শনিবার, ০১ ফেব্রুয়ারী ২০২৫, ০১:৪৯ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিনিধি॥ বরিশাল নগরের চরকাউয়া খেয়াঘাট এলাকার যাত্রী ছাউনিতে জন্ম নেয়া ছেলে সন্তানটিকে তার মাসহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। বৃহষ্পতিবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় বরিশাল মেট্রোপলিটন পুলিশের ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে আনুষ্ঠানিক ভাবে তাদের এ হস্তান্তর প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। এসময় সেখানে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম-পিপিএম, এসআই আকলিমা বেগমসহ থানা পুলিশের সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।
মানসিক ভারাসাম্যহীন ওই নারী ও তার সন্তানকে দেখভালের দায়িত্বে থাকা এসআই আকলিমা বেগম জানান, মানসিক ভারাসাম্যহীন ওই নারী ও তার সন্তানের দায়িত্ব কোতোয়ালি মডেল থানা পুলিশ নেয়ার পর থেকেই তাদের স্বজনদের সন্ধান চলছিলো। একপর্যায়ে খোজ নিয়ে জানাগেছে, মানসিকভারসাম্যহীন ওই নারীর নাম মাহফুজা আক্তার (১৯)। সে বরিশালের মুলাদী উপজেলার কাজিরচর চরডিগ্রী এলাকার শাহজাহান মুন্সীর কন্যা।
মাহফুজা দরিদ্র বাবা-মায়ের সাথেই ঢাকার মিরপুরে থাকতো। তার বাবা তরকারি বিক্রিসহ নানান কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। পরিবারের বরাত দিয়ে এসআই আকলিমা বেগম জানান, কয়েকবছর পূর্বে মাহফুজার বিয়ে হয় ফরিদপুর জেলার শিবচর উপজেলার মাওয়া এলাকার বাসিন্দা মোঃ আনোয়ার হোসেনের সাথে বিয়ে হয়। বিয়ের পর স্বামীর থাকে থাকলেও তার মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। তাকে ঘরে আটকে রাখা হতো।
সবশেষ মারধরও করা হয় তাকে। তবে গত ৯ মাস ধরে পিতার পরিবারের স্বজনরা তার কোন সন্ধান পাচ্ছিলো না। অর্থাভাবে কোনভাবে খোজাখুজি করে কিছুদিন পরে আশা ছেড়ে দেন আকলিমার। এদিকে দুই মাস পূর্বে আকলিমা বরিশালে গর্ভবতি অবস্থাতেই আসেন। এরপর গত বুধবার (১১ এপ্রিল) সন্ধ্যায় বরিশাল নগরের চরকাউয়া খেয়াঘাট এলাকার যাত্রী ছাউনিতে মানসিক ভারসাম্যহীন এক নারী ফুটফুটে একটি ছেলে বাচ্চা প্রসব করেন। পরে স্থানীয়দের সহায়তায় তাদের বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
খবর পেয়ে কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম-পিপিএম মানসিক ভারসাম্যহী ওই নারীসহ শিশুটির খোজ-খবর নিতে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যান। ওইসময় তিনি বাচ্চা ও মায়ের সার্বাধিক চিকিৎসা সেবা দিতে শেবাচিম কর্তৃপক্ষ ও সমাজ সেবা অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলেন। একইসাথে শিশুটি ও তার মায়ের নিরাপত্তার স্বার্থে মহিলা পুলিশ নিযুক্ত করেন। চিকিৎসা শেষে তাদের বরিশাল কোতোয়ালি মডেল থানা সংলগ্ন ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে নিয়ে আসা হয় এবং শিশুটির নাম দেয়া হয় হাসান।
এদিকে খোজ নিয়ে জানাগেছে, ভিকটিম সাপোর্ট সেন্টারে আনার পর সরকারি উদ্যোগের বাহিরে এসআই আকলিমা শিশুটি ও তার মায়ের পরিচর্জা ব্যক্তিগত উদ্যোগেও করেন। শিশুটির ডাক্তার দেখানোর পাশাপাশি, খাওয়া-দাওয়ার বিষয়েও দেখভাল করেন তিনি। অভিভাবকদের বরিশালে আসা এবং বরিশাল থেকে ঢাকায় যাওয়ার খরচ তিনি নিজেই বহন করেন।
পাশাপাশি কোতোয়ালি মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরুল ইসলাম-পিপিএম শিশুটিকে তার মাসহ স্বজনদের কাছে হস্তান্তরের সময় ব্যক্তিগতভাবে আর্থিক সহয়তা প্রদান করেন। সার্বিক সহায়তা এবং মেয়ে ও নাতির সন্ধান পেয়ে খুশি পরিবারের সদস্যরা। মাহফুজার বাবা শাহজাহান মুন্সী জানান, এই সন্তান মাহফুজা ও তার স্বামী আনোয়ার হোসেন দম্পতিরই। তার মেয়ে ও নাতিকে ভালোভাবে বুঝে পেয়েছেন এজন্য সকলের কাছে তারা কৃতজ্ঞ।
Leave a Reply