মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৪০ অপরাহ্ন
তানজিল জামান জয়,কলাপাড়া (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি।। পঞ্চম শ্রেণি পাশ করে প্রাথমিকের গন্ডি পেরোলেও মানসুরা মীম মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে ভর্তি হতে পারেনি আর্থিক দৈণ্যতায়। মাত্র ১০ বছর বয়সে তার সহপাঠীরা যখন বই খাতা নিয়ে স্কুলে যেতো,ঠিক সেই সময়ে তাকে যেতে হয়েছে সুতার কারখানায়। দুই বছর সুতার কারখানায় দিনরাত কাজ করার কারনে ৬ষ্ঠ ও সপ্তম শ্রেণিতে পড়া হয়নি মীমের। ক্ষুধা দারিদ্রতার সাথে যুদ্ধ করে দুই বছরের জমানো কিছু টাকা দিয়ে পরিবারের অসম্মতিতে অষ্টম শ্রেণিতে ভর্তি হয় মীম।
কলাপাড়া উপজেলার সাগর ঘেষা ধুলাসার ইউনিয়নের চর চাপলী গ্রামের রিকশা চালক নাসির হাওলাদারে মেয়ে মীম গ্রামে গ্রামে ঘুরে নিজ পড়ার ফাঁকে প্রাইভেট পড়িয়ে শিক্ষাযুদ্ধ চালিয়ে এ বছর চর চাপলি ইসলামীয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয় থেকে এসএসসিতে বিজ্ঞান বিভাগে জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। প্রাইভেট পড়িয়ে জমানো ১২শ টাকা দিয়ে আলহাজ্ব জালালউদ্দিন কলেজে এইচএসসিতে ভর্তি হলেও আর্থিক সংকটে উচ্চ শিক্ষার স্বপ্ন অধরাই থেকে যাচ্ছে।
মীমের ঘরে অসুস্থ্য মা জাকিয়া বেগম মৃত্যুশয্যায়। প্রায় দুই মাস হাসপাতালে ভর্তি থেকে চিকিৎসা করালেও আর্থিক সংকটে এখন ঘরে বসে কোন রকম চিকিৎসা হচ্ছে। বাবা রিকশা চালিয়ে যা পায় তা দিয়ে অসুস্থ্য মায়ের ঔষধ, দু’মুঠো ভাত যোগাড় ও পঞ্চম শ্রেণিতে পড়–য়া ভাই আলাইহীমের লেখাপড়ার খরচ চালিয়ে মীমকে কলেজে পড়ানো তাঁর পক্ষে অসম্ভব হয়ে পড়েছে।
তাই ঘরে রান্নার কাজ, অসুস্থ্য মায়ের সেবাসুশ্রুসা করে শিক্ষাজীবনের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে গ্রামে ঘুরে ঘুরে কয়েকটি প্রাইভেট পড়িয়ে কলেজে ভর্তি হলেও এখনও বই কেনা হয়নি মীমের। নেই কলেজে যাওয়ার একটু ভালো পোষাক। মায়ের অসুস্থ্যতায় আর্থিক দৈণ্যতায় চিকিৎসা করাতে না পারার দুঃখে ঘরের কোনে বসে গুমড়ে কাঁদলেও ভবিষতে তার মায়ের মতো কেউ যাতে কষ্ট না পায় তাই ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন মীমের। কিন্তু মেধাবী এ মীমের স্বপ্ন হয়তো থেমে যাবে উচ্চ শিক্ষা শুরুর মাঝ সিড়িতে।
মানসুরা মীম জানায়, নিজের ইচ্ছা না থাকলে এখন আমি হয়তো কোন কারখানার শ্রমিক হতাম। শিক্ষা জীবনের দুই বছর ঝরে গেছে কারখানায় কাজ করে। ইচ্ছে আছে ডাক্তার হওয়ার। কিন্তু কে পূরণ করবে আমার স্বপ্ন। আমার বাবা রিকশা চালায়, মা ঘরে অসুস্থ্য মৃত্যুশয্যায়। কলেজে ভর্তি হয়েছি কিন্তু বই,খাতা কিনতে পারিনি। কেউ নেই সহায়তা করার। হয়তো থেমে যেতে হবে এখানেই । এতো কষ্ট করে এসএসসিতে জিপিএ-৫ পেলাম। কিন্তু এখন ?
মীমের মা জাকিয়া বেগম বলেন, মীমের মতো এতো কষ্ট করে কেউ পড়বে না। ক্লাস ফাইভ পাশ করার পর সিক্সে ভর্তি করাতে পারিনি টাকার অভাবে। দুই বছর ঢাকায় সুতার কারখানার কাজ করে ১০ বছর বয়সে সংসারের হাল ধরেছে। এবার কষ্ট করে ভালো পাশ করেছে। ডাক্তার হওয়ার স্বপ্ন দেখে মীম। যেখানে আমি মৃত্যুশয্যায়। টাকার অভাবে ডাক্তার দেখাতে পারছি না, সেখানে মীমকে পড়াবো কীভাবে। কারো সহায়তা না পেলে হয়তো মীমের লেখাপড়া এখানেই বন্ধ হয়ে যাবে।
চাপলী গ্রামের স্কুল শিক্ষক মো. নুরুন্নবী জানান, মীম খুবই মেধাবী। কিন্তু ওর পরিবারে যখন ঠিকমতো চুলো জ্বলেনা, সেখানে মীমকে কীভাবে পড়াবে এ দূশ্চিন্তা তাদের। আর্থিক সহায়তা ছাড়া মীমের কীভাবে পড়বে। এখনওতো বই কিনতে পারেনি। বিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হয়েছে সেখানে অনেক খরচ। এখন মানুষের সহায়তাই পারে মীমের শিক্ষাজীবন এগিয়ে নিতে।
Leave a Reply