শনিবার, ১৮ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:২৭ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: পবিত্র মাহে রমজানে দ্রব্য মূল্য নিয়ন্ত্রনে রাখতে খোলা বাজারে ভোক্তা পর্যায়ে ন্যায্য মূল্যে পণ্য বিক্রি কার্যক্রম শুরু করেছে ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি)। বানিজ্য মন্ত্রনালয়ের নির্দেশনা অনুযায়ী গত ২৩ এপ্রিল থেকে দেশ ব্যাপী এক যোগে ভ্রাম্যমান ট্রাকের মাধ্যমে এ কার্যক্রম শুরু হয়। তবে মহানগর ও ঝালকাঠি জেলা ব্যতিত বাকি ৭টি জেলায় এখনো পৌঁছেনি টিসিবি’র পণ্য।
বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের আওতাধিন টিসিবি’র ১২৩ জন ডিলার থাকলে এ পর্যন্ত মাত্র ৮ জন পণ্য উত্তোলন করেছেন। বাকি ডিলারদের পণ্য উত্তোলনে আগ্রহ না থাকলেও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের উদ্যোগ নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের। যদিও এবারে টিসিবি’র পণ্য নিয়ে ডিলারদের আগ্রহের কথা জানিয়েছেন টিসিবি বরিশাল আঞ্চলিক অফিস প্রধান মো. আনিছুর রহমান। তার দাবী ডিলাররা পণ্য উত্তোলনের জন্য যোগাযোগ করেছেন। তারা রোববার থেকে পণ্য উত্তোলন এবং বিক্রি কার্যক্রম শুরু করতে পারেন।
নগরীর সিএসডি গুদামে (ত্রিশ গোডাউন) ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) আঞ্চলিক কার্যালয় সূত্রে জানাগেছে, ‘বরিশাল সিটি কর্পোরেশন, ঝালকাঠি, পিরোজপুর, বরগুনা, পটুয়াখালী, ভোলা, বরিশাল, মাদারীপুর ও শরিয়তপুর জেলা নিয়ে টিসিবি’র দক্ষিণাঞ্চলের কার্যক্রম চলছে।
এ ৮টি জেলা ও একটি সিটি কর্পোরেশন এলাকায় বর্তমানে বৈধ ডিলারের সংখ্যা ১২৩ জন। যার মধ্যে শুধুমাত্র বরিশাল সিটি কর্পোরেশন এলাকায় ডিলারের সংখ্যা ৩৯ জন। বরিশাল সিটি’র বাইরের ডিলাররা উপজেলা পর্যায়ে খোলা বাজারে টিসিবি’র পণ্য বিক্রি করতে পারবে। কিন্তু পূর্বের ন্যায় এবারও বেশিরভাগ ডিলারের পণ্য উত্তোলন নিয়ে আগ্রহ দেখা যাচ্ছে না। যার দরুন মোট ১২৩ জন ডিলারের মধ্যে মাত্র ৮ জন ডিলার টিসিবি’র পণ্য উত্তোলন করে তা ট্রাকে করে ভ্রাম্যমানভাবে বিক্রি করছে। এর মধ্যে বরিশাল সিটি এলাকায় ৫ জন ও বাকি তিনজন ঝালকাঠির ডিলার।
ডিলারদের অনাগ্রহের কারনে কার্যক্রম শুরুর চার দিন পেরিয়ে গেলেও এখন পর্যন্ত পটুয়াখালী, ভোলা, বরগুনা, পিরোজপুর, মাদারীপুর ও শরিয়তপুর এবং বরিশাল জেলার উপজেলা পর্যায়ে ন্যায্য মূল্যে টিসিবি’র পণ্য প্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, বিগত বছরের তুলানায় এ বছর টিসিবি’র পণ্য বিক্রি অনেকটাই লাভজনক। কেননা বাজার মূল্যের থেকে টিসিবি’র নির্ধারিত পন্যের মূল্য অনেক কম। তাই ভ্রাম্যমান ট্রাক সেল এরই মধ্যে বেশ জমে উঠেছে।
