিতে সভাপতি করা হয় আওয়ামীলীগ নেতা মাহাবুব উদ্দিন আহমেদ-বীর বিক্রমকে। তবে বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটির সভাপতি হতে চেয়েছিলেন উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রেহানা বেগম। তা না হতে পেরে তিনি আমার ওপর ক্ষিপ্ত হন। পূর্বের সেই জের ধরেই মঙ্গলবার ভাইস চেয়ারম্যান তার ছেলে ও ভাইকে দিয়ে তার ওপর হামলা করিয়েছে বলে অভিযোগ প্রধান শিক্ষকের।এ প্রসঙ্গে চরবাড়িয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মাহাতাব হোসেন সুরুজ বলেন, প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম আমাকে ফোন করে ছিলো। উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রেহানা বেগমের ভাই মনির মুন্সী, ছেলে রিদয় ও সহযোগী খোকন দিদার নাকি তার ওপর হামলা করেছে সে কথা বলার জন্য। পরে আমি খোঁজ খবর নিয়ে তার অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি।
বিষয়টি শিক্ষা কর্মকর্তা ও আওয়ামী লীগের উচ্চ পদস্থ নেতাদের জানিয়েছেন বলে জানান চেয়ারম্যান।তবে শিক্ষককে মারধরের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন সদর উপজেলা মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান রেহানা বেগম। তিনি বলেন, প্রধান শিক্ষকের সাথে কমিটি নিয়ে একটু বাক-বিতন্ডা হয়েছে। কিন্তু তাকে কেউ মারধর করেনি। সম্পর্ক খারাপ থাকায় তিনি এমন অপবাদ ছরাচ্ছে বলে দাবি রেহানার।শিক্ষক সমিতি বরিশাল জেলা সভাপতি আ. মালেক হাওলাদার বলেন, হামলার বিষয়ে প্রধান শিক্ষক শফিকুল ইসলাম আমাদের অবহিত করেছেন। আমরা সন্ধ্যায় বিষয়টি নিয়ে জরুরি সভা ডেকেছি। ওই সভায় এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহন করা হবে।
Leave a Reply