সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১২:৩২ পূর্বাহ্ন
কাউখালী প্রতিনিধি॥ কাউখালীর বেকুটিয়া বরিশাল-খুলনা আঞ্চলিক মহাসড়কের বেকুটিয়া-কুমিরমারা পয়েন্টে কচা নদীর উপর অষ্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর নির্মাণ কাজ দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে।নির্মাণ কাজে করোনার কোন প্রভাব পড়েনি। ইতিমধ্যে সেতুর তিন ভাগের দুই ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখন চলছে সেতুর সুপার স্ট্রাকচার এবং এপ্রোচ সড়কের নির্মাণ কাজ।
আগামী বছরের জুনে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলবাসীর স্বপ্ন বেকুটিয়া সেতু উদ্বোধনের আশা করছে সড়ক ও জনপথ বিভাগ। সেতুটি চালু হলে বরিশাল-পিরোজপুর-বাগেরহাট-খুলনা ও মোংলা সমুদ্র বন্দর যাতায়াতে সময় অনেক কমবে। এতে খুশি বেকুটিয়া ফেরিঘাটে দুর্ভোগের শিকার পরিবহন শ্রমিক ও যাত্রীসহ স্থানীয় মানুষ।
সড়ক ও সওজ কাউখালীর উপসহকারী প্রকৌশলী মোঃ মিজানুর রহমান জানান, সম্প্রতি কচা নদীর উপর বেকুটিয়া সেতু নির্মাণের সার্বিক অগ্রগতি সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের (সওজ) প্রধান প্রকৌশলী মো. আব্দুস সবুর।
এ সময় বরিশাল জোনের অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী আবু হেনা মো. তারেক ইকবাল এবং প্রকল্প ব্যবস্থাপক মাসুম মাহমুদ সুমনসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।
সেতু বিভাগের তথ্য সূত্রে জানা যায় বেকুটিয়া-কুমিরমারা পয়েন্টে কচা নদীর উপর অস্টম বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু হয় ২০১৮ সালের জুলাই মাসে। জি টু জি পদ্ধতিতে সেতু নির্মাণের দায়িত্ব পায় চীনের ‘চায়না রেলওয়ে সেভেনটিন ব্যুরো গ্রুপ কোম্পানী লিমিটেড’। সেতু নির্মাণে মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৮৯৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে ৬৫৪ কোটি টাকা গ্রান্ড অনুদান দিয়েছে চীন সরকার। বাকি ২৪৪ টাকার যোগান দিচ্ছে বাংলাদেশ সরকার। ৪২৯ মিটার ভায়াডাক্টসহ সেতুর দৈর্ঘ্য ১ হাজার ৪২৭ মিটার এবং প্রস্থ ১০ দশমিক ২৫ মিটার (ডবল লেন)। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ৯৯৮ মিটার। ১০টি পিলার এবং ৯টি স্প্যানের উপর দাঁড়িয়ে আছে ব· গার্ডার টাইপ এই সেতু। ৯টি স্প্যানের ৭টি ১২২ মিটার এবং ৭২ মিটার স্প্যান রয়েছে ২টি। গত ৩ বছরে সেতুর ৭২ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে।
২০২২ সালের জুনে প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হওয়ার আগেই এই সেতু যানবাহন চলাচলের জন্য খুলে দেয়ার প্রত্যাশা সড়ক ও জনপথের সেতু বিভাগের কর্মকর্তাদের।
বাংলাদেশ-চীন মৈত্রী সেতু প্রকল্পের ব্যবস্থাপক ও পিরোজপুর সড়ক ও জনপথের নির্বাহী প্রকৌশলী (অতিরিক্ত দায়িত্ব) মাসুম মাহমুদ সুমন বলেন, বরিশাল-খুলনা সরাসরি সড়ক যোগাযোগে সব শেষ প্রতিবন্ধকতা বেকুটিয়ার কচা নদী। সরকারের উন্নয়ন ধারাবাহিকতায় কচা নদীর উপর সেতু নির্মাণ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এই সেতু চালু হলে খুলনা, মোংলা ও বাগেরহাট অঞ্চলের সাথে পায়রা সমুদ্র বন্দর এবং রাজধানী ঢাকার সড়ক যোগাযোগ আরও সহজতর হবে। এতে এই অঞ্চলের ব্যবসা-বাণিজ্য এবং পর্যটনে গতি আসবে বলে আশা করেন তিনি।
অষ্টম চীন-বাংলাদেশ মৈত্রী সেতু নির্মাণে দেশি-বিদেশি প্রকৌশলী ও শ্রমিকরা দিনরাত সেতু নির্মাণ কাজ করছে। আগামী বছরের জুনে সেতু উদ্বোধন হলে বরিশাল এবং খুলনা বিভাগের মধ্যে সড়ক পথে যাতায়াত সময় কমপক্ষে ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা কমে যাবে এবং সহজ যোগাযোগ প্রতিষ্ঠিত হবে।
বেকুটিয়া ফেরির যাত্রী মোঃ সাইদুল আলম জানান, বিএনপি সরকারের সময় বারবার এই সেতু নির্মাণের কথা শুনলেও বাস্তবে দক্ষিণ -পশ্চিমাঞ্চল বাসীকে বঞ্চিত করা হয়েছিল। বর্তমান সরকার প্রধানের সু-নজরের কারণে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে এখন উন্নয়ন শুরু হয়েছে।
বেকুটিয়ার কচাঁ নদীর উপর সেতু নির্মাণে খুশি এলাকাবাসীসহ পরিবাহন মালিক- শ্রমিক ও যাত্রীরা। সেতুটি চালু হলে বরিশাল-খুলনা মহাসড়কে ফেরি বিহীন সরাসরি সড়ক যোগাযোগ চালু হবে বলে জানান তারা।
এছাড়া ফেরিঘাটে দীর্ঘ ভোগান্তিরও অবসান ঘটতে যাওয়ায় আনন্দের জোয়ার বইছে কচা নদীর দুই তীরের সাধারণ মানুষ, যাত্রী, গাড়িচালকসহ সকল শ্রেণিপেশার মানুষের মধ্যে। তারা দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতু নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে আশা প্রকাশ করছেন।
Leave a Reply