রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১১:৩০ অপরাহ্ন
পিরোজপুর প্রতিনিধি॥ বাংলাদেশে সর্বপ্রথম ও সবচেয়ে বেশি জমিতে ভাসমান পদ্ধতিতে সবজির চারা উৎপাদন হয় পিরোজপুরের নাজিরপুর ও নেছারাবাদ উপজেলায়। আর এ পদ্ধতির চাষাবাদ শত বছরেরও বেশি সময় ধরে চলছে। তবে দিন দিন উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় চাষিরা আগের মত লাভ করতে পারছেন না। এমনকি মিলছে না সম্ভাবনাময় এই কৃষি ক্ষেত্রে কোনো সহযোগীতা। ফলে অনেকটাই হতাশ এ এলাকার চাষিরা।
শত বছরের বেশি সময় ধরে পিরোজপুরের নাজিরপুর ও নেছারাবাদ উপজেলায় ভাসমান পদ্ধতিতে উৎপাদন হচ্ছে সবজির চারা। এই এলাকায় উৎপাদিত চারাই দেশের সিংহভাগ চাহিদা পূরণ করে। আর এর মাধ্যমে কর্মসংস্থান হয়েছে বিলাঞ্চলের কয়েক হাজার চাষিদের। উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় চাষিরা আগের মত আর লাভ করতে পারছেন। এমনকি ঐতিহ্যবাহী ও সম্ভাবনাময় চাষাবাদের ক্ষেত্রে তারা পাচ্ছে না কোনো সরকারি সহযোগীতাও। ভৌগোলিকভাবেই পিরোজপুরের নাজিরপুর উপজেলার দেউলবাড়ী-দোবড়া, কলারদোয়ানিয়া ও মালিখালী এবং নেছারাবাদ উপজেলার বলদিয়া ইউনিয়নের অধিকাংশ এলাকা সারা বছর ৫-৮ ফুট পানিতে ডুবে থাকে। ফলে সেখানে কোনো প্রকার চাষাবাদ করা সম্ভব হয় না।
তবে এসব বিলাঞ্চলে প্রচুর পরিমাণে কচুরিপনা ও জলজ উদ্ভিদ জন্মে। আর এই কচুরিপনা দিয়ে বিশেষ পদ্ধতিতে চাষিরা তৈরি করেন ভাসমান বেড যা স্থানীয়ভাবে ধাপ নামে পরিচিত। এগুলো স্বাভাবিকভাবেই পানির উপর ভেসে থাকে। তাই পানি বৃদ্ধি পেলেও কৃষকদের কোনো ক্ষতি হয় না। এই ধাপের উপর অন্যান্য জলজ উদ্ভিদ দিয়ে তারা উৎপাদন করেন সকল প্রকার সবজির চারা। এই চাষাবাদে বিশেষ অবদান রয়েছে স্থানীয় নারীদেরও। তারাও বাড়িতে বসে বিভিন্নভাবে পুরুষদের সহযোগীতা করেন।
স্থানীয় চাষিরা জানান, পূর্বে কচুরিপনাসহ বিভিন্ন জলজ উদ্ভিদগুলো স্থানীয় জলাশয় থেকে সংগ্রহ করে তা চারা উৎপাদনের জন্য ব্যবহার করত চাষিরা। তবে প্রতিনিয়ত এর চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় বর্তমানে উচ্চ মূল্য দিয়ে সেগুলো কিনতে হচ্ছে। পাশাপাশি জমি লিজ নেওয়ার জন্য মোটা অঙ্কের টাকা দিতে হচ্ছে চাষিদের। আর এতে দিন দিন উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ায় চাষিরা আগের মত আর লাভ করতে পারছেন না। এছাড়া অনেকটা ব্যয়বহুল এ চাষাবাদে মিলছে না কোনো সরকারি সহযোগীতা। ফলে বিভিন্ন ব্যক্তি ও এনজিওর কাছ থেকে চড়া সুদে লোন নিয়ে কৃষকরা এই চাষাবাদ টিকিয়ে রাখছেন।
পিরোজপুর কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর উপপরিচালক আবু হেনা মো. জাফর জানান, আয় বৃদ্ধির জন্য কৃষি অধিদপ্তর থেকে চাষিদের বিভিন্নভাবে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এ ছাড়া এই চাষাবাদ পদ্ধতি নিয়ে গবেষণা অব্যহত রয়েছে। অন্যদিকে চাষিদের যাতে স্বল্প সুদে ঋণ দেওয়া যায় এ নিয়ে কাজ করছে সরকার।
এ পেশার সঙ্গে প্রতক্ষ্য কিংবা পরোক্ষ্যভাবে জড়িত কমপক্ষ্যে ১৫ হাজার চাষি। তাই এ পেশায় জড়িতদের প্রয়োজন সরকারি সহায়তা প্রয়োজন।
Leave a Reply