মঙ্গলবার, ২০ মে ২০২৫, ১১:১৬ অপরাহ্ন
এস এম আজাদ॥ করোনা মহামারিতে জীবন বাজি রেখে মানুষের পাশে দাঁড়িয়ে সুনাম কুড়িয়েছেন পুলিশ সদস্যরা। এই বাহিনীকে আরো জনবান্ধব করতে নানামুখী পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ।
এরই মধ্যে দেশের প্রতিটি গ্রাম বা পাড়া-মহল্লায় একজন উপপরিদর্শককে (এসআই) এলাকাবাসীর খোঁজখবর রাখার দায়িত্ব দিয়ে বিট পুলিশিং চালু হয়েছে। মামলা বা সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে যাওয়া ব্যক্তিদের খোঁজখবর নিতে নিয়মিত থানায় বসছেন সহকারী পুলিশ সুপারসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা।
মহাসড়কে চাঁদাবাজি বন্ধে কঠোর পদক্ষেপ গ্রহণের কারণে পণ্য-যান পরিবহন নির্বিঘ্ন হয়েছে। প্রথমবারের মতো দেশের সব ওসির সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সে কথা বলে আরো জনবান্ধব হতে নির্দেশ দিয়েছেন আইজিপি।
পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন, করোনাকালে বিপদ জেনেও পেশাদারি দেখিয়েছেন পুলিশ সদস্যরা। এরই মধ্যে কভিড-১৯-এ ৬৭ জন পুলিশ সদস্য মারা গেছেন, আক্রান্ত হয়েছেন ১৫ হাজার ৬২৭ জন।
মানবিকতার অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী এই বাহিনীকে আরো আধুনিক করে গড়ে তুলতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে কনস্টেবলদের দেওয়া হচ্ছে উন্নত প্রশিক্ষণ, যাতে তাঁরা বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণের মাধ্যমে মানুষের আস্থা অর্জন করতে পারেন। চলতি বছরের মধ্যেই সব পুলিশ সদস্য পাচ্ছেন এই বিশেষ আচরণগত সেবার প্রশিক্ষণ।
পুলিশের আইজিপি ড. বেনজীর আহমেদ সম্প্রতি বলেন, ‘আমরা বেশি করে জনবান্ধব পুলিশিং করতে চাই। প্রাথমিকভাবে সেবাদানের কেন্দ্র হচ্ছে থানা। থানাগুলোকে জনবান্ধব করার পাশাপাশি থানা থেকে বেরিয়ে জনগণের দোরগোড়ায় সেবা নিয়ে যেতে চাই।
এ জন্য বিট পুলিশিং কার্যকর করছি। একজন মানুষ বিপদে পড়লে বা বিপন্ন হলে থানায় আসেন, কিন্তু এই মুহূর্তে একজন কনস্টেবল রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। তাঁর সঙ্গে হাজার হাজার মানুষের দেখা হচ্ছে। এর মানে থানার বাইরে দুই লাখ পুলিশের সঙ্গে ১৮ কোটি মানুষের কোনো না কোনোভাবে দেখা হচ্ছে। আমরা এই যোগাযোগটাকে গণমুখী করতে চাই।
করোনা প্রাদুর্ভাবের শুরুতে অনেক আক্রান্ত ব্যক্তির পাশে দাঁড়ায়নি তার স্বজনরা। এমন পরিস্থিতিতে এগিয়ে এসেছেন পুলিশ সদস্যরা।
আক্রান্তকে হাসপাতালে নেওয়া কিংবা এলাকা ঘুরে ঘুরে কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করেছেন তাঁরা। তা ছাড়া আক্রান্ত বা আইসোলেশনে থাকা ব্যক্তির নিরাপত্তাদানের পাশাপাশি বিভিন্ন সহায়তাও পৌঁছে দিয়েছেন।
অন্যদিকে করোনায় আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা গেলে যখন তার ঘনিষ্ঠ স্বজনরাও দাফন বা সমাহিত করতে কাছে যায়নি, তখন পুলিশের সদস্যরা কাঁধে তুলে নিয়েছেন লাশ। জানাজায় অংশ নিয়েছেন, করেছেন দাফন ও সৎকার। এমন মানবিক সেবা দিতে গিয়ে চরম মূল্য দিতে হলেও পিছপা হননি পুলিশ সদস্যরা।
পুলিশ প্রবিধানের (পিআরবি) নির্দেশনা অনুযায়ী ২০১০ সালে ঢাকা মহানগর পুলিশে (ডিএমপি) প্রথমবারের মতো বিট পুলিশিং চালু হয়।
এরপর সিলেট, ময়মনসিংহ, বরিশালসহ কিছু ইউনিটে কার্যক্রমে সুফল মিললেও দেশব্যাপী পরিচালনার নির্দেশনা ছিল না। গত ১৬ জুন এক ভিডিও বার্তায় আইজিপি ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের যে পাঁচ দফা নির্দেশনা দেন তার মধ্যে বিট পুলিশিং অন্যতম।
পুলিশ সদর দপ্তরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-প্রিভেনশন) সহেলী ফেরদৌস বলেন, ‘একটি আদর্শ কর্মপরিকল্পনা বা কাঠামো তৈরি হয়ে গেছে।
সে অনুযায়ী আগস্ট মাস থেকেই দেশের ৬৬০ থানায় বিট ভাগ করে কর্মকর্তাদের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। একরকম চালুই বলা যায়।
একজন এসআই মূলত বিটের দায়িত্বে থাকছেন। বিট অফিসার তাঁর এলাকার ভাড়াটিয়াদের তথ্য, প্রতিবেশীর তথ্য, অপরাধীদের গতিবিধি, অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করাসহ অনেক কাজে ভূমিকা রাখবেন।
ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার মুহা. শফিকুল ইসলাম বলেন, মানুষকে উন্নত সেবাদানের অংশ হিসেবে ঢাকায় কেউ মামলা বা জিডি করলে সদর দপ্তর থেকে ফোন করে খোঁজ নেওয়া হয়। জানতে চাওয়া হয়, টাকা দিতে হয়েছে কি না? সেবায় সন্তুষ্ট কি না? সপ্তাহের দুই-তিন দিন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা থানায় অফিস করে মানুষের সঙ্গে কথা বলেন এবং সেবাদানের বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করেন।
Leave a Reply