রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৬ অপরাহ্ন
তানজিল জামান জয়, কলাপাড়া (পটুয়াখালী):পটুয়াখালীর কলাপাড়া উপজেলা নীলগঞ্জ ইউনিয়নের যুগীর খালের উপর নির্মিত আয়রণ সেতুটি ভেঙ্গে খালে পড়ে গেছে। এতে দুর্ভোগে পড়েছে নয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের পাঁচ শতাধিক শিক্ষার্থীসহ হাজারও গ্রামবাসী। সেতু ভেঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় অধিকাংশ শিক্ষার্থীদের স্কুলে-কলেজ ও মাদরাসায় আসা-যাওয়া বন্ধ হয়ে গেছে। দুর্ভোগে পড়েছে জরুরি চিকিৎসা নিতে ও ক্ষেতের উৎপাদিত ফসল বিক্রিতে।
সরেজমিনে গিয়ে স্থানীয়দের সুত্রে জানা যায়, গত ৯ অক্টোবর দুপুরে হঠাৎ করে সেতুটির আয়রণ পিলার ভেঙ্গে একদিক কাত হয়ে খালে পড়ে যায়। ঘটনার সময় সেতুতে মানুষ না থাকায় কোন হতাহতের ঘটনা না ঘটলেও এখন সেতুটি মৃত্যু কূপে পরিণত হয়েছে। ভাঙ্গা সেতুর ওপর দিয়ে কাত হয়ে একদিকের হাতল ধরে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থীরা ঝুঁকি নিয়ে পার হওয়ায় দুর্ঘটনার আশঙ্কার উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে অভিভাবকরা।
স্থানীয়রা জানান, কুমিরমারা ও মজিদপুর গ্রামের মাঝ দিয়ে বহমান যুগীর খালের ওপর এ আয়রণ সেতুটির দুই পাশে কুমিরমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কুমিরমারা মহিলা হাফেজী মাদরাসা, পাখিমারা কেরাতুল কোরআন মাদরাসা, নাওভাঙ্গা মাদরাসা, নাওভাঙ্গা টেকনিক্যাল কলেজ, পাখিমারা প্রফুল ভৌমিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়, পাখিমরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আমিরাবাদ দ্বীনিয়া মাদরাসা।
এছাড়া এ সেতু পার হয়ে খেপুপাড়া সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়, সরকারি মোজাহার উদ্দিন বিশ্বাস অনার্স কলেজ, কলাপাড়া মহিলা ডিগ্রি কলেজ ও ইসমাইল তালুকদার টেকনিক্যাল কলেজে শিক্ষার্থীরা আসা যাওয়া করে। এছাড়া পাখিমারা বাজারে যেতে হয় এ সেতু পার হয়ে।
স্থানীয় ইউপি সদস্য মো. ইসাহাক হাওলাদার জানান, জরুরি প্রয়োজনে স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রীরা খেয়া নৌকা ও মাছ ধরা ট্রলারে করে খাল পার হয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাচ্ছে। তবে বেশি দুর্ভোগে বয়স্ক মানুষ ও নারীরা। দশম শ্রেণীর স্কুল ছাত্রী পারভিন জানায়, তারা প্রতিদিন ২৫-৩০ জন ছাত্র-ছাত্রী এ সেতু পার হয়ে বিদ্যালয়ে আসা-যাওয়া করে। কিন্তু সেতু ভেঙ্গে যাওয়ায় খালে পড়ে যাওয়ার ভয়ে অনেক ছাত্রীই স্কুলে আসতে চাইছে না। অষ্টম শ্রেণীর ছাত্রী কুলসুম জানায়, এখন নৌকায় পার হই।
স্কুলে আইতে-যাইতে পাঁচ টাকা করে দশ টাকা নৌকা ভাড়া দিতে হয়। দশম শ্রেণির ছাত্র কাওছার, রবিউল জানায়, সেতুডা ভাইঙ্গা একদিকে কাইত হইয়া ঝুইল্লা রইছে। অনেক আগেই (প্রায় পাঁচ বছর আগে) এইডা ভাঙ্গছে। লোহার এঙ্গেল, হাতল খুইল্লা পইর্যা গেছে। বছর দুই আগে জোড়াতালি দিছিলো। আর এ্যাহন তো পুরাই ভাইঙ্গা পড়ছে। সেতুতে ওডলে দোলনার মতো দোলে।
কিন্তু যাওয়ার যায়গা না থাহায় ছেলেরা ,বয়স্করা কাত হওয়া সেতুর লোহার হাতল ধরে ঝুঁলে ঝুঁলে ঝুঁকি নিয়ে পার হচ্ছে।পাখিমারা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোতালেব খান বলেন বলেন, এখন সেতুর যে অবস্থা জরুরি ভিত্তিতে সেতুটি মেরামতের উদ্যোগ না নিলে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। কেননা প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে সেতুর ওপর দিয়ে স্কুল-কলেজের শিক্ষার্থীরা পার হচ্ছে।
পাখিমারা প্রফুল্ল ভৌমিক মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বাদল চন্দ্র বিশ্বাস, সেতুটি ভেঙ্গে পড়ায় এখন শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি কিছুটা কমেছে। স্কুলে ছেলেদের উপস্থিতি কিছুটা হলেও মেয়েদের উপস্থিতি অনেক কমে গেছে। জরুরি ভিত্তিতে তারা সেতুটি সংস্কারের দাবি জানান।
কলাপাড়া উপজেলা স্থানীয় সরকার প্রকৌশলী কর্মকর্তা আবদুল মান্নান জানান, জরুরি ভিত্তিতে ভাঙ্গা সেতু মেরামত করা হবে।
Leave a Reply