সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৬:৫১ অপরাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ আগামী ১ জুলাই ২০২০ বুধবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। দিনটিতে নিরানব্বই বছর শেষ করে শতবর্ষে পা দিচ্ছে প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠার পর থেকে জাতীয় যেকোনো দুর্যোগ পরিস্থিতিতে সমানের সারিতে থেকে মোকাবিলা করেছে এই বিশ্ববিদ্যালয়টি। নানা আয়োজনে বিশ্ববিদ্যালয় দিবস পালন করা হলেও করোনা ভাইরাস উদ্ভূত পরিস্থিতিতে স্বল্পপরিসরে দিবসটি উদযাপিত হবে। দিবসটি উদযাপনের লক্ষ্যে সংক্ষিপ্ত কর্মসূচি গ্রহণ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।
কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে: ঐদিন সকাল ১০:৩০টায় নবাব নওয়াব আলী চৌধুরী সিনেট ভবন প্রাঙ্গণে জাতীয় সংগীত পরিবেশনের মাধ্যমে জাতীয় পতাকা, বিশ্ববিদ্যালয় পতাকা উত্তোলন ও বেলুন উড়ানো এবং সকাল ১১টায় অধ্যাপক আবদুল মতিন চৌধুরী ভার্চুয়াল ক্লাসরুমে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সভাপতিত্বে অনলাইন ভার্চুয়াল মিটিং প্ল্যাটফর্ম জুমের মাধ্যমে আলোচনা সভা। আলোচনা সভায় জাতীয় অধ্যাপক ড. রফিকুল ইসলাম সংযুক্ত হয়ে ‘শতবর্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়। ‘প্রসঙ্গ: আন্দোলন ও সংগ্রাম’ শীর্ষক মূল বক্তব্য প্রদান করবেন।
এছাড়া, এই অনলাইন অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (প্রশাসন), প্রো-ভাইস চ্যান্সেলর (শিক্ষা), কোষাধ্যক্ষ, প্রাক্তন দু’জন উপাচার্য, দু’জন ডিন, একজন প্রভোস্ট, একজন রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট, ঢাবি অ্যালামনাই এসোসিয়েশনের সভাপতি এবং ঢাবি শিক্ষক সমিতিসহ অন্যান্য সমিতির পক্ষ থেকে নেতৃবৃন্দ সংযুক্ত হবেন।
দিবসটি উপলক্ষ্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান শুভেচ্ছা বাণী প্রদান করেছেন। তার শুভেচ্ছা বাণীতে উপাচার্য বলেন, পহেলা জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। ২০২০-এ নিরানব্বই বছর শেষ করে শতবর্ষে পা দিল আমাদের এই চিরতরুণ প্রতিষ্ঠান। করোনা উদ্ভূত পরিস্থিতিতে লোকসমাবেশ এড়িয়ে প্রাণপ্রিয় ছাত্র-ছাত্রীবিহীন স্বল্পপরিসরে প্রতিষ্ঠা বার্ষিক আয়োজনে, নিঃসন্দেহে, আনন্দ, প্রশান্তি ও স্বস্তির ঘাটতি অনস্বীকার্য। তবে মুজিববর্ষের এই অলোকসামান্য কালপর্বে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এবারের বিশ্ববিদ্যালয় দিবসের তাৎপর্য অত্যন্ত গভীর ও ব্যাপক। প্রকৃতপক্ষে, বঙ্গবন্ধু এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়– বাংলাদেশ নামক আমাদের প্রাণপ্রিয় মাতৃভূমির দুই অন্তহীন প্রেরণা-উৎস।
তিনি আরো বলেন, শিক্ষা ও গবেষণার বিস্তার, মুক্তচিন্তার উন্মেষ ও বিকাশ এবং সৃজনশীল কর্মকান্ডের মাধ্যমে নতুন ও মৌলিক জ্ঞান সৃষ্টির লক্ষ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠিত হয়। ৩টি অনুষদ, ১২টি বিভাগ, ৬০ জন শিক্ষক, ৮৪৭ জন শিক্ষার্থী এবং ৩টি আবাসিক হল নিয়ে ১৯২১ সালের পহেলা জুলাই এই বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু হয়েছিল। ২০২১ সালে আমাদের অস্তিত্বপ্রতিম এই প্রতিষ্ঠান শতবর্ষপূর্তি উদযাপন করবে। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীও একই বছর উদযাপিত হবে। তাই বছরটি হবে আমাদের জন্য এক বিশেষ মর্যাদা, সম্মান, আবেগ, অনুভূতির সংশ্লেষে গৌরবদীপ্ত ও স্মৃতি-ভাবুকতার বছর। ইতোমধ্যেই সেই উৎসব আয়োজনের প্রস্তুতি শুরু হয়ে গেছে। কালিক নৈকট্যে এ বছরের প্রতিষ্ঠা দিবসেও আমাদের প্রাণে তার ছোঁয়া এসে লেগেছে। তবে, প্রকৃতি ও জীবন বাস্তবতার অভিঘাত অগ্রাহ্য করার শক্তি কারো নেই। করোনার অতিসংক্রমণের কারণে সমগ্র বিশ্বের ন্যায় বাংলাদেশও গভীর সংকটময় মূহূর্ত অতিক্রম করছে। আশার কথা এই যে, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সদস্যবৃন্দ নিরাপদে থেকে জাতীয় দুর্যোগ মোকাবেলায় মানবিক সহায়তায় এগিয়ে এসেছে।
