বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৩৩ পূর্বাহ্ন
পটুয়াখালী প্রতিনিধি॥ কিছু দিন আগেও বঙ্গোপসাগরে জেলেদের জালে ধরা পড়েছিল ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ। আর সেই ইলিশে সরগরম থাকতো পটুয়াখালীর একমাত্র মাছের আড়ত। কিন্তু হঠাৎ সাগরে তেমন ইলিশের দেখা মিলছে না। এ নিয়ে মন খারাপ জেলেদের। তবে দাম বেড়েছে দ্বিগুণ।
বুধবার অল্প পরিমাণ ইলিশ নিয়ে পটুয়াখালীর মহিপুর আলীপুর মৎস্য বন্দরের ঘাটে এসেছে কয়েকটি ট্রলার। এসব ট্রলার থেকে টুকরিতে করে আড়তে ইলিশ নিচ্ছেন শ্রমিকরা। তবে ইলিশগুলো আনা মাত্রই বিক্রি হয়ে যায়। হঠাৎ ইলিশ কম ধরা পড়ায় বেড়ে গেছে চাহিদা। এজন্য পাইকারিরা অল্প সময়ের মধ্যেই দরদাম শেষে ইলিশ কিনতে দেখা গেছে। আর দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানোর জন্য ককশিট বাক্সে ভরে ইলিশ প্যাকেট করতে শ্রমিকরা ব্যস্ত সময় পার করছেন।
জেলেদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সাগরে জাল ফেললেই ঝাঁকে ঝাঁকে ধরা পড়বে ইলিশ এ কথা সত্যি নয়। মাঝে মধ্যে এমন ধরা পড়ে। কিন্তু অধিকাংশ সময়ই ইলিশের দেখা মিলছে না। যেমন এখন ইলিশ ধরা পড়েছে না।
কয়েকজন জেলে বলেন, আজ বৃষ্টি শুরু হয়েছে, পূবের বাতাস থাকলে আবার ইলিশ ধরা পড়তে পারে। তবে নিশ্চিত করে বলা যায় না। ইলিশ ধরা পড়লে একদিনে লাখপতি। ধরা না পড়লে ট্রলার ভাড়া, তেল এবং যাবতীয় খরচ পকেট থেকে দিতে হয়। কয়েকদিন আগে প্রচুর ইলিশ পড়েছে, তবে এরমধ্যেও অনেক জেলে তেমন ইলিশ পাননি। এটা ভাগ্যের ব্যাপার, তবু সবাই চেষ্টা চালাচ্ছি।
মহিপুর-আলীপুর মৎস্য বন্দরে ইলিশ বিক্রি করতে আসা রাঙ্গাবালী উপজেলার জেলে মো. বশির প্যাদা বলেন, আজ ১৫ মণের মতো ইলিশ ও অন্যান্য প্রজাতির ১০ মণ সামুদ্রিক মাছ নিয়ে আড়তে এসেছি। আমার বোর্ডে ১৫০ মণ ইলিশ ধরে। সাগরে প্রচুর মাছ থাকলেও এখন মিলছে না। এখন মাছ সংকট, তাই দামও বেশি।
তিনি বলেন, আজ এক থেকে দেড় কেজি ওজনের ইলিশের মণ ৪২ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। ৭০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের ইলিশের মণ ৩২ থেকে ৩৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। পাইকাররা এসেছেন কিন্তু বাজারে মাছ নেই।
মহিপুরের জেলে শহিদুল ইসলাম বলেন, সাগরে মাছ এই আছে এই নেই। কারো জালে ঝাঁকে ঝাঁকে ইলিশ ধরা পড়ে আবার পাশের জেলের জালে মাছের দেখা নেই। কেউ কেউ সাগরে এক সপ্তাহ ঘুরেও মাছ পান না। হঠাৎ একদিন দেখা যায় প্রচুর ইলিশ ধরা পড়েছে। ইলিশ পানির মধ্যে দৌড়ের প্রতিযোগিতা করে। ইলিশ গভীর পানির মাছ। হুট করে সাগরের গভীরে ঝাঁক বেঁধে চলে যায়। যখন ওপরে ওঠে জেলেদের জালে ধরা পরে।
তিনি বলেন, তিনদিন ধরে ট্রলার নিয়ে সাগরে গিয়ে খালি ফিরে এসেছি। মাছ ধরা পড়েনি। হয়তো সামনে বৃষ্টি হলে মাছ ওপরে উঠবে, তখন ধরা পড়বে।
রাঙ্গাবালী উপজেলার জেলে মো. মতি হোসেন বলেন, গভীর সাগরে কম-বেশি মাছ ধরা পড়ে। যাদের ট্রলার ছোট তারা গভীর সাগরে যেতে পারেন না, তাই তারা মাছ কম পান। সাগরে ভালো পানি দেখে বেশি প্রস্থের লাল জাল ফালাইলে তখন বেশি মাছ তাদের জালে ধরা পড়ে। ইলিশ কখন কার জালে ধরা পড়বে তা কেউ জানেন না।
মহিপুর মৎস্য আড়ৎ মালিক সমিতির সভাপতি আনসার মোল্লা বলেন, এ সময় প্রচুর ইলিশ ধরা পড়ার কথা থাকলেও জেলেদের জালে ইলিশের দেখা নেই। হঠাৎ ইলিশের অকাল দেখা দেয়ায় হতাশ হয়ে পড়েছে জেলেরা। কারণ এখন জেলেদের ঋণ শোধ করার সময়। বর্তমানে যে মাছ পড়ছে এতে জেলেরা আরো ঋণগ্রস্ত হচ্ছে।
পটুয়াখালী জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মোল্লা ইমদাদুল্লাহ বলেন, সাগরে যে ইলিশ নেই এমন না। নিম্নচাপের কারণে ইলিশ কম ধরা পড়ে। তবে অমাবস্যা ও পূর্ণিমার সময় ইলিশ বেশি ধরা পড়ে। সাগরে প্রচুর ইলিশ আছে। তবে এ বছর ছোট মাছ নেই, জেলেদের জালে বড় বড় ইলিশ ধরা পড়ছে।
Leave a Reply