বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী ২০২৫, ১০:১২ অপরাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ বরিশাল সদর উপজেলা চত্বরে সংঘর্ষের ঘটনায় চোখে গুলিবিদ্ধ হয়ে গ্রেফতার অবস্থায় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন নগরীর ২৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মনিরুজ্জামান মনির ও ১৬ নম্বর ওয়ার্ড ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি তানভীর আহসান। এ ঘটনায় এ দুই নেতা দৃষ্টিশক্তি হারাতে পারেন বলে আশঙ্কা করছেন তাদের স্বজনরা। আহতদের উন্নত চিকিৎসায় দল ও সরকারের সহায়তা কামনা করা হয়েছে।
এ বিষয়ে মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গীর জানিয়েছেন, আহতদের খোঁজখবর নেওয়া হচ্ছে। তাদের চিকিৎসার জন্য সম্ভাব্য সব কিছু করা হবে। আহতদের চিকিৎসায় সহায়তার আশ্বাস দিচ্ছেন বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশ কর্মকর্তারাও। বর্তমানে ওই দুই নেতা ইউএনও ও পুলিশের মামলায় গ্রেফতার অবস্থায় ঢাকার দুইটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
গত ১৮ আগস্ট (বুধবার) রাতে বরিশাল উপজেলা পরিষদ চত্বরের ওই ঘটনায় আওয়ামী লীগের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী গুলিবিদ্ধ হন। এর মধ্যে ওয়ার্ড সভাপতি মনিরুজ্জামান মনিরের ডান চোখে চারটি ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা তানভীর আহসানের ডান চোখে পাঁচটি গুলি লাগে।
জানা গেছে, ঘটনার রাতেই তাদের ঢাকায় নিয়ে পৃথক দুই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। কিন্তু চিকিৎসার সাত দিন অতিবাহিত হলেও তাদের চোখের কোনও উন্নতি হয়নি। বরং ক্ষতিগ্রস্ত চোখের দৃষ্টি হারানোর শঙ্কা জেগেছে। তাদের দেশের বাইরে পাঠিয়ে উন্নত চিকিৎসা দেওয়ার দাবিও জানান স্বজনরা।
তবে নিজ খরচে বিদেশ গিয়ে চিকিৎসা করানোর আর্থিক সক্ষমতা এ দুই নেতার কারও পরিবারেরই নেই। এ জন্য তারা দল ও প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা কামনা করেছেন। তানভীরের মা মহসিনা পারভীন ও তার স্ত্রী জান্নাতি আক্তার বলেন, ‘তানভীরের চোখ নষ্টের পথে। চোখ ভালো করতে হলে উন্নত চিকিৎসার প্রয়োজন। সে জন্য দেশের বাইরে নিতে হবে। কিন্তু সে অর্থ আমাদের নেই। এ জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানাচ্ছি।
ঢাকার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন তানভীরের অভিযোগ, ‘চিকিৎসার প্রয়োজনে নানা পরীক্ষা-নিরীক্ষা প্রয়োজন হলেও পুলিশ বাধা দিচ্ছে।’ তিনি এর প্রতিকার চান।
মনিরের স্ত্রী জানান, ইতোমধ্যে চিকিৎসকরা জানিয়ে দিয়েছেন মনিরের চোখ ভালো হবে না। স্বামীর চোখ রক্ষার্থে উন্নত চিকিৎসার জন্য বাইরে নিতে প্রধানমন্ত্রীর কাছে আবেদন জানিয়েছেন তিনি।
এ বিষয়ে বরিশাল মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি এ কে এম জাহাঙ্গীর বলেন, ‘দলের পক্ষ থেকে আহত প্রত্যেকের খোঁজখবর রাখা হচ্ছে।’ তাদের উন্নত চিকিৎসার বিষয়টি দেখতে কয়েকদিন অপেক্ষা করতে বলেন তিনি।
তানভীরের অভিযোগ অস্বীকার করে বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার আলী আশরাফ ভূঁইয়া বলেন, ‘ঢাকায় চিকিৎসাধীন কারও উন্নত চিকিৎসায় বাধা দেওয়া হয়নি। বরং উন্নত চিকিৎসার জন্য প্রয়োজনে তাদের সহযোগিতা করা হবে।’
প্রসঙ্গত, ১৮ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টায় বরিশাল সিটি করপোরেশনের ২০ থেকে ২৫ জন কর্মচারী নগরের সিঅ্যান্ডবি রোডে উপজেলা পরিষদ এলাকায় গিয়ে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতার শুভেচ্ছা ব্যানার অপসারণের কাজ শুরু করে। এ সময় ইউএনও-এর কার্যালয় ও সরকারি বাসভবনের নিরাপত্তায় নিয়োজিত আনসার সদস্যরা তাদের পরিচয় জানতে চান। তারা সকালে এসে কাজ করার জন্য বলেন। এ সময় সিটি করপোরেশনের কর্মচারীদের সঙ্গে দায়িত্বরত আনসার সদস্যদের বাগবিতণ্ডা হয়। খবর পেয়ে আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের শতাধিক নেতাকর্মী সেখানে যান। পরে সেখানে আনসার সদস্যদের সঙ্গে তাদের কথা কাটাকাটি হয়। সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহও সেখানে উপস্থিত হন। এ সময় নেতাকর্মীরা ইউএনও-এর বাসায় ইটপাটকেল নিক্ষেপ করেন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে গুলি ছোড়েন আনসার সদস্যরা। হামলা ও সংঘর্ষে গুলিবিদ্ধ হন ওসি ও প্যানেল মেয়রসহ সাতজন। এছাড়া পুলিশের লাঠিচার্জে কমপক্ষে ৩০ জন আহত হন।
ওই ঘটনায় ইউএনও ও পুলিশের পক্ষ থেকে মেয়রসহ আওয়ামী লীগের ছয় শতাধিক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের হয়। তাদের মধ্যে ২২ জন কারাগারে আছেন। পরবর্তী সময়ে মেয়রের পক্ষ থেকে ইউএনও এবং ওসিসহ শতাধিক ব্যক্তিকে আসামি করে আদালতে অভিযোগ দায়ের করা হলে বিচারক পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনকে (পিআইবি) তদন্তের নির্দেশ দেন।
এ ঘটনায় গত রবিবার (২২ আগস্ট) মেয়র, জেলা প্রশাসন ও পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে বরিশাল বিভাগীয় কমিশনারের বাসভবনে সমঝোতা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বিষয়টিকে ভুল বোঝাবুঝি হিসেবে উভয় পক্ষ মেনে নেওয়ায় সবার মুখে হাসি ফোটে। তবে ওই বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না ইউএনও মুনিবুর রহমান।
Leave a Reply