স্ত্রীর জন্য পালানোর চেষ্টা করেননি রিফাত Latest Update News of Bangladesh

রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৪৫ অপরাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- inbox.voiceofbarishal@gmail.com অথবা hmhalelbsl@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩
সংবাদ শিরোনাম:




স্ত্রীর জন্য পালানোর চেষ্টা করেননি রিফাত

স্ত্রীর জন্য পালানোর চেষ্টা করেননি রিফাত




বরগুনা সংবাদদাতা॥  মাত্র ৪ দিন আগেও স্বামী শাহ নেয়াজ রিফাত শরীফের সঙ্গে আনন্দঘন সময় কাটছিল আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির। কাটবেই বা না কেন! মাত্র দুই মাস আগেই বিয়ে হয়েছিল তাদের। নতুন জীবন শুরু করার উচ্ছ্বাস ছিল তাদের চোখেমুখে।তবে হঠাৎ মো. সাব্বির আহমেদ নয়ন ওরফে নয়ন বন্ড নামক ভয়াল ঘাতকের আঘাতে মুহূর্তেই সব স্বপ্ন ভেঙে তছনছ হয়ে যায় মিন্নির। চোখের সামনে স্বামীকে কোপানোর নৃশংস দৃশ্য দেখে এখনো আতঙ্কিত মিন্নি।রিফাত হত্যার তিন দিন পর নতুন আতঙ্ক বাসা বেঁধেছে মিন্নি ও তার পরিবারের সদস্যদের মধ্যে।

এবারের আতঙ্ক সন্ত্রাসী নয়ন বন্ড না হলেও তার সঙ্গী ও সহযোগীরা।মিন্নির পরিবার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, হত্যাকান্ডের দিন থেকে অচেনা একদল লোকের আনাগোনা চলছে মিন্নিদের বাড়ির আশপাশে। সর্বশেষ বৃহস্পতিবার (২৮ জুন) সন্ধ্যায় অজ্ঞাত একদল লোক মোটরসাইকেলে মিন্নিদের বাড়ির সামনের রাস্তায় আসে। তারা স্থানীয়দের কাছ থেকে মিন্নি ও তার পরিবারের বিষয়ে নানা কথা জিজ্ঞাসা করে। পরে বাড়ির সামনে পুলিশ দেখে দ্রুত চলে যায়।মিন্নির পরিবারের অভিযোগ, অচেনা এসব লোকের মধ্যে স্বয়ং নয়ন বন্ড না থাকলেও তারা তার সঙ্গী ও সহযোগী হতে পারে। তারা নয়নের নির্দেশে এখনো মিন্নি ও তার পরিবারের লোকজনের ক্ষতি করার চেষ্টা করছে।রবিবার মিন্নির বাবা মোজ্জামেল হোসেন কিশোর ও মা জিনাত জাহান মুন্নীর সঙ্গে কথা বলে এসব কথা জানা যায়।

মিন্নির বাবা মোজ্জামেল হোসেন বলেন, আমাদের আতঙ্ক আরও বেড়ে গেছে। প্রতিনিয়ত নয়নের লোকজন রাতের বেলায় আমাদের বাড়ির সামনে মোটরসাইকেল নিয়ে ঘোরা-ফেরা করছে। তারা সুযোগ পেলেই মিন্নি অথবা আমাদের ক্ষতি করবে।সর্বশেষ বৃহস্পতিবার রাতের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার রাতে বাড়ির সামনের রাস্তায় কিছু লোকজন এসেছিল। আমাদের বাড়ির এক মুরব্বিকে তারা জিজ্ঞাসা করে- ‘রিফাতের বউ মিন্নির বাড়ি কোথায়।’ তিনি বয়স্ক হওয়ায় এতো কিছু না বুঝে তাদের বাড়ির রাস্তা দেখিয়ে দেয়।পরে তারা যখন বাড়ির দিকে আসতে শুরু করে তখন দেখে সামনে লোকজন। তখন তারা আবার মুরব্বিকে জিজ্ঞাস করে- ‘বাড়ির সামনে এরা কারা।’ তখন মুরব্বি বলেন, পুলিশ।

