বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ০১:৫৪ পূর্বাহ্ন
আমজাদ হোসেন,বাউফল প্রতিনিধি॥ পটুয়াখালীর বাউফল সরকারি কলেজে দশ মাস ধরে নেই অধ্যক্ষ। এতে করে চড়ম ভোগান্তির শিকার প্রতিষ্ঠানটিতে কর্মরত শিক্ষক ও কর্মচারীরা।
অন্যদিকে না খেয়ে কোনমতে জীবন যাপন করছে কর্মচারীরা। তাদের অভাব দেখলে অবাক হবে যে কেউ। আজকে দুপুরে দেখা যায়, বাউফল সরকারি কলেজের ৩য় শ্রেণীর কর্মচারী ফোরকান মিয়া, তার পরিবারের ১১ সদস্যের দুপুরের খাবারের জন্য কিনেছে পাওরুটি।
তিনি বলেন, এক বেলা রুটি, এক বেলা ভাত খেয়ে বেঁচে আছি। এক বছর বেতন পাই না। পরিবারের সদস্য সংখ্যা ১১ জন কিভাবে খাবো?
বর্তমানে ২৭ জন প্রভাষক চার মাস ও ১২ জন কর্মচারী এগারো মাস ধরে বেতন বোনাস থেকে বঞ্চিত রয়েছেন। শিক্ষার্থীরা হচ্ছেন নানামুখী হয়রানির স্বীকার।
শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনীয় কাগজপত্রে অধ্যক্ষের স্বাক্ষরের জন্য মাসের পর মাস কলেজের বারান্দায় ঘুরতে হচ্ছে। অধ্যক্ষ না থাকায় কোন ছাত্র-ছাত্রীকে প্রত্যয়ন পত্র, নম্বর পত্র, চারিত্রিক সদন দিতে পারছে না উল্লেখ করে দুঃখ প্রকাশের নোটিশ ঝুলিয়ে রেখেছে কলেজ কর্তৃপক্ষ।
জানা গেছে, ১লা জুলাই ১৯৬৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাউফল ডিগ্রী কলেজ। পরে ২০১৬ সালের ১২এপ্রিল জাতীয়করণ করা হয় কলেজটি। পূর্ণাঙ্গ অধ্যক্ষ যোগদানের পূর্ব পর্যন্ত একই কলেজের বাংলা বিভাগের প্রভাষক রফিকুল ইসলাম উপধ্যক্ষ পদে নিয়োগ পেয়ে পরে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এরপর ২০২০সালের ১৫ জানুয়ারি পটুয়াখালী সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের সহকারি অধ্যাপক রফিকুল ইসলাম বাউফল সরকারি কলেজে পূর্ণাঙ্গ অধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন।
তিনি যোগদান করার পর কর্মচারীদের বেতন তার স্বাক্ষরে ব্যাংক থেকে উত্তোলন শুরু হয়। কিন্তু যোগদানের ১ মাস ১০দিনের মাথায় তাকে ঢাকা ডিজি অফিসে বদলি করা হয়। এরপর অধ্যক্ষ হিসেবে কাউকে এখন পর্যন্ত দায়িত্ব দেওয়া হয়নি।
আগে শিক্ষকরা তাদের নিজেদের স্বাক্ষরে ব্যাংক থেকে বেতন উত্তোলন করতো তাও তিন মাস পর্যন্ত বন্ধ হয়ে আছে। অধিকাংশ শিক্ষক জানান, অধ্যক্ষ না থাকায় কলেজটি এখন অভিভাবকহীন। কোন কিছুই নিয়মমাফিক হচ্ছে না এখানে।
একজন অধ্যক্ষ নিয়োগ দিয়ে কষ্ট লাঘবের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দাবি জানানো হয়েছে। হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা (ডিডিও) নিয়োগের জন্য কর্তৃপক্ষের কাছে জানানো হলেও এখন অবধি সংশ্লিষ্ট দপ্তর কোন ব্যবস্থা নেয়নি।
অধ্যক্ষ না থাকায় উন্নয়ন ফান্ডের টাকা নির্দিষ্ট সময় কাজে না লাগানোর জন্য ইতিমধ্যে ফেরত চলে গেছে। ছাত্র ছাত্রীর যত ধরনের টাকা ব্যাংকে জমা হচ্ছে সেসব টাকাও কলেজের কাজে ব্যয় করার জন্য তোলা যাচ্ছেনা।
সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিক্ষার্থীরা। একজন শিক্ষার্থীর প্রবেশপত্র প্রত্যয়ন পত্র সহ বিবিধ কাগজপত্রের প্রয়োজন হয়। কিন্তু অধ্যক্ষ না থাকায় আজ তারাও হয়রানির স্বীকার হচ্ছে ও তাদের পড়তে হচ্ছে নানা রকম ভোগান্তিতে। যে কারনে মাসের পর মাস তাদের কলেজের বারান্দায় ঘুরতে হচ্ছে।
কলেজ ছাত্রলীগের সভাপতি মোঃ ইউসুফ বলেন, অধ্যক্ষ যোগদানের পরে কলেজে শিক্ষার্থীরা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিলো। কলেজের পরিবেশ বদলে গিয়েছিলো, জানি না কি কারণে অল্প সময়ের মধ্যে স্যারকে (অধ্যক্ষ) বদলি করা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে দ্রুত অধ্যক্ষ নিয়োগ দিয়ে শিক্ষার্থীদের দূর্ভোগ লাঘব করার দাবী জানাচ্ছি।
একাধিক কর্মচারী জানান, স্যারেরাতো বেতন না পাইলেও প্রাইভেট পড়াইয়া চলেন, আমরা চলমু ক্যামনে? ধার দেনা, লোন করে খেতে হচ্ছে। তার উপরে কিস্তির চাপ। এই জন্য মাঝেমাঝে না খেয়েও থাকা লাগে। এখন অন্য কাজ করে পরিবারের ছেলে মেয়েদের ভরণপোষণের ব্যবস্থা করতে হচ্ছে। আমরা আমাদের এই কষ্ট থেকে মুক্তি চাই। আমরা কর্তৃপক্ষের আশু দৃষ্টি কামনা করছি।
Leave a Reply