রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০১:০৬ পূর্বাহ্ন
ডেস্ক রিপোর্ট: কোটা আন্দোলন নিয়ে ঘটা সহিংসতা তদন্তে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন দিয়ে স্বাধীনভাবে প্রতিটি হতাহতের তদন্ত করে দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হবে বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার প্রতিমন্ত্রী মোহাম্মদ আলী আরাফাত।
তিনি বলেন, ‘পুলিশ, র্যাব, বিজিবি কারো গুলি করার পারমিশন ছিল না। সংবিধান ও আইনের অধীনে তাদের কাজ করতে হয়েছে। তাই বলে ক্ষেত্র বিশেষে কেউ কেউ আইন ভাঙেনি, সেটাও বলছি না। আমরা এটা তদন্ত করে তাদেরও বিচারের আওতায় আনব। যারা আইন ভেঙেছে সে যেই হোক আমরা তদন্ত করে বিচারের মুখোমুখি করব।’
বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলনকক্ষে সাম্প্রতিক ইস্যু নিয়ে ডাকা সংবাদ সম্মেলনে তথ্য প্রতিমন্ত্রী এসব কথা বলেন।
তিনি আরো বলেন, ‘সহিংসতায় যে হতাহতের ঘটনা ঘটেছে সেটা দেশ, জাতির জন্য, বিশেষ করে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের জন্য খুবই দুর্ভাগ্যজনক।
এ হতাহতের জন্য দুঃখ প্রকাশ করছি, গভীর নিন্দা জানাচ্ছি। প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা অনুযায়ী বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন গঠিত হয়েছে। তারা স্বাধীনভাবে প্রতিটি হতাহতের ঘটনার তদন্ত করে এর জন্য দায়ী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় আনা হবে। প্রয়োজনে আমরা বিদেশি এক্সপার্টদের সম্পৃক্ত করব। কারণ হচ্ছে আমরা এখানে পুরোপুরি স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতায় থাকতে চাই।’
তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সহিংসতায় প্রতিটি মৃত্যুর জন্য আমরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত, তেমনি দেশ ও দেশের মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত। হয়তো কোনো একটি তৃতীয় পক্ষ এটার সুবিধা নিচ্ছে। আর এ মৃত্যু নিয়ে প্রথম থেকেই অপপ্রচার করা হচ্ছে। এ ক্ষতির যেমন আপনারা একটা অংশ আমরাও একটা অংশ।
আপনারা যেমন এটার বিচার চান, আমরাও এটার বিচার চাই। একই সঙ্গে প্রতিটি দায়ী ব্যক্তিকে আমরা বিচারের মুখোমুখি করব। একটি মৃত্যুও আমাদের কাম্য ছিল না। প্রতিটি মৃত্যু আমাদের বুকের ওপর ভারী হয়ে আটকে আছে।’
মোহাম্মদ আলী আরাফাত বলেন, ‘শিক্ষার্থী আন্দোলনকারী যারা তাদের যে দাবি ছিল তার মধ্যে তৃতীয় পক্ষ ঢুকে অন্য উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য যে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে তা আপনাদের চোখের সামনে প্রমাণ রয়েছে। জেল ভেঙে জঙ্গিদের নিয়ে যাওয়াসহ যত ধরনের ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ড এগুলো কি শিক্ষার্থীরা করেছে, করেছে তৃতীয় পক্ষ অনুপ্রবেশকারী। তারা কিন্তু এমন প্রতিস্থিতি তৈরি করেছে যাতে হতাহতের ঘটনা ঘটে। যাতে তারা ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করতে পারে। কিন্তু তারা সরাসরি মুখোমুখি হয়নি, শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করেছে।’
তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘আজও শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমেছেন, আমি তাদের অনুরোধ করব ইতিমধ্যে সন্ত্রাসী দ্বারা ব্যবহার হয়েছেন, আবার যদি তারা সুযোগ নেয়, হতাহতের মতো ঘটনা ঘটে, সে দায় কে নেবে। এখানে আমার অনুরোধ থাকবে এ ক্ষেত্রে আপনাদের দায়িত্বশীল ভূমিকা নিতে হবে। কারণ তৃতীয় পক্ষ বসে আছে দেশকে একটা অরাজক পরিস্থিতির মধ্যে ঠেলে দেওয়ার জন্য।’
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা যদি ১৬ জুলাই প্রধানমন্ত্রীর জাতির উদ্দেশে ভাষণের পরে একটু ধৈর্য ধরতাম, একটু সাবধানে থাকতাম, তাহলে কি এ তৃতীয় পক্ষ সুযোগ পেত। ১৬ জুলাই পর্যন্ত ছয়জনের মৃত্যু হয়েছে। এরপর বাকি যে মৃত্যুগুলো হলো এর দায় কে নেবে। কেন এ পরিবেশ তৈরি করা হলো, উসকানি দিয়ে, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অপপ্রচার করে, গুজব ছড়িয়ে।’
তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘সামনের দিনে যেকোনো ধরনের অশান্তি করার সুযোগ খুঁজছে তৃতীয় পক্ষ। যে ঘটনাগুলো ঘটে গেছে সেটা আমাদের জন্য কম দুঃখের নয়। যারা মারা গেছেন তারা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক। সব মৃত্যুর বিচার এ দেশ করবে। এ দেশের সরকার করবে এবং দেশের স্বাধীন বিচার বিভাগীয় কমিশনের মাধ্যমে করবে। প্রয়োজনে স্বচ্ছতার স্বার্থে বিদেশি এক্সপার্ট প্রফেশনাল এনে আমরা তাদের সম্পৃক্ত করব।’
পুলিশের গুলিতে আবু সাঈদ নিহত হয়েছে, তার ফুটেজ থাকার পরও সেই পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হলো না কেন- এমন প্রশ্নের জবাবে তথ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘যাই হোক না কেন আমাদের যে রুটিন ওয়ার্কে কাজ হচ্ছে ,সেটা থাকবে না। বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন যেটি হয়েছে, তারা আবু সাঈদ থেকে শুরু করে সব কিছুর রিভিউ করবে। রিভিউর প্রক্রিয়ায় বিদেশি এক্সপার্টদের সম্পৃক্ত করব। কাজেই এগুলোর কোনো ভ্যালু নেই। বাংলাদেশের তো একটা রুটিন প্রসেস আছে, সেটা দিয়ে অনেকেই অনেক কিছু করছেন সেগুলোর কোনো ভ্যালু নেই। আমরা যে কথাগুলো বলছি সেগুলোর প্রতিফল দেখতে পারবেন।’
বিপক্ষ মতে গেলেই জামায়াত-শিবির বানানোর যে প্রবণতা সে বিষয়ে কোনো পদক্ষেপ নেবেন কি েনা- জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমি একজন তথ্য প্রতিমন্ত্রী হিসেবে না, একজন শিক্ষক হিসেবে বলছি আমার অবস্থান সব সময় শিক্ষার্থীদের পক্ষে আছে। এটাও সত্যি এ দেশে স্বাধীনতাবিরোধী অপশক্তি রয়েছে, জামায়ত-শিবির রয়েছে তাদের চিহ্নিত করে বলতে হবে। আমি মনে করি না যেসব সাধারণ শিক্ষার্থী আন্দোলনে এসেছে তারা আবেগ থেকে এসেছে, ওই পক্ষ থেকে এসেছে বলে আমি বিশ্বাস করি না। কাজেই ঢালাওভাবে কাউকে এভাবে ব্র্যান্ড করা আমি যৌক্তিক মনে করি না।’
Leave a Reply