এই কথা শুনে তারা দ্রুত পালিয়ে যায়।তিনি বলেন, নয়ন ও তার লোকজনের ভয়ে আমরা এখন জিম্মি হয়ে আছি। বাড়ি থেকে বের হতে পারছি না। কখন যে কী হয়ে যায়, সেই ভয়েই থাকি। ছেলে মেয়েদের আর স্কুল কলেজে পাঠাতে পারব কি-না, তাও জানি না। কারণ নয়ন অনেক বড়-ভয়ানক সন্ত্রাসী। তার লোকজন এখনো চারদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে।তবে মিন্নি ও তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সতর্ক রয়েছে জেলা পুলিশ।মিন্নিদের বাড়ির সামনে পুলিশের একজন উপ-পরিদর্শকের নেতৃত্বে পাঁচজন পুলিশ সদস্য পাহারা দিচ্ছে।পাহারারত পুলিশের উপ-পরিদর্শদ মো. ইদ্রিস বলেন, মিন্নি ও তার পরিবারের নিরাপত্তা নিশ্চিতে আমরা সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। আমরা পরবর্তী নির্দেশ না পাওয়া পর্যন্ত মিন্নিদের বাড়ির সামনে পাহারায় থাকব।

স্ত্রীর জন্য পালানোর চেষ্টা করেননি রিফাত
ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া রিফাত হত্যাকান্ডের ভিডিও দেখে আমাদের অনেকের মনে, ‘রিফাত দৌড়ে পালিয়ে যেতে পারত, কোপ খাওয়ার পরও পালাল না কেন? এমন অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

যখন একের পর এক কোপ রিফাতের ঘাড়ে, পায়ে, পিঠে ও বুকে পড়ছিল, তখন দৌড়ে পালিয়ে যাওয়া সুযোগও ছিল- এরপরও পালাল না কেন? ঘটনার তিনদিন পর গত শনিবার এসব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন নিহত শাহ নেয়াজ রিফাত শরীফের স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি।মিন্নির সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সদ্যবিবাহিত বউকে ছেড়ে চলে যেতে চায়নি রিফাত। এজন্য উপর্যুপরি রামদার কোপ সহ্য করতে না পেরে, দু’পা পিছিয়ে গিয়ে আবার দাঁড়িয়ে পড়ত রিফাত।তিনি বলেন, রিফাত চাইলে দৌঁড়ে পালিয়ে বাঁচতে পারত। শুধু আমি ওখানে ছিলাম বলে আমার কথা চিন্তা করে দাঁড়িয়ে ছিলো। আমার গায়ে যেন কোপ না পড়ে, আমার যেন ক্ষতি না হয়। আমাকে বাচাঁতে রিফাত পালিয়ে যায়নি।

নির্মম সেই দিনের কথা স্মরণ করে মিন্নি বলেন, ঘটনার দিন সকালে আমাকে বাসা থেকে নিয়ে যায় রিফাত। তারপর আমরা বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে দাঁড়িয়ে গল্প করছিলাম। এক পর্যায়ে রিফাত আমাকে খাওয়ানোর জন্য নিয়ে যেতে চায়। আমি খেতে যেতে রাজি হচ্ছিলাম না। ঠিক ওই সময় চারদিক থেকে ৪/৫ জন ছেলে এসে রিফাতের সঙ্গে তর্ক শুরু করে দেয়। তখনও তাদের হাতে কোন অস্ত্র ছিল না। তর্কের এক পর্যায়ে রিফাতকে কিল ঘুষি দিতে থাকে। পরে নয়ন ও রিফাত ফরাজী রামদা নিয়ে এসে রিফাতকে কোপাতে শুরু করে। তখন রিফাত ওদের বারবার অনুরোধ করছিল, ‘ছেড়ে দে, আর মারিস না’ বলতে বলতে এক পা দু’পা করে পিছিয়ে যাচ্ছিল। আমি ওদের আটকানোর চেষ্টা করছিলাম আর চিৎকার করে মানুষকে ডাকছিলাম। কিন্তু কেউ এগিয়ে আসেনি।

