মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৩৫ পূর্বাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক।।বরিশাল সরকারি ব্রজমোহন কলেজে ১৫ই জানুয়ারী রাতে ছাত্রফ্রন্ট ও ছাত্রলীগের দুই গ্রুপের হাতাহাতি ও মারামারির ঘটনার পর পাল্টাপাল্টি বিক্ষোভ শেষে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের সদস্য সচিব অালিসা মুনতাজ।
ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের দাবী ওই দিন রাতে বিএম কলেজে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয় সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্টের অাহবায়ক সুজয় শুভ ও সদস্য সচিব অালিসা মুনতাজ অশ্লীল কর্মকান্ড করছিলো এবং তাতে বাধা দেয়ায় কলেজ ছাত্রলীগ কর্মী অারিফুর রহমান লিওনকে মারধর করা হয়।
অপরদিকে ছাত্রফ্রন্টের নেতাদের দাবী তাদের সাংগঠনিক অালোচনায় হামলা চালিয়েছে মাদকাসক্ত ছাত্রলীগ কর্মী দাবীদার লিওন।
এদিকে এই ঘটনার পর মঙ্গলবার রাতে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছেন অালিসা মুনতাজ। স্ট্যাটাসটি পুরোপুরি পাঠাকদের মাঝে তুলে ধরা হলো।
“সমাজের কিছু আদি দৃষ্টিভঙ্গীর বাইরে আজও আমরা ভাবতে পারিনা। ভাববার জন্যে লোক দেখানো অনেক আয়োজন আছে-সহশিক্ষা কার্যক্রম,বিশ্ববিদ্যালয় নামক বস্তুর ধারণা তৈরী। কিন্তু লোক দেখানো আয়োজন মস্তিষ্কের নোংরাগুলোকে নিংড়াতে পারেনা। ২১ তারিখ অব্দি নানা মত, আলোচনা-সমালোচনা,নানা দৃষ্টিভঙ্গী পর্যবেক্ষণ করে কিছু লেখার ইচ্ছে হলো। কি হয়েছিলো,কি হওয়া উচিত ছিল,কি হতে পারতো এত আলোচনায় আমি যাব না,এসব সবাই আলোচনা করে ফেলেছেন। কিছু অভিযোগের উত্তর দেয়া দরকার বলে মনে করছি। সবচেয়ে বেশি একটা কথা এসছে যে রাতে অন্যের ক্যাম্পাসে(বিএম)-এ যাওয়ার দরকার কি?
আপনাদের জন্যে বলি,ববি ক্যাম্পাসে আমাদের ছাত্রসংগঠনের কমিটি আছে মানে এই নয় যে আমরা শুধু ববি ক্যাম্পাসেই রাজনীতি করি,,ববির বাইরে গেলে আমাদের আর পলিটিক্যাল আইডেন্টিটি থাকেনা। ২০১৭ -১৮ সাল,যখন ববি ক্যাম্পাসে আমরা মানুষ ছিলাম ৩জন,ক্যাম্পাসে ক্লাস বাদে পুরো সময়টা আমাদের কাটতো শহরে।টাউনহল,সদররোড আর বিএম কলেজে মিছিল মিটিং,পাঠচক্র,কালেকশন,টিচারদের সাথে কথা বলা,দাওয়াত দেয়া,নানা দিবসে প্রদীপ প্রজ্জলন,জীবনানন্দ মেলায় ব্রজমোহন থিয়েটারের পক্ষ থেকে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ,ভাষাদিবসে শহীদ মিনারে ফুল দেয়া নানা কর্মসূচী করে এসেছি। এমনকি আমাদের কেন্দ্রিয় নেতারা আসলে আমরা প্রথমেই বিএম কলেজ ক্যাম্পাসে তাদের নিয়ে যেতাম,গর্ব করে বলতাম এই ক্যাম্পাসটাতে আসলে মনের মধ্যে স্বস্তি আসে,মনে হয় জীবন্ত একটা জায়গা!(?)