ট্রাকে টিসিবি’র পণ্য বিক্রি করা ডিলার আল খলিফা এন্টারপ্রাইজ এর মনির সিকদার বলেন, ‘গত বছর টিসিবি’র পণ্য বিক্রিতে অনাগ্রহী ছিলেন ডিলাররা। ওই বছর বাজার ও টিসিবি পন্যের মূল্যের মধ্যে তেমন ব্যবধান ছিলো না। এ কারনে অনেক ডিলারকে পণ্য উত্তোলন করে লোকসান গুনতে হয়েছে। তবে এবারের চিত্র পুরোটাই ভিন্ন।
তিনি বলেন, এক একজন ভোক্তা প্রতি কেজি ৪৭ টাকা দরে ৪ কেজি পর্যন্ত চিনি, ৪৪ টাকা দরে ২ কেজি পর্যন্ত মসুর ডাল ও ৮৫ টাকা দরে সর্বোচ্চ ৫ লিটার সয়াবিন তেল ন্যায্য মূল্যে কিনতে পারছেন। যা খুচরা বাজার মূল্যের থেকে অনেক কম। তাছাড়া টিসিবি’র বিক্রি করা পন্যের গুনগত মানও ভালো। যে কারনে এবার ভোক্তাদের কাছে টিসিবি’র পন্যের চাহিদাও রয়েছে। তাই তিনটি পণ্য এক সাথে প্যাকেজ হিসেবে বিক্রি করছেন তারা।
টিসিবি বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ের অফিস প্রধান আনিছুর রহমান জানান, ‘একজন ডিলার ভ্রাম্যমান ট্রাকে করে প্রতিদিন সর্বনি¤œ ৩শ থেকে সর্বোচ্চ ৫শ কেজি চিনি ও মসুর ডাল, ৩ থেকে ৫শ লিটার সয়াবিন তেল উত্তোলন ও বিক্রি করতে পারবে। তাছাড়া রমজান মাস শুরুর ৫ দিন আগে থেকে ছোলা বুট বিক্রি হবে। এরই মধ্যে ছোলা আমদানী এবং প্রতি কেজি ছোলার মূল্য ৬০ টাকা নির্ধারন হয়েছে। একই সময় খেজুর বিক্রি শুরু হবে। তবে তার মূল্য এখনো নির্ধারন হয়নি।
তিনি বলেন, ‘নিয়ম অনুযায়ী যারা দোকানের ডিলার তারাই ভ্রাম্যমানভাবে ট্রাক সেল এর জন্য টিসিবি’র পণ্য উত্তোলন করতে পারবে। তবে প্রতিটি জেলায় একাধিক ডিলার থাকলেও প্রতিদিন দু’জন করে পণ্য বিক্রি করতে পারবে। আর মহানগরী এলাকায় ৫ জন ভ্রাম্যমানভাবে পণ্য বিক্রি করতে পারবে।
তিনি জানান, ‘তার অধিনে ১২৩ জন ডিলার থাকলেও এখন পর্যন্ত মাত্র ৮ জন ডিলার পণ্য উত্তোলন ও বিক্রি শুরু করেছে। এর মধ্যে নগরীর জেলা প্রশাসক কার্যালয়, সিটি কর্পোরেশনের নগর ভবন, আমতলার মোড়, চৌমাথা বাজার ও রূপাতলী হাউজিং এলাকায় ৫টি ট্রাকে টিসিবি’র পণ্য বিক্রি হচ্ছে। বাকি তিনটি ট্রাকে ঝালকাঠি জেলায় বিক্রি হচ্ছে।
তিনি বলেন, ‘এবার টিসিবি’র পন্যের চাহিদা রয়েছে। তাই অনেক ডিলার আমাদের সাথে যোগাযোগও করেছে পণ্য উত্তোলনের জন্য। রোববারের পরে থেকে পণ্য উত্তোলনকারী ডিলারদের সংখ্যা বৃদ্ধির সম্ভাবনার কথা জানিয়ে আনিছুর রহমান বলেন, ‘রোববার থেকে দোকান পর্যায়ে টিসিবি’র পণ্য বিক্রি শুরু হবে। যে কারনে নগরীর বাইরে যেসব ডিলার রয়েছে তারা খরচ বাচাতে ওইদিন থেকেই ট্রাক ও দোকানের জন্য পণ্য উত্তোলনের জন্য অপেক্ষা করছেন।
তবে যেসব ডিলার ইতিপূর্বে টিসিবি’র পণ্য উত্তোলন করেননি এবং চলতি বরাদ্দেও উত্তোলনে আগ্রহী নন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহন প্রসঙ্গে আনিছুর রহমান বলেন, ‘আমি এই কার্যালয়ে নতুন এসছি। এটাই আমার প্রথম বরাদ্দ। তাছাড়া কোন ডিলারদের বিরুদ্ধে সারাসরি ব্যবস্থা গ্রহনের ক্ষমতা আমাদের নেই। আমরা পারি পরাদ্দের মেয়াদ শেষে বানিজ্য মন্ত্রনালয়ে প্রতিবেদন পাঠাতে। ডিলারদের বিরুদ্ধে যা ব্যবস্থা নেয়ার সেখান থেকেই নেয়া হবে।
Leave a Reply