রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:২১ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিনিধি॥ প্রতিপক্ষ দমনে নয়া মিশন নিয়ে মাঠে নেমেছেন পিরোজপুর মঠবাড়িয়ার ৪ নং দাউদখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল হক খান রাহাত । এলাকার একজন নারীর মৃত্যুর ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় তার পরিষদের একজন মেম্বরকে ফাঁসাতে ষড়যন্ত্রের কলকাঠি নাড়ছেন। এদিকে মেম্বরকে ফাসানের খবরে স্থানীয় জনতার বিশাল একটি অংশ চেয়াম্যানের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে। থানার ওসি সৈয়দ আবদুল্লাহ বলেন, পারিবারিক সংক্রান্ত মামলায় ভূক্তভোগীর পরিবারের সদস্যরাই আসামি হবার কথা। কিন্তু বাইরের দু’একজনকে বাড়তি আসামি কেন করা হয়েছে এটি বাদীর বিষয়। তবে আসামি যাকেই করুক না কেন, কেউ অযথা হয়রানির শিকার হবেন না। যেহেতু এটি সেনসেটিভ ঘটনা। খেলাফত হোসেন খসরু নামে এক সাংবাদিক জানান, গত ১২ সেপ্টেম্বর সন্ধ্যায় মঠবাড়িয়া থানাধীন দাউদখালী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের খাস হাওলা গ্রামের হারুন খানের বাড়িতে নির্যাতনের শিকার হন হারুন খানের স্ত্রী গৃহবধূ রুবি। যৌতুকের দাবিতে হারুন খান ও তার পরিবারের সদস্যদের নির্যাতনে আহত রুবিকে প্রাথমিকভাবে স্থানীয় হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। অবস্থা গুরুতর হলে তাকে বরিশালের শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
অবস্থার আরো অবনতি ঘটায় পরে তাকে সাভারের সি আর পি হসপাতালে স্থানান্তর করা হয়। গত ২১ সেপ্টেম্বর সেখানেই চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রুবি। মঠবাড়িয়া থানাধীন নলবুনিয়া গ্রামের রফিজ উদ্দিনের কন্যা রুবির বিয়ে হয় একই থানার দাউদখালি এলাকার উজ্জত আলী খানের পুত্র হারুন খানের সাথে। দীর্ঘ ৯ বছর আগে বিয়ে হওয়া রুবি ২ কণ্যা সন্তানের জননী ছিলেন। অভিযোগ রয়েছে, ১২ সেপ্টেম্বর ঘটনার দিন ১ লাখ টাকা যৌতুকের দাবিতে রুবিকে শারীরিক নির্যাতন করেন স্বামী হারুন খান। তার সাথে মামলায় আরো আসামি করা হয়েছে, শামীম মিয়াজি (স্থানীয় ইউপি মেম্বর), সবুর খান, হাবিব, বেল্লাল ও আবু গাজীকে। মামলার বাদী হয়েছেন, রুবির বাবা রফিজ উদ্দিন বেপারী। এদিকে এ মামলায় মেম্বর শামীম মিয়াজীকে আসামি করায় এলাকায় চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। বাদীর সাথে তার কোনো ধরনের আত্মীয়তার বন্ধন নেই। একইভাবে রুবির স্বামীর পরিবারের সাথেও তার কোনো সম্পর্ক নেই। শুধু তা-ই নয় মামলার বাদি আসামিকে ভালো করে চিনেন না।
এলাকাবাসি বলেছেন, শামীম মিয়াজী (মেম্বর) ৪নং দাউদখালী ইউনিয়নের ১নং ওয়ার্ডের সদস্য। স্থানীয় ৪ নং দাউদখালী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ফজলুল হক খান রাহাত এর সাথে ইউপি সদস্য হিসেবে শামীম মিয়াজীর ইউনিয়নের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড নিয়ে সামাজিক দ্বন্দ্ব চলমান রয়েছে। এদিকে রুবির এই খুনের ঘটনাকে শত্রু দমনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করেছেন চেয়ারম্যান রাহাত খান। মামলার বাদি ও রুবির বাবা রফিজ উদ্দিন চেয়ারম্যানের ঘনিষ্টচর। এ কারনে রুবির বাবাকে ম্যানেজ করে শামীম মিয়াজীকে ওই মামলায় আসামি করা হয়। থানা পুলিশকেও ম্যানেজ করেন চেয়ারম্যান নিজেই। গুঞ্জন রয়েছে, এজন্য নাকি মোটা অঙ্কের টাকা ব্যয় করেছেন চেয়ারম্যান। এদিকে শামীম মিয়াজীকে আসামি করায় হতবাগ হয়েছে এলাকাবাসি। তাদের মধ্যে ক্ষোভও বিরাজ করছে। এতে করে খুনের মতো একটি স্পর্শকাতর মামলা ভিন্নখাতে প্রবাহিত হবারও আশঙ্কা রয়েছে। ভূক্তভোগি মেম্বর শামিম মিয়াজি বলেন,চেয়ারম্যান আমার বিরুদ্ধে উঠে পরে লেগেছে। তার প্রভাবে আমাকে মামলার আসামি হিসেবে জড়ানো হয়েছে।
এবিষয়ে চেয়ারম্যান খান রাহাত জানান,মামলা নিয়েছে পুলিশ। অতএব এটি দেখা তাদেরই দায়িত্ব। তবে পুলিশের অপেশাদার আচরনেও ক্ষুদ্ধ সবাই। ঘটনাস্থল পরিদর্শন কিংবা প্রাথমিক তদন্ত না করেই শামীম মিয়াজীকে গ্রেফতার অভিযানে গেলে পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মঠবাড়িয়া সুষ্ঠু তদন্তে এসব বাড়তি আসামি অবশ্যই বাদ পড়ে যাবে। মামলা দায়েরের পরদিন ঘটনাস্থল তদন্তে না গিয়ে শামীম মিয়াজীর (মেম্বর) বাড়িতে অভিযান চালায় তদন্ত কর্মকর্তা এসআই জ্যোতিরন্ময়। তিনি বলেন, রুবির স্বামীর পরিবারের সদস্যদের বাদ দিয়ে অচেনা ব্যক্তি শামীম মিয়াজীকে আসামি করার বিষয়টি অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ। শামীম মিয়াজিকে মামলায় জড়াতে থানা কর্তৃপক্ষকে মোটা অঙ্কের টাকা দেয়া হয়েছে এমনটা জিজ্ঞাস করলে তিনি বলেন, এটি আমার পরিধির বাইরে।
মঠবাড়িয়া সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার হাসান মোস্তফা স্বপন বলেন, পরিবারিক মামলায় যারা ভূক্তভোগীর কাছের কিংবা পাশাপাশি থাকেন তারাই আসামি হবার কথা। এ ধরনের মামলায় একজন দায়িত্বশীল পুলিশ কর্মকর্তাকে দিয়ে প্রাথমিক অনুসন্ধান করে তবেই মামলা রুজুর নিয়ম। অহেতুক কাউকে গ্রেফতার করে হয়রানি করা যাবেনা মর্মে থানার কর্মকর্তাদের প্রতি নির্দেশ রয়েছে।
Leave a Reply