সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০১:০৫ পূর্বাহ্ন
ঝালকাঠি প্রতিনিধি॥ ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার রাজাপুর সদর ইউনিয়নের দক্ষিণ আংগারিয়া গ্রামের ৬ নং ওয়ার্ডের শতবর্ষী ব্যক্তি আয়নাল আলী। ২৫বছর ধরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তিনি।
আয়নাল আলী ওই এলাকার মৃত দলুখানের ছেলে। দুটি ছেলে সন্তান হারিয়ে নিজেসহ দুই নাতি ও এক পুত্র বধূর মুখে দু’মুঠো খাবার তুলে দিতে ভিক্ষাবৃত্তি করে চলছেন পঁচিশ বছর ধরে।
এ বয়সে ভিক্ষার ঝুলি বহন করতে আর পারছেন না তিনি। তার বসতভিটায় ৬শতাংশ জমি ছাড়া চাষ যোগ্য কোন জমাজমি নাই। তিনি প্রথম বয়সে দিন মজুরের কাজ করতেন। এর পর তিনি টাপুরে নৌকা তৈরি করে মালামাল বহন ও লোকজন নিয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে পৌঁছে দিতেন। টাপুরে নৌকার মাঝির কাজ করে আয়নাল আলীর কেটেছে বিশটি বছর। কালের বিবর্তনে পলি পড়ে এই এলাকার খাল-নদী বিলীনের পথে যাওয়ার সাথে সাথে মাঝিদের নৌকার পেশাটিও হারিয়ে যায়।
এরই মধ্যে কর্মক্ষমতা হারিয়ে বৈঠা ছেড়ে ভিক্ষার ঝুলি হাতে নিলেন। বেছে নিলেন ভিক্ষার পথ। প্রায় ২৫ বছর ধরে দ্বারে দ্বারে ভিক্ষা করছেন আয়নাল আলী। তার স্ত্রী শাহাবানু প্যারালাইজড হয়ে ৭ বছর চিকিৎসার অভাবে ধুকে ধুকে ২০০৮ সালে মারা যান। রেখে যান বজলু ও বুদ্ধি প্রতিবন্ধী রফিক নামে দুই ছেলে সন্তান।
বড় ছেলে বজলু ঢাকায় নির্মাণাধীন ভবনের সেন্টারিং এর কাঠ মিস্ত্রীর কাজ করতে গিয়ে ছাদ থেকে পড়ে মেরুদণ্ড ভেঙ্গে যায়। এর কিছু দিন পরে ছোট ছেলে বুদ্ধি প্রতিবন্ধী রফিক রাজাপুর বাজারে মুঠে’র কাজ করতো। ২০১০ সালে রফিক বিদ্যুৎ স্পৃষ্ট হয়ে মারা যায়। ২০১৬ সালে বড় ছেলে বজলু মারা যায়। এই দুই ছেলের দুই সন্তান বেল্লাল (১৩) ৭ম শ্রেণিতে ও বায়জিদ (৭) তৃতীয় শ্রেণিতে স্থানীয় একটি দাখিল মাদ্রাসায় পড়ে।
ছেলের স্ত্রী রহিমা জানান, টিন-কাঠ দিয়ে তৈরি ছোট ঘরটির টিনের ছাউনি বিভিন্নস্থানে ছিদ্র হয়ে গেছে। স্থানীয় মেম্বর জাহাঙ্গির খানের মাধ্যমে শশুর আয়নাল আলীর বয়স্ক ভাতার কার্ড ও আমার নিজের বিধবা ভাতার কার্ড করিয়েছি। দুটি কার্ডের অর্থ ও শতবর্ষী বৃদ্ধ শ্বশুরের ভিক্ষার অর্থ দিয়ে কোনরকম সংসার চলছে।
রাজাপুর সদর ইউপি চেয়ারম্যান মো. আনোয়ার হোসেন মজিবর মৃধা বলেন, আয়নাল আলীকে বয়স্ক ভাতা ও তার পুত্রবধূ রহিমনকে বিধবা ভাতার কার্ড দিয়েছি। ১০ টাকা মূল্যের চালের রেশন কার্ড এবং করোনা কালীন সময় ত্রাণ ও নগদ অর্থ দেয়া হলেও আয়নাল আলীর ভিক্ষাবৃত্তি বন্ধ করে তাদের পরিবারের চারজনের স্থায়ী খাবারের ব্যবস্থা করার মতো পরিষদের সক্ষমতা নেই।
উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা মো. মোজাম্মেল জানান, তারা চাইলে সহজ শর্তে ২০/৩০ হাজার টাকা লোণ নিয়ে ব্যবসা করতে পারেন।
ইউএনও মো. মোক্তার হোসেন জানান, ভিক্ষুকদের সহায়তার ফান্ড আছে। সেখান থেকে অফেরত যোগ্য সর্বোচ্চ ১০ হাজার টাকা দেয়া যেতে পারে, যা দিয়ে নিজে কিছু অর্থ যোগ করে ব্যবসা করতে পারেন। ধনাঢ্য ব্যক্তি ও হৃদয়বান ব্যক্তিরা সাহায্য করতে পারেন। তার পুত্রবধূ রহিমা বেগমের বিকাশ নম্বর ০১৭৮২৭০২৫১৬।
Leave a Reply