শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:১৫ অপরাহ্ন
বরগুনা প্রতিনধি।। সাগরে ৬৫ দিন সকল মাছ ধরা বন্ধে উপকূলীয় এলাকা বরগুনার পাথরঘাটার জেলেরা না খেয়ে দিন পার করেছেন। অনেকে এনজিও থেকে লোন নিয়ে না দিতে পেরে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন।ইলিশের ভরা মৌসুমে ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন বঙ্গোপসাগরে সব ধরণের মাছ ধরা সম্পূর্ণভাবে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়।
এ নিষেধাজ্ঞা জারি করায় বিপাকে পড়েছেন জেলেরা ও বিপণন পেশায় নিয়োজিত উপকূলের পাথরঘাটার প্রায় ৪০ হাজার পরিবার। মাছের ওপরে নির্ভর করেই চলে তাদের জীবন-জীবিকা। অবরোধের মাস না পেরুতে অভাবের বেড়াজালে দিশেহারা জেলেরা। এই নিষেধাজ্ঞা থাকায় উপজেলার জেলে পরিবারগুলোতে ছিলনা ঈদের আমেজ।
উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্র জানায়, এ উপজেলায় নিবন্ধিত জেলের সংখ্যা ১৪ হাজার ৩’শ ৫০ জন। কিন্তু সব মিলিয়ে এ উপজেলায় প্রায় বিশ হাজার জেলে রয়েছে। মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা চলাকালে প্রতি মাসে প্রত্যেক নিবন্ধিত জেলে পরিবারকে ৪০ কেজি করে চাল দেওয়া হয়েছে। তবে নিবন্ধিত জেলেদের মধ্যে ৬৮৩ জন জেলে এখনও কোনও সহযোগিতার আওতায় আসেনি। এছাড়া অনিবন্ধিত জেলেরাও সহযোগিতার আওতায় নেই। দেশের বৃহত্তম মৎস অবতরণ কেন্দ্র (বিএফডিসি) বরগুনার পাথরঘাটায় দেখা যায়, জেলেরা ট্রলার ঘাটে বেধেঁ রেখে অলস সময় কাটাচ্ছেন। এ সময় জেলেরা জানান, সাগরে ইলিশ ধরা বন্ধে তাদের আয়ের পথ বন্ধ হয়ে বেকার হয়ে পরেছেন। ঈদের দিনেও ভালো খেতে পারেনি তারা। অধিকাংশ জেলে পরিবারই ধারদেনা করে চলছে।এ নিষেধাজ্ঞায় ট্রলার মালিকরাও জেলেদের দাদন দিয়ে পরেছেন অনিশ্চয়তায়।
ট্রলার মালিক বেলাল জানান, ট্রলার ও জাল মেরামত, জেলেদের অগ্রিম টাকা দিয়ে তারা এখন সাগরে মাছ ধরতে পারছেন না। নিষেধাজ্ঞার কারণে চরম ক্ষতির মুখে পরেছেন তারা। নিষেধাজ্ঞা চলাকালীন সাধারণ জেলেদের আয়ের পথ না থাকায় তারা বিভিন্ন ধরণের অপকর্মে জড়িয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা করেছন সংশ্লিষ্টরা।
পাথরঘাটা উপজেলার পদ্মা এলাকার জেলে আল-আমিন জানান, অনেক দিন মাছ ধরা বন্ধে আমাদের এক মাত্র আয়ের পথটিও বন্ধ হয়ে গেছে। এখন অসহায় হয়ে পরেছি, পরিবার নিয়ে খুবই কষ্টে আছি। এনজিওর লোন আছে দিতে না পরলে এলাকা ছেড়ে পালাতে হবে।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ৬৫ দিন মাছ ধরা বন্ধের এই আইন বাস্তবায়নে মৎস অধিদপ্তর, নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড, জেলা ও উপজেলা প্রশাসন, পুলিশ এবং স্থানীয় মৎস দপ্তরের উদ্যোগে ব্যাপকভাবে অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে। নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে চলছে ভ্রাম্যমাণ আদালত। আইন ভাঙলে সর্বোচচ ৫০ হাজার টাকা অর্থদণ্ডের বিধান রয়েছে বলে জানান তিনি।
তবে এ সময় জেলেরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন সেদিকেও নজর দেওয়া হয়েছে। ইতোমধ্যে ক্ষতিগ্রস্ত জেলেদের বিশেষ ভিজিএফের মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়েছে। দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে বরগুনায় ৩৯ হাজার ৮’শ জেলেকে ৪০ কেজি করে চাল দেয়া হয়েছে বলে জানান এই কর্মকর্তা।
Leave a Reply