মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:৪৬ পূর্বাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক: সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, জঙ্গিবাদ এখন শুধু বাংলাদেশ নয়, বিশ্বব্যাপী সমস্যা। এটা আমরা বিভিন্ন জায়গায় দেখি। এটা মোকাবিলা করার জন্য নিজেদের চেষ্টা করতে হবে। বিশ্বব্যাপীও জনমত সৃষ্টি করতে হবে যেন এই ধরনের ঘটনা না ঘটে। বাংলাদেশের প্রতিটি জনগণকে আমি আহ্বান জানাবো। সকলকে এই ব্যাপারে সতর্ক থাকতে হবে।এ সময় জঙ্গিবাদ সন্ত্রাস-অগ্নিসন্ত্রাস, ধর্ষণ, যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে সকলকে সোচ্চার ও ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানান প্রধানমন্ত্রী ।সোমবার (২৯ এপ্রিল) জাতীয় সংসদে ১৪৭ বিধির ওপর আনীত একটি প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যের পরে জঙ্গিবাদ ও নারী নির্যাতনের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলার বিষয়ে সংসদ সদস্য তোফায়েল আহমদ আনীত এ সংক্রান্ত প্রস্তাবটি সর্বসম্মতক্রমে সংসদ গ্রহণ করে। তোফায়েল আহমেদের প্রস্তাবে বলা হয়, বাংলাদেশ জাতীয় সংসদ নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের মসজিদ ও শ্রীলঙ্কার গির্জা, হোটেলে সন্ত্রাসী হামলায় বাংলাদেশ জাতীয় সংসদের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সভাপতি শেখ ফজলুল করিম সেলিম এমপির নাতি জায়ান চৌধুরীসহ বিপুল সংখ্যক মানুষকে হত্যা ও আহত করা এবং বাংলাদেশে ফেনীর সোনাগাজীতে মাদ্রাসা ছাত্রী নুসরাতকে যৌন নিপীড়ন ও পুড়িয়ে মারার ঘটনায় গভীর ঘৃণা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছে এবং এ সকল সন্ত্রাসী, যৌন নিপীড়নের ঘটনার বিরুদ্ধে বাংলাদেশসহ বিশ্বের সকল দেশের সংসদ, সরকার ও নাগরিকদের প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহ্বান জানাচ্ছে।
ফেনীতে আগুনে পুড়িয়ে কলেজ ছাত্রী নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনার প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি ঘটনা শোনার সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেই। এই অধ্যক্ষের সঙ্গে আমাদের দলের কিছু নেতা জড়িত ছিল। আমি সঙ্গে সঙ্গে পুলিশকে নির্দেশ দেই—কে কোন দল করে আমি দেখতে চাই না। অপরাধী অপরাধীই। তাদেরকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এই ধরনের ঘটনা কোনওভাবে মেনে নেওয়া যায় না।
তিনি বলেন, যৌন নিপীড়ন যারা করবে তাদের ক্ষমা নেই। সংসদ সদস্যরা একটি কঠোর আইন করার কথা বলেছেন। আমরা মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে বিচারের ব্যবস্থা করছি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এ বিষয় নিয়ে কাজ করছে। প্রয়োজনে এর জন্য কঠোর আইন করতে হয় অবশ্যই আমরা তা করবো। যারা এ ধরনের যৌন নিপীড়ন করবে তাদের যেন সর্বোচ্চ শাস্তি হয় সেই ব্যবস্থা আমরা করবো।
এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বিএনপির ২০১৪ সালের আন্দোলনের প্রসঙ্গ তুলে বলেন, ২০১৪ সালে আমরা অগ্নি সন্ত্রাসের বিষয়টি দেখেছি। ওই সময় যদি একটি রাজনৈতিক দল অগ্নি সন্ত্রাস না করতো; পুড়িয়ে মানুষ হত্যা না করতো তাহলে হয়তো ওই অধ্যক্ষের মাথায় নুসরাতকে পুড়িয়ে হত্যার চিন্তা আসতো না। তার মাথায় এটা আসতো কিনা সন্দেহ।
তিনি বলেন, শিক্ষক পূজনীয়। বাবার মতো। ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষকের কাছে শিখবে। সেই শিক্ষক রক্ষক হয়ে যদি ভক্ষক হয় আর যদি তা মাদ্রাসায় হয় তাহলে এর থেকে লজ্জা আর কীসে পারে। তবে, জানি না যখন একটা ঘটনা ঘটে আর তার প্রচার হয় তখন দেখা যায় একটার পর একটা সিরিজ ঘটে যাচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, যারাই এই ধরনের ঘটনার সঙ্গে জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে অবশ্যই আমরা ব্যবস্থা নেবো। দল মত আমি দেখবো না। কে আমি তা দেখবো না। তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
শ্রীলঙ্কায় সন্ত্রাসী হামলার ঘটনার প্রসঙ্গ তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শ্রীলঙ্কার চার্চে উৎসব ছিল। সেখানে প্রার্থনারতদের ওপর বোমা হামলা হলো। এতে বাংলাদেশের জায়ান চৌধুরীসহ ৪২ জন বিদেশি মারা গেছে। মোট মারা গেছে ৫৫৩ জন। আহত ৫০০ জনের মতো। এই ঘটনার নিন্দা জানাই।
এ প্রসঙ্গে সরকারপ্রধান আরও বলেন, আমাদের দেশেও চেষ্টা করা হয়েছিল—হোলি আর্টিজানে। আমরা কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই এই ঘটনা দমন করতে সক্ষম হই। এরপরে আরও ঘটনার চেষ্টা হয়েছে। আমাদের গোয়েন্দা সংস্থা, পুলিশ-র্যাব সকলে দিনরাত পরিশ্রম করে তদন্ত করে যখনই এ ধরনের ঘটনার এতটুকু আলামত পাওয়া যাচ্ছে সঙ্গে সঙ্গে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। তারা সঠিক সময়ে তথ্যটা দিতে পারে বলেই আমরা ব্যবস্থা নিতে পারছি। এতে অনেক জানমাল রক্ষা করা সম্ভব হয়েছে।
দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিবাদ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে যা যা করণীয় তা আমরা করবো। গোয়েন্দা সংস্থা ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনী এ ব্যাপারে তৎপর। তবে, মানুষকেও এ ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। কোথাও কোনও জঙ্গি সন্ত্রাসের সামান্য আলামত দেখে সঙ্গে সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে খবর দিতে হবে। সর্বস্তরের মানুষকে সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানাবো। সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। কারও কাছে কোনও কিছু অস্বাভাবিক মনে হলে সঙ্গে সঙ্গে যেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে জানান। যাতে করে আমরা এই ঘটনা মোকাবিলা করতে পারি।
Leave a Reply