বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৪১ অপরাহ্ন
কলাপাড়া প্রতিনিধি॥ পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলায় প্রকল্পের নামে এক কোটি ১১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা (পিআইও) তপন কুমার ঘোষকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের প্রশাসন শাখার উপসচিব আবু সাইদ মো. কামাল স্বাক্ষরিত একটি প্রজ্ঞাপনে গত ৬ আগস্ট এ আদশ দেয়া হয়েছে। শিগগিরই পিআইওর বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হবে বলে ওই আদেশে বলা হয়।
তবে প্রকল্পের নামে সরকারি অর্থ হাতিয়ে নেয়ার ঘটনায় পিআইওর সহচর ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। এদিকে সাময়িক বরখাস্তের ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে পিআইও তপন কুমার ঘোষ বলেন, কোনো প্রকার তদন্ত এবং দোষী সাব্যস্ত ছাড়া জোর-জবরদস্তি করে কারও বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া আইন পরিপন্থী।
অভিযোগ রয়েছে-২০১৯-২০ অর্থবছরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় গত বছরের ৩১ ডিসেম্বর ০৩.০২.০০০০.৭০১.০২.০৯৬.১৯.১৩১৪ স্মারকে কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণে কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে এক কোটি ১১ লাখ ৭৫ হাজার ৩৩৫ টাকা বরাদ্দ আসে। ওই বরাদ্দে কলাপাড়া উপজেলার খাজুরা, চালিতাবুনিয়া, গোড়া আমখোলা, ছোট বালিয়াতলী, ফতেপুর, লক্ষ্মীবাজার, নিশানবাড়িয়া, গামুরিবুনিয়া, নীলগঞ্জ ও নিজশিববাড়িয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের জন্য প্রত্যেকটি কমিউনিটি সেন্টার নির্মাণ বাবদ নয় লাখ ৮০ হাজার ১১৩ টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। এছাড়া নিশানবাড়িয়া ও গামুরিবুনিয়া আশ্রয়ণ প্রকল্পের দুটি ঘাটলা নির্মাণ ব্যয় চার লাখ ৫৮ হাজার ৮৩৫ টাকা। নীলগঞ্জ ও গোড়া আমখোলাপাড়া আশ্রয়ণের দুটি ঘাটলা নির্মাণ ব্যয় চার লাখ ৫৮ হাজার ৮৩৫ টাকা এবং খাজুরা ও ফাঁসিপাড়া দুটি ঘাটলা নির্মাণ ব্যয় বরাদ্দ দেয়া হয় চার লাখ ৫৮ হাজার ৮৩৫ টাকা।
বাস্তবে এই ১০টি কমিউনিটি সেন্টার ও ছয়টি ঘাটলার কোনো কাজ করা হয়নি।
অথচ গত ৭ এপ্রিল কাজ না করেই উল্লেখিত প্রকল্পের অনুকূলে বরাদ্দকৃত এক কোটি ১১ লাখ ৭৫ হাজার ৩৩৫ টাকা তুলে নিয়েছে মেসার্স সারিকা ট্রেডার্স নামে একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
আর এই অর্থ তুলে নেয়ার নেপথ্যে রয়েছে কলাপাড়া পিআইও তপন কুমারসহ পিআইও অফিসের কতিপয় কর্মচারীরা। বিষয়টি প্রকাশিত হওয়ার পর সারিকা ট্রেডার্সের মালিক শামীম হাতিয়ে নেয়া অর্থ কোষাগারে জমা দিলেও তার বিরুদ্ধে নেয়া হয়নি কোনো আইনগত ব্যবস্থা।
এ প্রসঙ্গে সদ্য বদলি হওয়া ইউএনও মুনিবুর রহমান জানান, ওই প্রকল্পের বিলসহ কাগজপত্রে যেসব স্বাক্ষর দেখানো হয়েছে তা জাল। আর এই প্রকল্প বাস্তবায়নের কোনো চিঠিপত্র তিনি কলাপাড়ায় থাকাকালীন রিসিভ করেননি। এ ধরনের কোনো ফাইল চালু তথা এ প্রকল্পের কোনো ব্যাংক হিসাব পর্যন্ত খোলা হয়নি। পূবালী ব্যাংকে যে অ্যাকাউন্ট খোলা সেটা সম্পর্কে তার কিছুই জানা নেই। তার সব স্বাক্ষর জাল করে হিসাবরক্ষণ অফিসে বিল করা হয়েছে। সেটাও কর্মস্থল ত্যাগ করার পনেরো দিন পরে ব্যাংক হিসাব ছাড়া সরাসরি ঠিকাদারের হিসাবে ট্রান্সফার করার বিষয়টি কীভাবে সম্ভব হল। এ প্রকল্প সম্পর্কে ইউএনও অবগত নন বলে দাবি করা হয়।
এ প্রসঙ্গে কলাপাড়ার বর্তমান উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক জানান, এরকম অনিয়মের ঘটনা শুনে তিনি মাঠপর্যায়ে পরিদর্শন করে দেখেছেন ১০টি কমিউনিটি সেন্টার এবং ছয়টি ঘাটলা নির্মাণের কোনো কাজ হয়নি।
তাৎক্ষণিক বিষয়টি তিনি ডিসিকে অবহিত করেছেন। তিনি আরও বলেন, ব্যাংক হিসাব খোলাতেও অনিয়ম রয়েছে।
Leave a Reply