সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:২৪ পূর্বাহ্ন
ঝালকাঠি প্রতিনিধি॥ ঝালকাঠিতে দ্রুত মোটাতাজা করতে গরুকে ঘাস না দিয়ে খাওয়ানো হচ্ছে বাজারের ফিড। এতে লাভের বদলে হচ্ছে লোকসান। ফিড খাওয়ানোর ফলে হিট স্ট্রোকে মারা যাচ্ছে এসব প্রাণী। পাশাপাশি আক্রান্ত হচ্ছে ক্ষুরা রোগে। আক্রান্ত এসব গরু নিয়ে আতঙ্কে দিন কাটছে খামারিদের।
জেলার রাজাপুর উপজেলার নারিকেল বাড়িয়া ইউপি সদস্য মো. কুদ্দুস হোসেন ফ্রিজিয়ান জাতের কয়েকটি দুগ্ধ গাভি পালন করছেন। গোয়ালে রেখে বাজারের ফিডে ভরসা করেই বড় করা হয়েছে এসব গাভি। এর মধ্যে দেড় মাস আগে একটি গাভি বাচ্চা দেয়। প্রায় সাত লিটার দুধ উৎপাদন হতো।
বুধবার সকালে দুধ দোহনের সময় শ্বাসকষ্ট দেখা দেয় গাভিটির এবং শরীর ঠাণ্ডা হয়ে আসে। মুঠোফোনে প্রাণিসম্পদ বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে পরামর্শ অনুযায়ী শরীর গরম করতে ছ্যাঁকা দেয়া শুরু করেন। এর কিছুক্ষণের মধ্যেই মুখে ফেনা তুলে গাভিটি মারা যায়। পরে বাড়ির পাশেই গাভিটিকে পুঁতে রাখা হয়। মরে যাওয়া গাভিটির বাজারমূল্য ছিল দেড় লক্ষাধিক টাকা।
শুধু নারিকেল বাড়িয়াই নয়, রাজাপুর মেডিকেল মোড় সংলগ্ন এলাকায় মঙ্গলবার সকালেও এভাবে আরেকটি গাভি মারা যায়। এছাড়া জেলার বিভিন্ন প্রত্যন্ত এলাকায় হিট স্ট্রোক বা অজ্ঞাত কারণে গরু মরে যাওয়ার খবর পাওয়া যায়।
ঝালকাঠি সদর উপজেলা ভেটেরেনারি সার্জন (ভারপ্রাপ্ত প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা) ডা. মো. সরোয়ার হাসান বলেন, গবাদি পশুকে ঘাস খাওয়ানোর পরামর্শ সবসময়ই দেই। ঘাসের বিকল্প খাবার হিসেবে ফিড খাওয়াতে বলি। কিন্তু অনেক খামারি বা কৃষক আছেন যারা বাজারের ফিডের ওপর ভরসা করেই গবাদিপশু পালন করেন। এতে পশুর শরীরে অতিরিক্ত চর্বি হয়ে দ্রুত মোটা হলেও রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।
শীতে এ প্রতিকূল আবহাওয়ায় বোঝা না গেলেও গরমে বেশি দেখা যায়। গরমে উচ্চ রক্তচাপ শুরু হলে মানুষের মতো গরুও স্ট্রোক করে। সময়মতো সঠিক চিকিৎসা না পেলে শ্বাসকষ্ট দেখা দিয়ে মারা যায়।
ডা. মো. সরোয়ার হাসান পরামর্শ জানিয়ে বলেন, গরুর হিট স্ট্রোক সাধারণত গরমকালে হয়ে থাকে। গরমের সময় গরুকে রোদে বেঁধে রাখলে হিট স্ট্রোক হতে পারে। তাই কোনোভাবেই গরুকে খোলা মাঠে বেঁধে রাখা যাবে না। খোলা মাঠে যদি বেঁধে রাখতেই হয় তাহলে ছায়াযুক্ত জায়গায় রাখতে হবে।
গরমে গরুকে ঘন ঘন ঠাণ্ডা ও বিশুদ্ধ পানি পান করাতে হবে। ঠাণ্ডা পানি পান করালে গরুর শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণে থাকে। এছাড়া হিট স্ট্রোকে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও অনেকগুণে কমে যায় বলে জানান ডা. মো. সরোয়ার।
হিট স্ট্রোক থেকে রক্ষা করতে গরুকে নিয়মিত গোসল করাতে হবে। এতে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গেলেও নিয়ন্ত্রণে চলে আসে। এছাড়া গোয়ালঘরে প্রয়োজনীয় বাতাস চলাচলের ব্যবস্থা রাখতে হবে।
Leave a Reply