শুক্রবার, ২৯ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৫১ পূর্বাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ প্রথমে ছিলেন ফাঁসির আসামি। পরে সাজা সংশোধন করে যাবজ্জীবন। কিন্তু তাঁর মতলব ছিল জেল পালানোর। পাঁচ বছর আগে একবার চেষ্টাও করেছিলেন। ব্যর্থ হন। তবে এবার ‘সফল’ হয়েছেন। পালিয়েছেন গাজীপুরের কাশিমপুর-২ কারাগার থেকে।
আলোচিত এই কয়েদির নাম আবু বকর সিদ্দিক। বয়স ৩৫ বছর। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অন্য কয়েদিদের লকআপের পর সেখানে তাঁকে আর খুঁজে পাওয়া যায়নি। কারা কর্মকর্তাদের ধারণা, তিনি কৌশলে পালিয়েছেন।
এ ঘটনায় দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে গতকাল শুক্রবার কারা অধিদপ্তর ছয়জন কারারক্ষীকে সাময়িক বরখাস্ত করেছে। তাঁরা হলেন—আহাম্মদ আলী, হক মিয়া, মনিরুল ইসলাম, আলী নূর, সজীব হোসাইন ও আনোয়ার হোসেন। বিভাগীয় মামলা হয়েছে সর্বপ্রধান কারারক্ষী আবুল কালাম আজাদ, কারারক্ষী আবদুর রউফ খান, ইউসুফ খান, রাকিবুল হাসান, শওকত আলীসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে।
কাশিমপুর-২ কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার জাহানারা বেগম জানান, আবু বকর সিদ্দিকের বাড়ি সাতক্ষীরার শ্যামনগর উপজেলার আবাদ চণ্ডিপুর গ্রামে। বাবার নাম তেছের আলী গাইন। ২০১১ সালের ১৫ জুন রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে ফাঁসির আসামি হিসেবে তিনি কাশিমপুরে আসেন। ২০১২ সালের ২৭ জুলাই তাঁর সাজা সংশোধন করে যাবজ্জীবন দেওয়া হয়। গত বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় বন্দিদের গণনাকালে (লকআপ) একজন আসামি কম পাওয়া যায়। তখন দেখা যায়, আসামি আবু বকর সিদ্দিক নেই। পরে কারাগারের ভেতরে অনেক খোঁজাখুঁজি করেও আর তাঁকে পাওয়া যায়নি।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিদ্যুৎ ও পানির লাইনে কাজ করতে পারার কারণে আবু বকর সিদ্দিককে দিয়ে কারাগারে বিদ্যুতের কাজ করানো হতো। বৃহস্পতিবারও তিনি বিদ্যুতের কাজের জন্য ল্যাডার (মই) নিয়ে কাজ করেন। ধারণা করা হচ্ছে, ওই মই দিয়েই তিনি কারাগারের ১৮ ফুট উঁচু দেয়াল বেয়ে কৌশলে পালিয়ে গেছেন।
এর আগে ২০১৫ সালের ১৩ মে সন্ধ্যায়ও জেল থেকে পালানোর চেষ্টা করেছিলেন আবু বকর সিদ্দিক। কারাগারের একজন কর্মকর্তা জানান, সেবার পালানোর জন্য আত্মগোপন করে সেল এলাকায় সেপটিক ট্যাংকের ভেতরে লুকিয়ে ছিলেন। অনেক খোঁজাখুঁজি শেষে পরদিন তাঁকে ট্যাংকের ভেতর থেকে উদ্ধার করা হয়েছিল।
আইজি প্রিজনস ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এ কে এম মোস্তফা কামাল পাশা বলেন, ‘অতিরিক্ত আইজি প্রিজনসকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। তারা শনিবার (আজ) কাশিমপুর কারাগারে যাবে। সেখানে ভিডিও ফুটেজ দেখা হবে। যারা এর জন্য দায়ী তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এরই মধ্যে ছয় কারারক্ষীকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে এবং অন্য ছয়জনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ‘কয়েদি আবু বকর সিদ্দিককে আমরা খুঁজছি। সাতক্ষীরায় তাঁর বাড়িতে লোক পাঠানো হয়েছে। সেখানকার ডিসি-এসপিকে বিষয়টি জানানো হয়েছে।
কয়েদি পালানোর ঘটনায় গতকাল বিকেলে কারাগারের জেলার মো. বাহারুল ইসলাম বাদী হয়ে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কোনাবাড়ী থানায় একটি মামলা করেছেন।
গাজীপুরের ডিসি এস এম তরিকুল ইসলাম জানান, ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট আবুল কালামকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
Leave a Reply