মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২৪ পূর্বাহ্ন
ঝালকাঠি প্রতিনিধি॥ সহকর্মীর সঙ্গে সম্পর্কের জের ধরে পারিবারিক কহলের এক পর্যায়ে ঝালকাঠি পুলিশ লাইন্সে কর্মরত নাদিয়া আফরিন নামের একজন নারী কনস্টেবল বিষপানে আত্মহত্যা করেছেন বলে হাসপাতাল ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে।
বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিক্যাল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে বৃহস্পতিবার (১৪ মে) রাত ৮টার দিকে তার মৃত্যু হয়। তিনি ঝালকাঠি পুলিশ লাইন্সে কর্মরত ছিলেন বলে জানা গেছে। তার স্বামী তরিকুল ইসলাম ও প্রেমিক ফরহাদ একই স্থানে কনস্টেবল পদে কর্মরত রয়েছেন। এরপর একই স্থানে কর্মরত তার স্বামী কনস্টেবল তরিকুল ইসলামকে আটক করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন তরিকুলের মা। তবে কনস্টেবল ফরহাদকে নিয়ে সমস্যার সূত্রপাত হলেও তিনি নিজপদে কর্মস্থলেই আছেন বলেও জানা গেছে।
পরিবার সুত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বিকেলে পুলিশ লাইনের নারী ব্যারাকে বসেই নাদিয়া বিষপান করে বলে জানিয়েছে তার স্বামী তরিকুল ইসলাম। কিন্তু পুলিশ জানায় নাদিয়া ভাড়াটিয়া বাসায় বসে বিষপান করে।
হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে নাদিয়া আফরিন নামে ওই নারী কনস্টেবল বিষপানে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালের জরুরি বিভাগে আসেন। পরে তাকে ভর্তি করে মেডিসিন ওয়ার্ডে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আড়াই ঘণ্টার মাথায় রাত ৮টার দিকে তার মৃত্যু ঘটে। শেবাচিমে হাসপাতালে ডিউটিরত পুলিশ কর্মকর্তা মো. নাজমুল এই তথ্য নিশ্চিত করেন।
নাদিয়ার শাশুড়ি ও কনস্টেবল তরিকুলের মা জেসমিন বেগম বলেন, তরিকুল গত দুই বছর পূর্বে প্রথম বিয়ে করেন। নাদিয়া তরিকুলের ব্যাচমেট ছিল। গত তিন মাস আগে ঝালকাঠি পুলিশ লাইনে পুলিশ কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে তাদের বিয়ে হয়। কিন্তু বিয়ের পূর্ব থেকেই নাদিয়ার আর এক ব্যাজম্যান কনস্টেবেল ফরহাদের সাথে নাদিয়ার প্রেমের সম্পর্ক ছিল। তাই এ বিয়ে মানতে পারেনি কনস্টেবল ফরহাদ। ফরহাদ তাদের পূর্ব সম্পর্কের প্রমাণাদি দিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে আসছিল। এসব নিয়ে তরিকুল ও নাদিয়ার মধ্যে কলহ চলছিল। এর জের ধরে বৃহস্পতিবার সকালে তাদের কলহ শুরু হলে পুলিশ লাইন্সের আরআই তাদের ব্যারাকে নিয়ে যায়, পরে বিকালে খবর পাই যে নাদিয়া বিষ পান করেছে এবং তরিকুল আত্যহত্যার চেষ্টা করলেও বেঁচে যায়। নাদিয়ার মৃত্যুর পর তরিকুলকে আটক করা হয়।
শুক্রবার (১৫ মে) কনস্টেবল ফরহাদের মোবাইলে নম্বের ফোন করা হলে প্রথমে নাদিয়ার সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়টি স্বীকার করেন। পরে অন্য একজনকে ফোন ধরিয়ে দেন। সেসময় দ্বিতীয় ব্যক্তিও নিজেকে ফরহাদ দাবি করে বলেন, ‘নাদিয়ার সঙ্গে আমার কোনও সম্পর্ক ছিল না।’ প্রতিবেদকের কাছে ডকুমেন্ট আছে জানালে তিনি বলেন, ‘কোনও ডকুমেন্ট নেই’।
এবিষয়ে স্বামী কনস্টেবল তরিকুল জানান, ২৫ মার্চ নাদিয়াকে বিয়ে করেন তিনি। এরপর থেকেই ফরহাদ নামে এক ব্যক্তি সঙ্গে নাদিয়ার প্রেমের সম্পর্ক ছিল বলে জানতে পারেন তিনি। বিয়ের পরে জামালপুরে এসআই পদে কর্মরত নাদিয়ার এক ফুপু নাদিয়াকে ছেড়ে দেওয়ার জন্য চাপ দেন আমাকে।
নাদিয়ার পূর্বের প্রেমিক ফরহাদের কাছে কিছু অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ডকুমেন্ট থাকায় প্রায়ই তাকে ব্ল্যাকমেইল করে আসছিল জানিয়ে তিনি আরও বলেন, পুলিশ লাইনের নারী ব্যারাকে বসেই তার স্ত্রী নাদিয়া বিষ পান করে। একই সময়ে তিনি পুরুষ ব্যারাকে ছিলেন, যা পুলিশ লাইনের সিসি ক্যামেরার ফুটেজ প্রমাণ করবে বলেও জানান তিনি। খবর শুনে সেখানে গিয়ে নাদিয়াকে উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠানো হয়। বিয়ের পরে ফরহাদ নাদিয়ার কিছু ব্যক্তিগত ছবি অন্যান্য সহকর্মীদের নিকট ছড়িয়ে দেওয়ার কারণেই তার স্ত্রী নাদিয়া আত্মহত্যা করেন, এমন অভিযোগও করেন তিনি। এ ঘটনায় পুলিশ ফরহাদকে আটক না করে উল্টো তাকে (তরিকুল) আটক করায় তিনি বিস্মিত হয়েছেন। তিনি মনে করেন তার সাথে তার বাহিনী অন্যায় আচরণ করছে। এসময় ফরহাদকে আটক করার দাবিও জানান তিনি।
ঝালকাঠির অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) এমএম মাহামুদ হাসান জানান, স্বামীর সাথে নারী কনস্টেবলের গত দু’দিন ধরে পারিবারিক কলহ চলছিল। সেই জেরেই নাদিয়া বৃহস্পতিবার বিকেলে সদর থানার অদুরে ভাড়াটিয়া বাসায় বিষপান করেন। এতে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়লে প্রতিবেশিদের কাছে খবর পেয়ে স্বামী ছুটে গিয়ে উদ্ধার করে প্রথমে জেলা হাসপাতালে নিয়ে যান। পরবর্তীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল।
Leave a Reply