মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২৪ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক॥ বরিশাল নগরে আকস্মিকভাবে মাথাচারা দিয়ে উঠেছে উঠতি কিশোর গ্যাংয়ের সন্ত্রাসীরা। কিশোর গ্যাং এর সন্ত্রাসী গ্রুপ বেপরোয়াভাবে সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে পাড়া বা মহল্লা এসব কিশোর গ্যাংয়ের কাছে অবৈধ অস্ত্র ও দেশি রামদা, চাপাতি রয়েছে বলে অনুসন্ধানে জানা গেছে।এসব অপরাধীদের গ্রেফতার করে অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চালালে কিশোর গ্যাং অনেকাংশে কমে আসবে বলে জানান জনপ্রতিনিধিরা। একইসাথে গোটা বরিশালে এখন কিশোর গ্যাং আতঙ্ক বিরাজ করছে। ফলে হামলার ঘটনা ক্রমেই বৃদ্ধি পেয়েছে। তাদের একের পর এক অপরাধ কর্মকান্ডে চরম বেকায়দায় পরেছেন সাধারণ জনগণ।। এখনই ওইসব কিশোর সন্ত্রাসীদের নিয়ন্ত্রণের দাবী করছেন সচেতন নাগরিকরা।
সূত্র মতে, বৃহস্পতিবার ( ৩ অক্টোবর) সন্ধ্যায় নগরীর চাঁদমারী চার রাস্তার মোড়ে ছাত্রলীগ কর্মী তরিকুল ইসলাম (১৭)কে কুপিয়ে জখম করে কিশোর গ্যাং রিফাত বাহিনী । এ ঘটনা পরই কিশোর গ্যাং রিফাত বাহিনী নগর জুড়ে আলোচনায় এসেছে । সূত্রে জানা যায়,ঐ গ্রুপে ১০-২০ জন সদস্য রয়েছে । এরা হলো, রাজু, হাসিব, সুজন, তাজিম, সিফাত, হাদি , তৌফিকসহ আরো কজন । এদের দলনেতা রিফাত। অনুসন্ধানে রিফাতের বিষয়ে পাওয়া গেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য, নগরের মুন্সুর কোয়ার্টারের বাসিন্ধা রাজ্জাক মিয়ার ছেলে রিফাত । স্কুল লাইফ শেষ করেই কিশোর অপরাধের জড়িয়ে পরে।
নগরের বিভিন্ন এলাকার উঠতি বয়সি যুবকদের বন্ধু বানিয়ে বিশজনের একটি গ্রুপ তৈরি করে ফেলে রিফাত । তাদের নিয়ে নগরীর গুরুপ্তপূণ্য স্কুলের সামনে আড্ডা, মেয়ে শিক্ষার্থীদের সাথে অশ্লীন আচরন , মোটর বাইক মহুরা ছিলো রিফাতের প্রধান কাজ। তারি প্রতিফলন হিসেবে বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষার্থীদের মাঝে নিজের নামটি আতঙ্ক হিসেবে জাহির করে ।
এই নামটি পূজি করে নিজ বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে রিফাত জড়িয়ে পরে ইয়াবা ব্যবসায় । অল্পদিনের ভিতরে দ্বিগুন টাকার মালিক হওয়ার স্বপ্ন দেখতে শুরু করে দেয় সে । ইয়াবা সেবনের পাশাপাশি বিক্রয় করার জন্য নগর জুড়ে ছড়িয়ে দেয় বাহিনীর প্রতিটি সদস্যকে । কিন্তু আইন- শৃঙ্খলা বাহিনীর নজর থেকে এড়াতে পারেনা রিফাত। বিভিন্ন সময় প্রশাসনের একাধিক সংস্থার অভিযানে অবৈধ অস্ত্র, মাদকসহ গ্রেফতার হয় রিফাত । কিন্তু আইনের ফাঁক – ফোকর দিয়ে জামিনে বের হয়ে যায় । তবে থেমে থাকেনা রিফাতের অপরাধ কর্মকান্ড । আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে সে। নগরের বিভিন্ন স্থানে বাড়িয়ে দেয় ইয়াবার বিকিকিনি । স্কুলগামী শিক্ষার্থীদেরও আষক্ত করে ইয়াবা মরননেশায় । এতে জমজমাট হয়ে যায় ইয়াবা ব্যবসা ।