এতিনটা বছর ধরে ববি ক্যাম্পাসসহ শহরের রাজনীতিটা আমাদের গোটাকয়েক মানুষকেই সামলাতে হয়েছে এবং এখনো হচ্ছে। যেহেতু ক্যাম্পাস আর শহরে দুইজায়গাতেই পলিটিক্যাল কাজগুলো আমাদেরকেই সামলাতে হয় এবং আমাদের প্রায় সব কর্মীরা নথুল্লাবাদ এলাকায় থাকায় ববি ক্যাম্পাস অনেকটা দূরে হয়ে যায় তাই সাংগঠনিক কাজগুলো আমরা সবসময় ওই ক্যাম্পাসে সেরে নেই। প্রগতিশীল ছাত্রজোট নামে ছাত্রদের একটা প্লাটফর্ম আছে(যারা জানেন না তারা জেনে নিয়েন)যেখানের নানা শহর বেষ্টিত কর্মসূচী আমাদেরকেই করতে হয়,বিএম ক্যাম্পাসের কোনোকিছুতেই আমাদের অংশগ্রহণ কম ছিলো না কখনোই। তাই সাংগঠনিকভাবে ভার্সিটি আর বিএম কলেজ ক্যাম্পাসকে আলাদা করে ভাবিনি কখনো। কারো সম্পর্কে কোনো মন্তব্য করার আগে বা অন্যের মন্তব্য বিশ্বাস করার আগে তাদের বিগতদিনের কাজ,তাদের ব্যাকগ্রাউন্ড, এবং অবশ্যই তাদের পলিটিক্যাল আইডেন্টিটি চেক করে কথা বলবেন। আর নিশ্চয়ই কিছু হইছিলো, নিশ্চয়ই কিছু করছিলো এইসব গ্রামের ঝগড়াটে মহিলাদের মত আকাশ পাতাল হুজুগে চিন্তা অন্তত একটা গ্রাজুয়েট ছেলে বা মেয়ে করবে না সে আশা আমরা করতেই পারি।
দুইতিন বছর ধরে যেখানে কাজ করে আসছি ,সে ক্যাম্পাসে একা ২৫-৩০ জন ছেলের টানা ৩ঘন্টা হ্যারাজমেন্টের স্বীকার হয়ে মানসিকভাবে ট্রমাটাইজড হয়ে গিয়েছিলাম। ভালোমন্দ কিছুই ভাবতে পারিনি,,যারা আঘাত করেছি বলে আজকে আমাদের বিরুদ্ধে প্রোগ্রাম করলো এবং যাদের প্রোগ্রামের এক হামলাকারীর একপাক্ষিক বক্তব্যকে সত্য ধরে আমাকে, সুজয়কে নিয়ে বেশ একটু মজা নিলেন আমারই ক্যাম্পাসের আমার ভাইয়েরা কয়েকজন তারা সুজয়ের ছবিগুলো দেখবেন। এটাক করেছি নাকি এটাক্ট হয়েছি সেটা এরপর বিবেচনা করবেন। আর কেনো অন্যের ক্যাম্পাসে একটু আলোচনা করতে গিয়েছিলাম সে উত্তর আগেই দিয়েছি,তাই আপাতত একটু নিজের ইলজিক্যাল পজিশন থেকে সরে আসুন। একদিকে মানসিক বিপর্যস্ত অবস্থা অন্যদিকে সুজয়কে নিয়ে হাসপাতাল দৌড়াদৌড়ি সব মিলিয়ে সবাইকে জানানোর অবস্থায় ছিলাম না। এরপরও নানাভাবে হুমকি দেয়া,আমার মেসের নামধাম ঠিকানা জোগাড় করে আমার ক্ষতির হুমকি দেয়া,মোবাইল চুরির অপবাদ দেয়া,সেজন্যে ২০হাজার টাকা দাবি করে চাঁদাবাজি করা কোনোকিছুই বাদ দেয়নি বিএম কলেজের সুরক্ষাবাহিনী চাদরে ঢাকা সন্ত্রাসীরা।
এত দলাদলি,পারসোনাল সেক্সুয়াল এটাকের মধ্যেও আমার ক্যাম্পাসের কিছু ভাইবোন এতটা শক্তি দিয়ে যাচ্ছেন, ইনবক্সে বলছেন শক্ত থাকিস,পাশে আছি,পোষ্টে বলছেন ছোটবোনের সাথে আছি,খোজ নিচ্ছেন,বলছেন ভেঙে পরিস না,তুই তো শক্ত মেয়ে —তাদের এই ভালোবাসার জায়গাটাকে ভাষায় প্রকাশ করার মত শক্তি আমার নেই।
কারো সাথে ঘটে যাওয়া কোনো অন্যায়ের আপোশ আমি কখনো করিনি, আজ নিজের সাথে ঘটে যাওয়া অন্যায়কেও আমি ‘আলিসা মুনতাজ’ প্রশ্রয় দেব না। নিজেকে বাঁচাতে,নিজের মুখ রক্ষা করতে একটা নয়,হাজারটা মিথ্যা বানোয়াট প্রোগ্রাম-অভিযোগ আপনি দিন,হাজারবার আমাকে গালাগালি করুন,কোটিবার আমার চরিত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলুন,আমি রাজপথ ছাড়বো না,শেষ রক্তবিন্দু পর্যন্ত লড়বো। এই ঘটনা আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে,অনেক মানুষকে চিনিয়েছে,বিশেষ করে নিজেকে চিনেছি। কতটা আত্মমনোবল আমার আছে,আরো কতটা লাগবে পরিমাপ করতে পেরেছি। দিনশেষে বলবো “নিন্দুকেরে বাসি আমি সবার চেয়ে ভালো।”
Leave a Reply