বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:৫৭ পূর্বাহ্ন
কৃষ্ণ কর্মকার, বাউফল প্রতিনিধি॥ ষাটোর্ধ বয়সি মা জয়নব বিবি। দীর্ঘ বছর বার্ধক্য জনিত রোগে অসুস্থ থাকায় শয্যাশায়ি ছিলেন। বিছানা থেকে উঠে নিজের কাজটুকু নিজে পর্যন্ত করতে পারতেন না। এমন কি মলত্যাগ পর্যন্ত বিছানায় করতেন।
মায়ের সেবা করতে করতে অতিষ্ট হয়ে একমাত্র ছেলে মো. আরিফ হোসেন ও ছেলে বৌ মোসাম্মদ কুলসুম বিবি মিলে কয়েক মাস আগে ওই মাকে একটি অটো রিক্সায় যোগে নিয়ে ফেলে রাখেন পার্শ্ববর্তী উপজেলার এক পাড়াগায়ে।
মা জয়নব কয়েক মাস যাবত সেখানে রোদে পুরে, বৃষ্টিতে ভিজে ক্রমশ মৃত্যুর মুখে পতিত হচ্ছিলেন। খবর পেয়ে সেখান থেকেই ওই মা জয়নব বিবিকে উদ্ধার করেন পুলিশ কর্মকর্তা ও স্থানীয় এক সাংবাদিক নেতা। মানবিক এ ঘটনা ঘটেছে পটুয়াখালীর দশমিনা উপজেলায়।
বৃদ্ধা জয়নব বিবি পটুয়াখালীর বাউফল উপজেলার উপজেলার কনকদিয়া ইউনিয়নের জয়ঘোড়া গ্রামের আলউদ্দিন আকনের স্ত্রী।
দশমিনা সাংবাদিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মামুন তানভির বলেন, বুধবার স্থানীয় মোশারেফ হোসেন নামের এক যুবক তার ফেইসবুক আইডিতে জয়নব বিবির ঘটনার বিবরণ লিখে একটি ছবি পোষ্ট করেন। বৃহস্পতিবার ওই পোষ্টটি তার নজরে পড়লে তিনি দশমিনা উপজেলার সদর ইউনিয়নের গ্রামে গিয়ে সকল তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করেন।
এরপর দশমিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসিম উদ্দিনের কাছে গিয়ে বিষয়টি অবহিত করলে ওই দিনই তিনি তাকেসহ এসআই মো. ইমানুল ইসলাম ইমন, এসআই মো. মেহেদি হাসানকে নিয়ে ওই বৃদ্ধার কাছে যান। পড়ে তাকে উদ্ধার করে গোসল করিয়ে নতুন কাপড় চোপর পরিয়ে দশমিনা উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তি করেন।
ওই গ্রামের বাসিন্দা মোসা. সাথী বেগম নামে এক গৃহবধূ জানান, তিনিসহ এলাকার বেশ কয়েকজন নারী দীর্ঘ দুই মাস ধরে ওই বৃদ্ধাকে মাঝে মাঝে খাবার দিয়ে যেতেন। কিন্তু সম্প্রতী তার কাছ থেকে দুর্গন্ধ আসার কারনে কেউ যেতে চাননা। রাস্তার পাশে পরে থেকে কান্না-কাটি করে দিন কাটান।
জয়নব বিবি জানান, স্বামীর মৃত্যুর পড় নিজে অর্ধাহারে অনাহারে থেকে ছেলে আরিফ হোসেন ও মেয়ে রুনাকে নিজ বুকে আগলে রেখে বড় করেছেন। ছেলে পেশায় শ্রমিক, শ্রম করেও আর্থিক স্বচ্ছলতার মুখ দেখাতে পারেনি ছেলে। মেয়েকে ধারকর্য করে বিয়ে দেন দশমিনা উপজেলার আলিপুরা গ্রামে। তবে তার খোঁজ মেয়ে রুনাও রাখেনি। তিনি ছেলের কাছে ফিরে যেতে চান না।
উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সের চিকিৎসক মোস্তাফিজুর রহমান জানান, জয়নববিবি শারিরীক ভাবে খুবই দুর্বল। প্রাথমিক ভাবে মনে হচ্ছে প্রয়োজনীয় খাবার ও অপুষ্টির কারনে তার শরীরে বিভিন্ন রোগের উপসর্গ রয়েছে। সকল পরিক্ষা নিরীক্ষার পড় তার প্রয়োজনীয় চিকিৎসা চলবে।
দশমিনা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জসিম উদ্দিন বলেন, সাংবাদিক মামুন তানভিরের কাছে সংবাদটি শুনে ওই বৃদ্ধামা জয়নব বিরি কাছে ছুটে যাই। গিয়ে তার শারীরিক অবস্থা দেখে আমি স্থীর থাকতে পারলাম। সাথে সাথে তাকে গোসল করিয়ে কিছু খাবার খাইয়ে দিয়ে নিজ গাড়িতে চড়িয়ে পূর্ণ চিকিৎসার জন্য উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে ভর্তি করি।
তিনি আরও জানান, জয়নব বিবি এখন চিকিৎসাধীন আছেন। তিনি সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত তার হেফাজতে থাকবে। পরবর্তীতে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তবে এ বিষয়ে বৃদ্ধা জয়নব বিবির পরিবারের কোন স্বজনদের সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি।
Leave a Reply