মঙ্গলবার, ১৪ জানুয়ারী ২০২৫, ০৩:২৮ অপরাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ বরিশাল নগরীর পলাশপুরের বাসিন্দা রানু বেগমের তীব্র শ্বাসকষ্ট থাকায় মঙ্গলবার দুপুর ২টায় তাকে নিয়ে আসা হয় শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে। শ্বাসকষ্ট তীব্রতর হলে চিকিৎসকরা তাকে দ্রুত অক্সিজেন দেওয়ার সুপারিশ করেন।
সে অনুযায়ী করোনা ওয়ার্ডে গিয়ে রানু বেগমের ছেলে আল আমিন ও দেবরের ছেলে মাইনুল ছুটে চলেছেন অক্সিজেন সিলিন্ডারের জন্য। কিন্তু নিচতলা, দোতলা, তিনতলায় নার্স, ওয়ার্ড মাস্টারের কাছে ছুটেও অক্সিজেন পাননি তারা। অনেকটা নিরুপায় হয়ে অক্সিজেনের জন্য লাইনে দাঁড়ান দুইজন। এদিকে যত সময় যাচ্ছে রানু বেমের অবস্থার ততোই অবনতি হচ্ছে। বিকেল পৌনে ৫টায় যখন অক্সিজেন সিলিন্ডার পান- রানু বেগম হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্ধ হয়ে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন।
রানু বেগেমের ছেলে আল আমিন বলেন, সময়মতো একটি অক্সিজেন সিলিন্ডার পেলে হয়তো আমার মা বেঁচে থাকতেন। করোনা ওয়ার্ডের মাস্টার, নার্সদের খামখেয়ালী এবং টাকার লোভের কারণে মাকে চিরতরে হারিয়ে ফেললাম।
স্বজনরা জানান, বেশ কয়েক দিন ধরে রানু বেগম করোনা উপসর্গ নিয়ে বাসায় চিকিৎসা চালিয়ে যাচ্ছিলেন। মঙ্গলবার সকালে তার শ্বাসকষ্ট দেখা দিলে শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখানে চিকিৎসকরা অক্সিজেন দেওয়ার জন্য বললে তাকে করোনা ইউনিটে নেওয়া হয়। এরপর বিভিন্ন জনের কাছে অক্সিজেনের জন্য গেলেও কেউ এগিয়ে আসেনি। উল্টোরানু বেগমের ছেলের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেন ওয়ার্ড মাস্টার মশিউর রহমান। বলেন- অক্সিজেন সিলিন্ডার পেতে ৫০০ টাকা দিতে হবে। নাহয় নিচতলায় লাইনে দাঁড়িয়ে অক্সিজেন নিতে হবে। নিরুপায় হয় রানু বেগমের ছেলে আল আমিন ও দেবরের ছেলে মাইনুল লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছিলেন। এদিকে সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে রানু বেগম আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে পড়েন। বিকেলে যখন তারা অক্সিজেন সিলিন্ডার হাতে পান, তখন রানু বেগম মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন।
মৃতের স্বজন মাইনুল বলেন, তার চাচির এতদিন জ্বর থাকলেও মঙ্গলবার সকাল থেকে শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। বেলা ২টার দিকে তাকে হাসপাতালে নিয়ে এলে সেখান থেকে করোনা ইউনিটে ভর্তি করাতে বলা হয়। অক্সিজেন সিলিন্ডার চাইলে দায়িত্বরত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অবহেলা আর দুর্ব্যবহার করেছে। এছাড়া ওয়ার্ডা মাস্টারের ৫০০ টাকা না পাওয়ায় তার চাচির জন্য অক্সিজেন সিলিন্ডার দেননি। এ কারণেই তার চাচি মারা গেছেন বলে জানান মাইনুল।
টাকার চাওয়ার অভিযোগ অস্বীকার করে করোনা ওয়ার্ডের মাস্টার মশিউর রহমান বলেন, আমি কোনো রোগীর স্বজনকে গালিগালাজ করিনি। কোনো ধরনের টাকাও দাবি করিনি। এছাড়া অক্সিজেন দেওয়ার এখতিয়ার আমর না, দায়িত্বপ্রাপ্ত নার্সদের।
করোনা ওয়ার্ডের ইনচার্জ ও হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডা. মনিরুজ্জামান শাহীন বলেন, করোনা ইউনিট থেকে অক্সিজেন দেওয়া হবে না- এমন হওয়ার কথা নয়। কী ঘটেছিল, আমি খোঁজ নিয়ে দেখছি। অভিযোগের সত্যতা মিললে অবশ্যই জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply