মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩৭ পূর্বাহ্ন
কলাপাড়া প্রতিনিধি॥ কয়েক বছর ধরে বাজারে মরিচের ভালো দাম থাকায় সমুদ্র উপকূলে এ বছর ব্যাপক মরিচের আবাদ করেছেন চাষিরা। প্রখর রোদে কৃষকদের নিয়মিত পরিচর্যার ফলে ফলনও খুব ভালো হয়েছে। তবে করোনার প্রভাবে পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় উৎপাদিত মরিচ বাজারজাত করতে না পারায় লোকসানের মুখে পড়েছেন চাষিরা।
সারাবছরই মৌসুমের এ সময়টিতে ভালো দাম হাকানো আগাম চাষিরাও বলছেন মরিচের দাম অনেকটাই পড়তির দিকে। ফলে অনেক চাষি পরিপক্ক মরিচ বাজারজাত করতে না পারায় এখন ক্ষেতজুড়ে চোখ ঝাঁঝানো পাকা মরিচের লালরং চোখে পড়ার মতো।
পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় বিস্তীর্ণ মাঠজুড়ে এখন মরিচ তুলতে ব্যস্ত সময় পার করছেন কৃষকরা। অনেকেই আবার বাড়ির আঙিনায় রোদে শুকাচ্ছেন পরিশ্রমের দাম না পাওয়া উৎপাদিত ফসল। আর এসব কাজে ভাগ্য বদলের চেষ্টায় ক্ষেত থেকে মরিচ তোলাসহ পুরুষের পাশাপাশি বেশি শ্রম দিচ্ছেন নারী শ্রমিকরা। প্রতি হেক্টর জমিতে গড়ে প্রায় ৪ টন মরিচ উৎপাদন হয়েছে। আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় উপজেলার লতাচাপলী, ধুলাসার, নীলগঞ্জ, চম্পাপুর, বালিয়াতলীসহ বেশ কয়েকটি ইউপিতে মরিচ চাষে ভালো উৎপাদন এ বছর লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। বিভিন্ন জাতের মধ্যে বিন্দু, জিরা, বাঁশগাড়াসহ আরো বেশ কয়েকটি জাতের মরিচের বাম্পার ফলন হয়েছে।
উৎপাদন কারীদের ভাষ্যমতে, ক্ষেত থেকে মরিচ তোলার কাজে সহায়তাকারী শ্রমিকদের উৎপাদনের ৬ ভাগের ১ ভাগ দিতে হয় শ্রমের বিনিময়ে, পানি সেচ, সার, ওষুধ, পরিচর্যাবাবদ খরচ করতে হয়েছে অনেক। বর্তমানে মরিচের বাজার মূল্য নিম্নমুখী হওয়ায় সব মিলিয়ে উৎপাদন খরচ উশুল নিয়ে দুশ্চিন্তায় রয়েছেন চাষিরা। উপজেলা কৃষি বিভাগের তথ্যমতে, এ বছর ৫৪০ হেক্টর জমিতে মরিচের আবাদ করেছেন কৃষকরা।
নীলগঞ্জ ইউপির নাওভাঙ্গা গ্রামের মরিচ চাষি তাইয়্যেব বলেন, দাম ভালো পাওয়ায় এ বছর বেশি জায়গায় মরিচ আবাদ করেছেন তিনি । তবে ফলন ভালো হলেও কাঁচামরিচের সঠিক দাম মেলেনি। এছাড়া গত বছরের তুলনায় মণ প্রতি শুকনা মরিচের দাম ৮ হাজার থেকে ৫ হাজারে নেমে এসেছে বলে অনেকটাই হতাশাগ্রস্থ তিনি।
লতাচাপলি ইউপির তাজেপাড়া গ্রামের কৃষক ইউনুছ হাছান জানান, এবারে তিনি প্রায় ৩ একর জমিতে মরিচ চাষ করে ভালো ফলন পেয়েছেন। তবে মণ প্রতি দাম অনেক কম থাকায় তিনি কাঁচামরিচ বিক্রি করেননি। এখন পাকা মরিচ নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন।
একই কথা জানান, মরিচ চাষি মো.হাফিজুর রহমান ও মধু মিয়া। তাদের মতে করোনার কারণেই মরিচের দরপতন হয়েছে।
কলাপাড়া উপজেলা কৃষি-কর্মকর্তা আবদুল মান্নান জানান, এ বছর উপজেলায় লক্ষমাত্রা ছাড়িয়ে ৫০০ হেক্টরেরও বেশি জমিতে মরিচের আবাদ হয়েছে। প্রতি হেক্টরে গড়ে ৪ টন উৎপাদন হয়েছে। আগামীতে আবাদ ধরে রাখতে হলে কৃষকদের ন্যায্য দাম না দিলে তারা আগ্রহ হারিয়ে ফেলবে। মাঠ পর্যায়ে ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকের অভিযোগ পেলে প্রণোদনার ব্যবস্থা করা হবে।
Leave a Reply