সোমবার, ১০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০৫:৩৮ পূর্বাহ্ন
এসএম গোলাম মাহমুদ রিপন, বানারীপাড়া॥ বরিশালের বানারীপাড়ায় প্রথম মা ও মেয়ে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। মঙ্গলবার উপজেলার তেতলা মধুরভিটা গ্রামের মা ও মেয়ে করোনা পরীক্ষার রিপোর্ট পজিটিভ আসে। তাদের চিকিৎসা দেয়া পিরোজপুরের নেছারাবাদ উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. ফিরোজ কিবরিয়া ও শেরেবাংলা বাজারের গ্রাম ডাক্তার মনির হোসেন স্বেচ্ছায় হোম কোয়ারেন্টিনে গেছেন।
এ দিকে মা-মেয়ের অবাধ চলাফেরায় করোনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। ১৪ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত মা-মেয়ের চিকিৎসা ও ত্রাণ নেয়ার পাশাপাশি এলাকায় অবাধ চলাফেরার সময় তাদের সংস্পর্শে আসা লোকজনের মাঝেও করোনা ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
স্থানীয় একাধিক সূত্রে জানা গেছে, করোনায় আক্রান্ত মা-মেয়ে ১৪ এপ্রিল নেছারাবাদ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ফিরোজ কিবরিয়ার কাছে ডায়রিয়ার চিকিৎসা নেন। পরে নাজিরপুর উপজেলার বৈঠাকাটা বাজারের ফার্মেসি থেকে ওষুধ কিনে বাড়িতে যান। এর পর থেকে তারা শেরেবাংলা বাজারের গ্রাম্য ডাক্তার মনির হোসেনের কাছ থেকে ইনজেকশন নেন।
১৭ এপ্রিল তারা পুনরায় অসুস্থ হয়ে পড়ালে পরিবারের লোকজন তাদের সড়কপথে ও সন্ধ্যা নদীর খেয়া পাড় হয়ে বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান। সেখানে কর্তব্যরত ডাক্তার তাদের ভর্তি করেন। এ সময় উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাক্তার কবির হাসান করোনা সন্দেহে তাদের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষার জন্য বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে পাঠান।
পরে ২০ এপ্রিল সকালে উক্ত মা ও মেয়ে বানারীপাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে পালিয়ে যান। ওই দিন তারা উদয়কাঠি ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ত্রাণের চাল নিয়ে বাড়ি যান এবং এলাকায় সবার কাছে বলে বেড়ান তারা ভালো হয়ে গেছেন। ২১ এপ্রিল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত তারা উদয়কাঠি ইউনিয়ন পরিষদ সংলগ্ন বাজারে প্রকাশে ঘরে বেড়ান।
মা-মেয়ের অবাধ ঘোরা-ফেরা কারার কারণে ১৪ এপ্রিল থেকে ২১ এপ্রিল পর্যন্ত যারা তাদের সংস্পর্শে এসেছেন, তাদেরকে এখনও হোম কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করা হয়নি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ আব্দুল্লাহ সাদীদ জানান, তিনি করোনায় আক্রান্ত মা ও মেয়ের সংস্পর্শে যারা এসেছেন, তাদেরকে স্বেচ্ছায় হোম কোয়ারেন্টিনে যাওয়ার অনুরোধ জানিয়ে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন।
মঙ্গলবার মা-মেয়ের করোনা পজিটিভ হওয়ায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ আবদুল্লাহ সাদীদ ওই এলাকা লকডাউন ঘোষণা করেন। পরে ওই দিন বিকালে মধুরভিটার বাড়ি থেকে মা-মেয়েকে উদ্ধার করে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের আইসোলেশনে পাঠানো হয়।
এ সময় স্বাস্থ্যকর্মী ও পুলিশ প্রশাসনের উপস্থিতি টের পেয়ে গৃহকর্তা ও তার ছেলে অন্যত্র পালিয়ে যায়। বৃহস্পতিবার পর্যন্ত তাদের অবস্থান নিশ্চিত করা যায়নি বলে ওই ইউনিয়নের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান মো. জাকির হোসেন জানান।
এ ব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাক্তার কবির হাসান বলেন, টেস্ট রিপোর্টে মা ও মেয়ের করোনার পজিটিভ হওয়ায় মঙ্গলবার বিকালে তাদেরকে উদ্ধার করে বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের আইসোলেশনে পাঠানো হয়েছে। এর পর গত দুদিনে ওই এলাকার ১৮ জনের নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে। এ ছাড়া কিট সংকটের কারণে গ্রাম্য ডাক্তার মনিরসহ সন্দেহভাজন আরও অনেকের নমুনা সংগ্রহ করা সম্ভব হয়নি বলেও তিনি জানান।
Leave a Reply