আশার বাণী শুনিয়ে উপাচার্য বলেন, শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন যেন কোনোক্রমেই বাধাগ্রস্ত না হয় তার জন্য এরইমধ্যে তথ্যপ্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করার উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। আমাদের বিশ্বাস সুদিন সামনে, বিপদবিঘ্ন পরিস্থিতির উত্তরণ ঘটবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অতীতের ন্যায় আবারও মুখরিত হবে শিক্ষার্থীদের প্রাণচাঞ্চল্যে, ষ্পন্দিত হবে মহান ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক মূল্যবোধ চর্চার অদম্য প্রতিযোগিতায়।
প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী দেশের প্রতি কৃতজ্ঞতার দিন বলে অবহিত করে আখতারুজ্জামান বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস প্রকৃতপক্ষে গণমানুষের প্রতি, প্রাণের চেয়েও প্রিয় মাতৃভূমির প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতা প্রকাশের দিন। প্রতিষ্ঠা বার্ষিকীর শুভ, পবিত্র এই দিনে শ্রদ্ধাজ্ঞাপন করি আমাদের পূর্বসূরীদের অমর স্মৃতির প্রতি, যাদের দৃঢ় প্রয়াসে ও অর্থায়নে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে প্রিয় খ্যাতিমান এ বিশ্ববিদ্যালয়টি। অকৃত্রিম শ্রদ্ধা জানাই তাদের প্রতি যাদের অনবদ্য অবদানে বিশ্ববিদ্যালয়টি চলতে চলতে আজ মহীরুহে। শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন বিশ্ববিদ্যালয় পরিবারের সকলের প্রতি শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারী, প্রাক্তন শিক্ষার্থী, অভিভাবক ও শুভানুধ্যায়ীদের।
সংক্ষিপ্ত ইতিহাস:
ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বার উন্মুক্ত হয় ১৯২১ সালের ১লা জুলাই। সে সময়কার রমনা এলাকায় প্রায় ৬০০ একর জমির ওপর মনোরম পরিবেশে গড়ে ওঠে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
৩ টি অনুষদ ও ১২ টি বিভাগ নিয়ে একটি আবাসিক বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে এর যাত্রা শুরু হয়। কলা, বিজ্ঞান ও আইন অনুষদের অন্তর্ভুক্ত বিভাগগুলো ছিল সংস্কৃত ও বাংলা, ইংরেজি, শিক্ষা, ইতিহাস, আরবি, ইসলামিক স্টাডিজ, ফারসি ও উর্দু, দর্শন, অর্থনীতি ও রাজনীতি, পদার্থবিদ্যা, রসায়ন, গণিত এবং আইন।
প্রথম শিক্ষাবর্ষে বিভিন্ন বিভাগে মোট ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা ছিল ৮৭৭ জন এবং শিক্ষক সংখ্যা ছিল মাত্র ৬০ জন। যেসব প্রথিতযশা শিক্ষাবিদ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠালগ্নে শিক্ষকতার দায়িত্বে নিয়োজিত ছিলেন তাঁরা হলেন : হরপ্রসাদ শাস্ত্রী, এফ. সি. টার্নার, মুহম্মদ শহীদুল্লাহ্, জি.এইচ. ল্যাংলি, হরিদাস ভট্টাচার্য, ডব্লিউ.এ. জেনকিন্স, রমেশচন্দ্র মজুমদার, এ. এফ. রহমান, সত্যেন্দ্রনাথ বসু, নরেশচন্দ্র সেনগুপ্ত, জ্ঞানচন্দ্র ঘোষ প্রমুখ। ১৯৪৭-৭১ সন পর্যন্ত সময়ের মধ্যে ৫ টি নতুন অনুষদ, ১৬ টি নতুন বিভাগ ও ৪ টি ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠিত হয়।
১৯৫২ সালে ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ১৯৭১-এর স্বাধীনতা যুদ্ধ এবং এর পরবর্তী সকল জন-আন্দোলন ও সংগ্রামে এই বিশ্ববিদ্যালয়ের রয়েছে গৌরবময় ভূমিকা।
বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৩ টি অনুষদ, ১৩ টি ইনস্টিটিউট, ৮৪ টি বিভাগ, ৬০ টি ব্যুরো ও গবেষণা কেন্দ্র এবং ছাত্র-ছাত্রীদের ১৯ টি আবাসিক হল, ৪ টি হোস্টেল ও ১৩৮ টি উপাদানকল্প কলেজ ও ইনস্টিটিউট রয়েছে। এ বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত ছাত্র-ছাত্রীর সংখ্যা প্রায় ৪৬,১৫০ জন ; পাঠদান ও গবেষণায় নিয়োজিত রয়েছেন প্রায় ২,০০৮ জন শিক্ষক।
মুজিববর্ষ উপলক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেছে‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রিসার্চ ইনস্টিটিউট ফর পিচ এন্ড লিবার্টি’। দেশ ও জাতির সার্বিক কল্যাণে উচ্চশিক্ষার সম্প্রসারণ ও অগ্রগতিতে নিবেদিত এ বিশ্ববিদ্যালয় জ্ঞান-বিজ্ঞানের প্রতিটি ক্ষেত্রে গবেষণা-কার্যক্রমকে উৎসাহিত করতে অঙ্গীকারাবদ্ধ।
Leave a Reply