রবিবার, ০২ জুন ২০২৪, ০৭:০৮ পূর্বাহ্ন
থানা প্রতিনিধি॥ বরিশাল সদর উপজেলার সাহেবের হাট এলাকায় মানসিক ভারসাম্যহীন মধ্য বয়সী এক নারীকে গণধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় তিন ব্যক্তির বিরুদ্ধে। ঘটনাটি জানাজানি হলে ওই রাতেই ঘটনাটি ৭০ হাজার টাকায় রফাদফা করেন বলে অভিযোগ উঠেছে সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক এক নেতার বিরুদ্ধে।
শুধু তাই নয়, ঘটনার রাতেই মানসিক প্রতিবন্ধি ওই নারীকে এলাকা ছাড়া করেছেন তারা। এমনকি স্থানীয় থানা পুলিশ ঘটনাটি অবগত হওয়া সত্যেও ব্যবস্থা নেন নি তারা। ফলে একে বারেই ধামা চাপা পড়ে গেছে মানসিক প্রতিবন্ধী নারীকে গণধর্ষণের ঘটনাটি। গত বৃহস্পতিবার (০৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যা সাড়ে সাতটার দিকে সদর উপজেলার বন্দর থানাধীন সাহেবেরহাট চরপত্তনিয়া গ্রামে এই গণধর্ষণের ঘটনা ঘটে।
যদিও বরিশাল মহানগরীর বন্দর থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) আনোয়ার হোসেন তালুকদার দাবি করেছেন, ‘এ ধরনের কোন ঘটনা তার জানা নেই। এমনকি কেউ অভিযোগ নিয়েও আসেনি। তাই সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদককে ওই প্রতিবন্ধি নারীকে থানায় নিয়ে অভিযোগ দেয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ওসি।
স্থানীয় সূত্রে জানাগেছে, ‘বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় সাড়ে সাতটার দিকে পাঠান বাড়ির বাগানে আক্কেল আকনের পুত্র আলতাফ আকন, আলম হাওলাদার ও ভ্যান চালক মালেক খন্দকার মিলে মানসিক ভারসাম্যহীন নারীকে জোর পূর্বক ধরে নিয়ে গণধর্ষণ করে। এসময় ওই নারী কোন মতে দৌড়ে গিয়ে স্থানীয় জনৈক মিজান নামের ব্যক্তির বাড়িতে আশ্রয় নেয় এবং পরে মিজানের স্ত্রীকে ধর্ষণের ঘটনা খুলে বলে।
এদিকে ঘটনাটি জানাজানি বলে এলাকাজুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। তাৎক্ষনিকভাবে ঘটনাটি ধামা চাপা দিতে মহানগরীর বন্দর থানার এক দালাল এবং সদর উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক নেতা ও বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদ মিলে রাতেই সালিশ-দরবার করেন।
সালিশে তিন ধর্ষককে দু’জনকে ২৫ হাজার টাকা করে এবং একজনকে ২০ হাজার করে জরিমানা করা হয়। একই সঙ্গে তাদেরকে জুতা পেটার সিদ্ধান্ত হয়। সেই সাথে রাতেই মানসিক ভারসাম্যহীন ধর্ষিতা নারীকে মিজানের বাড়ি থেকে সরিয়ে ধর্ষক আলতাফের ভাতিজা উজ্জলের ঘরে নিয়ে যায়। তবে এর পর থেকেই নিরুদ্দেশ্য ওই নারী।
অভিযোগ উঠেছে সালিশদাররা রাফাদফা করে রাতের আধারে মানসিক ভারসাম্যহীন নারীকে ওই এলাকা থেকে অনত্র সরিয়ে দেন সালিশদাররা। ঘটনাটি জানাজানি হলে বেকায়দার পড়েন সালিশদার আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদ ও তার সহযোগিরা।
এবিষয়ে জানতে ঘটনার রাতে শ্বশুরকে ছাড়িয়ে আনতে জরিমানার টাকা নিয়ে ঘটনাস্থলে যাওয়া আলমের মেয়ে জামাই হারুন গাজী বলেন, ‘ওই ঘটনায় কেউ কোন জরিমানা আদায় করেনি। যারা সালিশ করেছে তারা এমনেতেই ওই তিনজনকে ক্ষমা করে দিয়েছেন।
এবিষয়ে চর পত্তনিয়া বাজারের দুই অভিযুক্ত আলম ও মালেক অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে বলেন, ‘আমরা মানসিক ভারসাম্যহীন ওই নারীকে ঠিক চিনতে পারিনি। তবে তার সঙ্গে যে কাজটি করেছি সেটা আমাদের অপরাধ হয়েছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা অপরাধ করেছি বিধায় আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদ সাহেব আমাদের তিনজনকে ৭০ হাজার টাকা জরিমানা ও ২৫টি করে লাঠির আঘাত ধার্য করছিলেন। কিন্তু পরে আর আমাদের পেটায়নি।
অভিযোগের বিষয়ে জানতে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা জাহিদ এর সঙ্গে তার ব্যবহৃত মুঠোফোনে একাধীকবার ফোন করা হলে তিনি তা রিসিভ না করায় বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি । তবে বন্দর থানার অফিসার ইন-চার্জ (ওসি) আনোয়ার হোসেন তালুকদার বলেন, ‘এ ধরনের কোন ঘটনা আমার নলেজে নেই। কেউ অভিযোগ নিয়েও আসেনি।
সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদককে তিনি বলেন, ‘এমন ঘটনা ঘটে থাকলে আপনি ভিকটিমকে থানায় নিয়ে আসেন। পরে আমরা ব্যবস্থা নিবো। অন্য এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, ‘হত্যাকান্ড ঘটলে বাদী না থাকলে পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করতে পারে। কিন্তু ভিকটিমকে যদি মামলা না করে সেখানে আমাদের কি দায়িত্ব থাকতে পারে। তবে নিরুদ্ধে মানসিক প্রতিবন্ধি ধর্ষীতা নারীকে খুঁজে বের করার দায়িত্ব কার এবং কে হবে সেই মামলার বাদী এমন প্রশ্ন করা হলে এড়িয়ে যান ওসি আনোয়ার হোসেন।
Leave a Reply