সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:২৩ পূর্বাহ্ন
শামীম আহমেদ ॥ খাদ্য অধিদফতরের জেলার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও ডিলারদের দ্বন্ধের কারণে গত দুইমাস ধরে বরিশাল নগরীতে খোলা বাজারে (ওএমএস) ন্যায্যমূল্যে আটা বিক্রি বন্ধ রয়েছে। খাদ্য বিভাগের জেলার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অবনী মোহন দাসের বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ তুলে ডিলাররা আটা বিক্রি করছেন না। তারা জানিয়ে দিয়েছেন, অবনী মোহন দাসকে অন্যত্র বদলি করা না হলে ওএমএস’র কার্যক্রমে তারা অংশগ্রহণ করবেন না।
সূত্রমতে, টানা দুইমাস ধরে ওএমএস’র আটা বিক্রি বন্ধ থাকলেও বিষয়টি সমাধানে অদ্যবর্ধি কোন উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়নি। ফলে নিন্মমধ্যবিত্ত শ্রেনীর মানুষ ন্যায্যমূল্যে আটা ক্রয়ের সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। ভোক্তারা ওএমএস ডিলারদের কাছ থেকে প্রতিকেজি আটা ক্রয় করতেন ১৮ টাকায়। বাহিরে একই আটা প্রতি কেজি ২৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, নগরীতে ওএমএস’র কার্যক্রম পরিচালনায় খাদ্য অধিদফতরের তালিকাভূক্ত ডিলার রয়েছেন ২২ জন। তারা জেলার খাদ্য বিভাগের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা অবনী মোহন দাসের বিরুদ্ধে ঘুষ বাণিজ্যের অভিযোগ জানিয়ে আঞ্চলিক খাদ্য অধিদফতর, জেলা প্রশাসক, বিভাগীয় কমিশনার ও দুর্নীতি দমন কমিশনে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
অভিযোগে উল্লেখ করা হয়-ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা প্রতিটন আটা বরাদ্দে ডিলারদের কাছে ৫০০ টাকা করে ঘুষ গ্রহণ করেন। কেন্দ্রীয় খাদ্য দফতর থেকে গম বরাদ্দ আনতে মিল মালিকদের (বরিশালের মিল মালিকরা গম ভেঙ্গে আটা প্রস্তুত করেন) কাছ থেকে প্রতিটনে ৪০০ টাকা ঘুষ এনে দিতে ডিলারদের চাঁপ প্রয়োগ করা হয়। এছাড়া প্রতিমাসে অফিস খরচ বাবদ ডিলারদের কাছ থেকে ৪০০ টাকা করে নেয়া হয়।
ডিলার শফিকুল ইসলাম বলেন, ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তা অবনী মোহন দাসের উল্লেখিত দাবিগুলো পূরণ না হলে তিনি আটা বরাদ্দ করা বন্ধ করে দেবার হুমকি প্রদর্শন করে ডিলারদের সাথে দুর্ব্যবহার করেন। গত জানুয়ারি মাসেও সব ডিলাররা একত্রিতভাবে তাকে ১০ হাজার টাকা ঘুষ দিয়েছে।
শফিকুল ইসলাম আরও বলেন, খাদ্য কর্মকর্তার সব চাহিদা পূরণ করলে ডিলারা আটা বিক্রি করে লাভের মুখ দেখবেন না। এজন্য সবাই একমত হয়ে গত দুইমাস ধরে আটা বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছে।
অপর ডিলার এনামুল হক বলেন, রোটেশন প্রথায় একজন ডিলার সপ্তাহে দুইবারে দুইটন (প্রতিবার একটন) আটা বরাদ্দ পান। প্রতিটনে ডিলারের কমিশন দুই হাজার টাকা। এরমধ্যে পরিবহনে খরচ হয় এক হাজার টাকা।
ঘাটতিও রয়েছে। এরপর খাদ্য কর্মকর্তার ঘুষের চাহিদা মেটালে আর ব্যবসা থাকেনা। তাই ডিলাররা আটা বিক্রি না করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। ডিলার শেখ মাসুদ রানা বলেন, অবনী মোহন দাসকে তার দায়িত্ব থেকে না সরানো পর্যন্ত তারা ওএমএস’র কার্যক্রমে অংশ নেবেন না।
অভিযোগ অস্বীকার করে অবনী মোহন দাস বলেন, আমাদের দেশের মানুষ প্রধানমন্ত্রীর বিরুদ্ধেও দুর্নীতির অভিযোগ করেন। সেখানে আমার বিরুদ্ধে করতে বাঁধা কোথায়। ডিলারদের নানা অনিয়মে বাঁধা দেয়ায় তারা আমার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগ তুলেছে।
আঞ্চলিক খাদ্য কর্মকর্তা রেজা মোঃ মহসিন জানান, নগরীর ডিলাররা জেলার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তার বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দেবার পর তিনি ভোলা জেলা খাদ্য কর্মকর্তাকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন। তদন্ত রিপোর্ট পাওয়ার পর অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে পরবর্তী ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Leave a Reply