এমতো অবস্থায় নগর গোয়েন্দা পুলিশের এসআই হেলাল অভিযান চালিয়ে ১৩০ পিচ ইয়াবাসহ রিফাতকে আটক করেন । যার মামলা নং ৪৮। পরবর্তিতে জেল থেকে জামিনে বের হয় । এরপরই রিফাত কিশোর গ্যাং ধারা শুরু করে দেয় সন্ত্রাসী কর্মকান্ড । তারি ধারা বাহিকতায় সিনিয়র-জুনিয়র কেন্দ্র করে গত বৃস্থপতিবার ছাত্রলীগ কর্মি তরিকুল ইসলামকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে গুরুতর জখম করে । এর আগে নগরীর প্রাণকেন্দ্র সদর রোড কেন্দ্রিক ৪৫ সদস্যের ‘আব্বা গ্রুপ’। বরিশাল সিটি কলেজে ২০১৫ সালে কলেজের অফিস কক্ষের আলমারি ভেঙে টাকা লুট করেছিল তারা। ২৯ জুলাই ওই মামলায় সাক্ষ্য দিয়ে ফেরার পরই সৌরভ বালারা ক্যাম্পাসে ঢুকে হট্টগোল করে। খবর পেয়ে পুলিশ সৌরভ বালা ও ইয়ামিন হোসেন জুয়েলসহ তিন যুবককে আটক করে। কলেজ কর্তৃপক্ষ হট্টগোলের ওই ঘটনায় মামলা না করায় পুলিশ তাদের মেট্রো অধ্যাদেশে আদালতে পাঠায়।
বুধবার (৩১ জুলাই) আদালত থেকে ছাড়া পেয়েই দলবল নিয়ে কলেজ ক্যাম্পাসে ঢুকে সৌরভ, রুবেল ও ইয়ামিনরা অধ্যক্ষকে কুপিয়ে জখম করে। এঘটনায় নগর জুড়ে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয় ।জাতীয় দৈনিক ও স্থানীয় পত্রিকাগুলোতে ঢালাও ভাবে সংবাদ প্রকাশ পায় । পরর্বিতে অধ্যক্ষকে কুপিয়ে জখম করা মামলায় আদালতের মাধ্যমে কারাগারে যায় আব্বা গ্রুপের সদস্যরা । এদিকে শুক্রবার (৪ অক্টোবর) বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের বিশেষ অভিযানে ২০ কিশোর সন্ত্রাসী আটক হয়েছে। শুক্রবার বিকেল থেকে রাত পর্যন্ত শহরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে তাদের আটক করা হয়। আটক এই কিশোরেরা নানামুখী সন্ত্রাসী কর্মকান্ডসহ বিভিন্ন অপরাধে জড়িত।
বিশেষ করে দিনের বেলা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর সামনে অবস্থান নিয়ে মেয়ের উত্যক্ত করার অভিযোগও রয়েছে। এইসব সন্ত্রাসী কর্মকান্ড সম্পর্কে নিশ্চিত হয়ে মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশানার মো. শাহাবুদ্দিন খান শহরের কিশোর সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে নির্দেশ দিলে মাঠে নামে পুলিশ। পরে শহরের বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে ২০ কিশোরকে আটক করে।
বিষয়টি নিশ্চিত করে বরিশাল কোতয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি/তদন্ত) মো. আসাদুজ্জামান।
এ ব্যাপারে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনারের মুখপাত্র নরশ চন্দ্র কর্মকার বলেন , কিশোর সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে পুলিশের অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এ ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদের কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।
Leave a Reply