রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৮ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিনিধি॥ রাজধানীতে ক্ষমতাসীন দলের মধ্যে শুদ্ধি অভিযান পরিচালনার প্রভাব পড়েছে বরিশালে। বরিশাল আওয়ামী লীগের ছত্রছায়ায় যারা চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, জুয়া ও মাদকের কারবারে জড়িত তাদের চিহ্নিত করার উদ্যোগ নিয়েছে দলটির তৃণমূল নেতারা। এদের হাইব্রিড নামে আখ্যায়িত করে এদের বিরুদ্ধে শুদ্ধি অভিযান চালানোর আহ্বানও জানিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা।
গত কয়েকদিন ধরে নগরীর জুয়ার আসর আর সরকারি দপ্তর থেকে অনেকটা গা ঢাকা দিয়েছে ছাত্রলীগ, যুবলীগের নামধারীরা। পুলিশ ইতোমধ্যে নগরীর দুটি স্পটে অভিযান চালিয়ে আটক করেছে ১৪ জনকে। অভিযান আতঙ্কে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে দলটিতে অনুপ্রবেশকারীদের মধ্যে।
বরিশাল আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছে, দলে জুয়াড়িদের চিহ্নিত করতে গোয়ান্দা সংস্থার সহায়তায় কাজ চলছে। বরিশাল নগরীর বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে প্রতিদিন এক শ্রেণির যুবককে অবস্থান করতে দেখা যেত। অনেকটা সাহেবি কায়দায় অবস্থান করা এসব যুবক ছাত্রলীগ, যুবলীগের নামধারী। নিজেদের আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী পরিচয় দিয়ে নগরীতে সন্ত্রাস, চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, জুয়াবাজি করে আসছে তারা। যদিও দলে তাদের কোনো পদ নেই।
সরেজমিনে ঘুরে বৃহস্পতিবার নগরীর শিক্ষা ও প্রকৌশল অধিদপ্তর, সড়ক ও জনপথ বিভাগ, এলজিইডি, স্বাস্থ্যপ্রকৌশল অধিদপ্তর ঘুরে ওইসব ছাত্রলীগ-যুবলীগ নামধারীদের কোথাও দেখা যায়নি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ঠিকাদার জানান, দীর্ঘদিন ধরে সব সরকারি দপ্তর নিয়ন্ত্রণ করছে এক শ্রেণির ছাত্রলীগ-যুবলীগ নামধারীরা। এদের কারণে ঠিকাদারি কাজ সুষ্ঠুভাবে করা যাচ্ছে না। যদিও কদিন ধরে অনেকেই গা ঢাকা দিয়েছে। এদের কারণেই মূলত উন্নয়ন কাজ টেকসই হচ্ছে না।
জানা গেছে, নগরীর নাজিরার পুল, কাউনিয়া, আমানতগঞ্জ, বাংলাবাজার, কালুশাহ সড়ক, জেলখানার মোড়, আলেকান্দা, চাঁদমারী, নতুনবাজার, কাশিপুরে বেশ কয়েকটি জুয়ার আসর বসে ছাত্রলীগ, যুবলীগের ছত্রছায়ায়। রাজধানীতে অভিযানের কারণে গত কয়েদিন ধরে ওইসব জুয়ার আসর ফাঁকা হয়ে গেছে।
বিএম কলেজ ছাত্রলীগ নেতা ফয়সাল আহমেদ মুন্না বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বরিশালে ছাত্রলীগের কমিটি না হওয়ায় সবাই নেতা বনে গেছে। সবাই এখন নিজেকে ছাত্রলীগ পরিচয় দিয়ে নানা অপকর্ম করছে। এসব বন্ধ করতে হলে নতুন নেতৃত্ব দরকার।
অপর এক ছাত্রলীগ নেতা বলেন,আট বছর ধরে এখানে কমিটি নেই। তাছাড়া বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো কমিটি না থাকলেও ছাত্রলীগ নামধারীরা বাস কাউন্টারে হামলা চালায়। কমিটি না থাকায় টেন্ডারবাজি, মাদক ব্যবসা, জুয়ার আসর গড়ে তোলে আওয়ামী লীগে অনুপ্রবেশকারীরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহানগর ছাত্রলীগের সভাপতি জসিম উদ্দিন বলেন, তার কমিটির মেয়াদ আট বছর অতিবাহিত হলেও এ অঞ্চলের নেতারা কমিটি দিতে চায় না। বেশ কয়েকবার পূর্ণাঙ্গ কমিটি দিলেও তা অনুমোদন হয়নি। আওয়ামী লীগের কর্মসূচিতে ছাত্রলীগের সভাপতি-সম্পাদককে ডাকা হয় না। বরং যাদের পদ নেই তারা এখন ছাত্রলীগ নেতা।
তিনি বলেন, বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়সহ যেসব ক্যাম্পাসে ছাত্রলীগের নামে বিশৃঙ্খলা করা হয়, তারা অনুপ্রবেশকারী। জেলখানার মোড়, কালুশাহ সড়ক, চাঁদমারী, আলেকান্দা জুয়ার আসর চলে। আওয়ামী লীগের কয়েক নেতার বিরুদ্ধে মাদকের মামলা হয়েছে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বরিশালেও শুদ্ধি অভিযান দরকার।
মহানগর আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট আফজালুল করিম বলেন, শুদ্ধি অভিযান বরিশালেও হোক এটা আমরা চাই। বরিশালে হাইব্রিডদের, অনুপ্রবেশকারীদের কর্তৃত্বের অবসান হওয়ার দরকার। যারা টেন্ডারবাজি, জুয়াবাজি করে তারা আওয়ামী লীগের কেউ নয়। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা তাদের ধরুক এটাই দল চায়। নগরীর বহুতল ভবনে যারা বার বানিয়ে জুয়ার আসর বসায় তারা কি আওয়ামী লীগের। এদেরও দলের পক্ষ থেকে চিহ্নিত করা হবে।
এ ব্যাপারে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এ কে এম জাহাঙ্গির বলেন, হাইব্রিড, লুটেরা দলে থাকবে না। বরিশাল আওয়ামী লীগ সরকারের এ ধরনের অভিযানকে স্বাগত জানায়। বরিশালে ছাত্রলীগ, যুবলীগের নেতৃত্ব না থাকলেও তারা নিয়ন্ত্রণে আছে। যারা এ ধরনের অপকর্ম করছে তারা হাইব্রিড, অনুপ্রবেশকারী। তাদের চিহিৃত করা হচ্ছে।
আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গির বলেন, ক্যাসিনোর আদলে বরিশালে জুয়ার আসর যারা বসায় তারা আওয়ামী লীগের কেউ নয়। আইনশৃঙখলা রক্ষাকারী বাহিনী তাদের গ্রেফতার করবে বলে মহানগর আওয়ামী লীগ আশা করে। তিনি দলের নামে চাঁদাবাজি, টেন্ডারবাজি, জুয়াবাজিদের বেঁধে রাখার আহ্বান জানান।
Leave a Reply