বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫১ অপরাহ্ন
রিয়াদ হোসাইন,গলাচিপা (পটুয়াখালী)প্রতিনিধি॥ নামের মিল থাকায় কারাগারে সাতদিন কাটাতে হয়েছে নিরপরাধ ৮০ বছরের বৃদ্ধ হাবিবুর রহমানের। অবশেষে মুক্তি পেয়েছেন তিনি। তার বাড়ি পটুয়াখালীর গলাচিপা উপজেলায়।
রোববার বিকেলে হাবিবুর রহমানকে মুক্তির আদেশ দেন যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ (প্রথম) আদালতের বিচারক মো. আবুল বাসার মিয়া। আদালতের নির্দেশের পর তাকে জেলা কারাগার থেকে মুক্তি দেয়া হয়।
ব্র্যাকের আইনজীবী আবুল কালাম আজাদ বলেন, চেক ডিজঅনার মামলায় গলাচিপা পৌর এলাকার মুজিবনগর রোডের সাজাপ্রাপ্ত মো. হাবিবুর রহমানের স্থলে পৌর এলাকার কলেজপাড়ার বনানি এলাকার ৮০ বছরের নিরপরাধ বৃদ্ধকে জেলে পাঠায় পুলিশ। নিরপরাধ বৃদ্ধকে মুক্তির বিষয় ব্র্যাক কর্তৃপক্ষ সার্বিক সহায়তা করেছে।
হাবিবুর রহমানের আইনজীবী মোজাম্মেল হোসেন তপন বলেন, পুলিশের ভুলের কারণে বৃদ্ধ হাবিবুর রহমানকে সাতদিন বিনা দোষে সাজা খাটতে হয়েছে। এতে তার সম্মানহানি ও ক্ষতি হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেছে আদালত। একইসঙ্গে হাবিবুর রহমানকে মুক্তি দেয়া হয়।
জানা গেছে, গলাচিপা থানা সংলগ্ন সদর রোডের নাহার গার্মেন্টসের মালিক হাবিবুর রহমান, বাবা নূর মোহাম্মাদ মাস্টার, মুজিবনগর রোড, গলাচিপা পৌর শহরের বাসিন্দা ২০১২ সালের ৬ আগস্ট ব্র্যাক থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা ঋণ নেন।
এ সময় তিনি ব্র্যাকের অনুকূলে উত্তরা ব্যাংক গলাচিপা শাখায় তার নিজস্ব অ্যাকাউন্টের (হিসাব নম্বর ২২০০) ঋণের সমপরিমাণ অর্থের একটি চেক জমা দেন। কিন্তু ঋণ যথাসময়ে পরিশোধ না করায় ব্র্যাক কর্তৃপক্ষ হাবিবুর রহমানের জমা করা চেকটি ২০১৩ সালের ১০ এপ্রিল ব্যাংকে জমা দেয়। এতে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় তা ডিজঅনার করা হয়। পরে ব্র্যাক কর্তৃপক্ষ ২০১৩ সালের ২ মে তাকে একটি লিগ্যাল নোটিশ পাঠায়।
কিন্তু তিনি ব্র্যাক থেকে ঋণ নেননি মর্মে ২০১৩ সালের ১৯ জুন লিখিতভাবে ব্র্যাক কর্তৃপক্ষকে জানান। এ অবস্থায় হাবিবুর রহমানের বিরুদ্ধে আদালতে মামলা করা হয়।
২০১৮ সালের ২৫ মার্চ ওই মামলার রায় দেন পটুয়াখালীর যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ জিন্নাৎ জাহান ঝুনু। রায়ে হাবিবুর রহমানকে এক বছরের কারাদণ্ড ও ঋণের দ্বিগুণ অর্থ অর্থাৎ দুই লাখ ৪০ হাজার টাকা জরিমানার আদেশ দেন।
রায়ের দিন হাবিবুর রহমান আদালতে অনুপস্থিত থাকায় তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়। ওই পরোয়ানা অনুযায়ী ৪ অক্টোবর গলাচিপা থানার এএসআই আল-আমিন গলাচিপার বনানী এলাকার ৮০ বছরের বৃদ্ধ হাবিবুর রহমানকে বাসা থেকে গ্রেফতার করেন। ওই দিনই তাকে পটুয়াখালী কারাগারে পাঠানো হয়। পরে জানা যায় নামের মিল থাকায় নিরপরাধ হাবিবুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়েছে।
হাবিবুর রহমানের স্ত্রী আনোয়ারা বেগম বলেন, আমার স্বামী কোনোদিন ব্যবসা করেননি। আমরা কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেইনি। আমাদের দুই ছেলে ঢাকায় পোশাক কারখানায় চাকরি করে। আমাদের ভরণ-পোষণের জন্য প্রতি মাসে টাকা দেয় দুই ছেলে। তা দিয়ে আমরা স্বামী-স্ত্রী চলি। পুলিশকে বিষয়টি বলেছি, কিন্তু শোনেনি।
পটুয়াখালীর অ্যাডিশনাল এসপি (প্রশাসন ও অপরাধ) মাহফুজুর রহমান বলেন, এরইমধ্যে গলাচিপার প্রকৃত আসামিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। ওই ঘটনায় তদন্ত কর্মকর্তা এএসআই আল-আমিনকে থানা থেকে পুলিশ লাইনে প্রত্যাহার করা হয়েছে।
Leave a Reply