মিন্নি বলেন, রিফাত রামদার কোপ সহ্য করতে না পেরে একপা দু’পা করে পিছিয়ে যাচ্ছিল। তখনও তার পালিয়ে বাঁচার সুযোগ ছিল। পালাতে পারলে, সে বেঁচে যেত। সে আমার জন্যই পালাতে চায়নি। ওই জায়গায় আমার যদি কোনো ক্ষতি হয়ে যায়। তখন কি হবে! সন্ত্রাসীরা হামলা চালিয়ে কুপিয়ে হত্যা করার চেষ্টা করছে অন্যদিকে স্ত্রী সন্ত্রাসীদের হাত থেকে স্বামীকে বাঁচানোর চেষ্টা করছে। বরগুনার রিফাত শরীফের হত্যাকান্ড নিয়ে ছড়িয়ে পরা এমন ভিডিওটি তীব্র আলোচনার জন্ম দেয় সারাদেশে।

প্রথম দিকে স্ত্রী আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির এই সাহসী প্রচেষ্টাকে সবাই প্রশংসার দৃষ্টিতে দেখলেও কয়েক ঘণ্টা পরই উল্টো সমালোচনাও শুরু হয় স্বামী হারানো শোকে বিপর্যস্ত মিন্নিকে ঘিরে। এমনকি নিহত রিফাতের বন্ধুদের কেউ কেউ মিন্নিকে নিয়ে সমালোচনা শুরু করে। যার ফলে স্বামীর কবরে মাটি দিতে না পারার আক্ষেপ জানিয়েছেন মিন্নি।

স্ত্রী মিন্নিকে উত্ত্যক্ত করার প্রতিবাদের জের ধরে খুন হন স্বামী রিফাত শরীফ। ঘাতক নয়ন বন্ড, রিফাত ফরাজী ও তাদের গ্যাং এর আক্রমণ থেকে স্বামীকে বাঁচাতে লড়েছিলেন মিন্নি। তার এই সাহসী কর্মকান্ডের প্রশংসা হলেও কেউ কেউ তাকে ‘ভিলেন’ বানিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিদ্বেষমূলক বার্তা দেয়। নিহত রিফাতের বন্ধুরাও ক্ষিপ্ত হয়ে মিন্নির উপর আক্রমণের চেষ্টা চালায়।

গণমাধ্যমকে মিন্নি বলেন, ‘ঘটনার পর রক্তাক্ত অবস্থায় রিফাতকে বরগুনা জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি করি। এরপর আমি জ্ঞান হারিয়ে ফেলি। জ্ঞান ফিরে দেখি রিফাত এখানে নেই। তাকে বরিশাল হাসপাতালে (শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল) ভর্তি করা হয়। রিফাত মারা যাওয়ার পর বিকেলে লাশ দেখতে শ্বশুর বাড়ি গেলে রিফাতের বন্ধুরা আমাকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল করে।মিন্নি বলেন, আমি শ্বশুর বাড়ি যাই তখন রিফাতের বন্ধুরা গালাগাল করে। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আমার দিকে তেড়ে আসে। একপর্যায়ে আমি আমার চাচা শ্বশুরের বাসায় গিয়ে আশ্রয় নেই। আমার অগোচরেই রিফাতের দাফন সম্পন্ন হয়।আমি শেষ দেখাটাও দেখতে পারিনি। এমনকি আমাকে ওর কবরে মাটি পর্যন্ত দিতে দেয়নি।

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD