পটুয়াখালীতে এসি ও সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়ে বাড়িভাড়া তোলেন অধ্যক্ষ Latest Update News of Bangladesh

রবিবার, ০৬ অক্টোবর ২০২৪, ০২:০২ পূর্বাহ্ন

বিজ্ঞপ্তি :
Latest Update Bangla News 24/7 আপনার চারপাশে ঘটে যাওয়া নানা খবর, খবরের পিছনের খবর সরাসরি ভয়েস অব বরিশালকে জানাতে ই-মেইল করুন- inbox.voiceofbarishal@gmail.com অথবা hmhalelbsl@gmail.com আপনার পাঠানো তথ্যের বস্তুনিষ্ঠতা যাচাই করে আমরা তা প্রকাশ করব।*** প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে!! বরিশাল বিভাগের সমস্ত জেলা,উপজেলা,বরিশাল মহানগরীর ৩০টি ওয়ার্ড ও ক্যাম্পাসে প্রতিনিধি নিয়োগ চলছে! ফোন: ০১৭৬৩৬৫৩২৮৩




পটুয়াখালীতে এসি ও সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়ে বাড়িভাড়া তোলেন অধ্যক্ষ

পটুয়াখালীতে এসি ও সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়ে বাড়িভাড়া তোলেন অধ্যক্ষ




নিজস্ব প্রতিনিধি॥  সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ পরিবার নিয়ে থাকছেন কলেজের ভেতরে সরকারি কোয়াটারে। কিন্তু বেতনের সঙ্গে বাড়ি ভাড়ার টাকাও তুলে নিচ্ছেন মিথ্যা তথ্য দিয়ে। এভাবে গত চার বছর ধরে প্রতি মাসে বাড়ি ভাড়ার প্রায় ১২ লাখ টাকা তুলে নিয়েছেন পটুয়াখালী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক জয়দেব স্বজ্জন। সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে এমন কাজ শাস্তিযোগ্য অপরাধ বলে মনে করেন সাবেক আমলা। ঘটনাটি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেবেন বলে জানিয়েছেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি)। একই কলেজের উপাধ্যক্ষ থাকাকালে তিনি শিক্ষকদের জন্য করা দোতলা ভবনটিতে বসবাস করে আসছেন। অধ্যক্ষ হওয়ার পর থেকে অদ্যাবদি এখানেই রয়েছেন সপরিবারে।

চার বছরে প্রায় ১০ লাখ টাকার মতো সরকারি তহবিল থেকে বাড়তি টাকা নিয়েছেন এই শিক্ষক। বিষয়টি নিয়ে বিব্রত কলেজের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা। যদিও ভবনটি অনেকটা জরাজীর্ণ বলে দাবি জয়দেবের। তবে তিনি সেখানে এসি আর সিসিটিভি ক্যামেরা লাগিয়ে নিয়েছেন। অভিযোগের বিষয়ে জানতে ফোন করলে তিনি বেতনের সঙ্গে বাড়ি ভাড়া তোলার কথাটি স্বীকার করেন। যদিও সাফাই হিসেবে তার দাবি পরিত্যক্ত ভবনেই পরিবার নিয়ে থাকছেন। সরেজমিনে দেখতে আসারও অনুরোধ করেন। বলেন, ‘এই ভবনটি দেখলে মায়া লাগবে আপনার।’ আর সরকার চাইলে বাড়ি ভাড়ার টাকা ফেরত দেবেন বলে জানান। জানা যায়, ২০১২ সালর ২৬ আগস্ট পটুয়াখালী সরকারি কলেজের উপাধ্যক্ষ হিসেবে যোগদান করেন অধ্যাপক জয়দব স্বজ্জন। এর কিছুদিন পর থেকে শিক্ষকদের জন্য নির্মিত দোতলা ভবনের একটি ফ্ল্যাটে তিনি পরিবার নিয়ে বসবাস করছেন। ২০১৬ সালের ১ লা মার্চ কলেজের অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পরও তিনি ওই ভবন বসবাস করে যাচ্ছেন।

সরকারি বাড়িতে বসবাস করলে বাড়ি ভাড়া কাটার নিয়ম থাকলেও অধ্যক্ষ অর্থ না কেটে তা বেতনের সঙ্গে উত্তোলন করছেন। অনুসন্ধানে জানা যায়, সরকারি বাড়িতে বসবাস করলেও বাড়ি ভাড়া না কেটে প্রতি মাসে তিনি ২৩ হাজার ৫০০ টাকা করে বাড়ি ভাড়া উত্তোলন করেছেন। তবে বেতন উত্তোলনের সময় অধ্যক্ষ জেলা হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তার কার্যালয়ে প্রতি মাসে যে তথ্য দেন তাতে তিনি সরকারি ভবন বসবাস করছেন না বলে মুচলেকা দিয়েছেন। তবে তিনি পরিবার নিয়েই শিক্ষক কোয়ার্টার থাকছেন। শিক্ষকদের জন্য নির্মিত ভবনে থাকার কথা অকপটে স্বীকার করে কলেজের অধ্যক্ষ বলেন, ‘এটা কোনো কোয়োর্টার না। পরিত্যক্ত একটা ভবন। আপনি এসে দেখে যান, মায়া লাগবে। ভেতর দিয়ে পানি পড়ে।

কোনোমতে মাথা গুজে আছি পরিবার নিয়ে।’ অধ্যক্ষ হওয়ার তিন বছর পর থেকে এখানে থাকছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আগে গ্রামের বাড়ি আমতলী থেকে আসা যাওয়া করতাম। গত তিন বছর ধরে এখানে থাকি। আর এটা যেহেতু কোয়ার্টার না সেজন্যই সরকারি বাসায় থাকি না বলে লেখে দিয়ে বেতন তুলি। তবে সরকার চাইলে এসে তদন্ত করে যদি বলে তাহলে বাসা ভাড়ার যে টাকা সেটা ফেরত দেব।’ ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও কেন পরিবার নিয়ে এখানে থাকছেন- এমন প্রশ্নে অধ্যক্ষ বলেন, ‘কি করবো ভাই, কলেজের ভেতরে থাকলে এটা একটু দেখাশোনা করা যায়। বহিরাগত লোকজনও কম আসা যাওয়া করে। পরিবেশ সুন্দর থাকে।’ এদিকে সরকারি বাসায় থাকার পরও প্রতি মাসে বেতনের সঙ্গে বাসা ভাড়া তোলাকে শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে দেখছেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, এটি প্রমাণিত হলে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হতে পারে।

একই সঙ্গে যতদিন বাসা ভাড়ার টাকা তুলছেন তা ফেরত দেয়ার নির্দেশনা হতে পারে। অধ্যক্ষের প্রত্যেক মাসে বাসা ভাড়ার টাকা বেতনের সঙ্গে নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করেছেন কলেজের সূর্য বাবু নামের একজন কর্মকর্তা। যিনি অবসরে যাওয়ার পরও তাকে আবার এখানে নিয়োগ দেয়া হয়েছে। বেতন ভাতাসহ এসব বিষয় তিনি দেখভাল করেন। তিনি বলেন, ‘প্রিন্সিপাল স্যার মাসে বেতন নেয়ার সময় বাড়িভাড়ার টাকাও তোলেন। কারণ যে বাসায় স্যার থাকেন সেটা পরিত্যক্ত। সেজন্য ভাড়া বাসায় থাকার কথা বলেন।’ একজন শিক্ষকের এমন আচারণকে নৈতিকতা পরিপন্থিও বলছেন কেউ কেউ।

নৌ পরিবহন মন্ত্রণালয়ের সাবেক সচিব শফিক আলম মেহেদী বলেন, ‘একজন সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে অধ্যক্ষ যেটা করেছেন এটা কোনোভাবে করতে পারেন না। তিনি সরকারি চাকরিতে আর্থিক শৃঙ্খলার যে বিধান আছে এটা লঙ্ঘন করেছেন।’ সরকারের সাবেক একজন শীর্ষ কর্মকর্তা বলেন, ‘এই শিক্ষক যা করেছেন এটা নৈতিকতা পরিপন্থি কাজ। প্রথমত তার বিরুদ্ধে মন্ত্রণালয় থেকে নোটিশ দেয়া হবে। তার জবাব সন্তোষজনক না হলে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হবে। এবং ভাড়া বাবদ নেয়া সমুদয় টাকা তাকে ফেরত দিতে হবে।’ এ বিষয়ে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানান পটুয়াখালীর অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. জিয়াউর রহমান। তিনি বলেন, ‘সরকারি বাসায় থেকে আবার ভাড়া বাসায় থাকার কথা বলে বেতনের সঙ্গে বাড়িভাড়ার টাকা তোলার কোনো সুযোগ নেই। তিনি এটা শিক্ষক হিসেবে কোনোভাবেই পারেন না।

আমি খোঁজ নিয়ে অবশ্যই ব্যবস্থা নেব।’ সরেজমিন গিয়ে দেখা যায় তার সরকারি বাসার বাহির থেকে পলেস্তরা খসে পড়া। তবে ভেতরের দিকের রুমগুলো সংস্কার করে বেশি পরিপাটি করে রাখা হয়েছে। দেখে বোঝা যায় কিছুদিন আগে ভবনটির ভেতরে রং করানো হয়েছে। আর নিজর নিরাপত্তার জন্য ভবনের চারপাশে যেমন সিসি টিভি ক্যামরা লাগানো হয়েছে তেমনি তার কক্ষে এসি লাগানো হয়েছে। এ বিষয় জানতে চাইলে অধ্যক্ষ জয়দেব স্বজ্জন কাছে দাবি করেন, তিনি যে ভবনটিতে বসবাস করেন সেটি পরিত্যক্ত।

তবে কবে এটি পরিত্যক্ত করা হয়েছে সে বিষয়ে কোনো তথ্য দিতে পারেননি তিনি। এদিকে ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করার বিষয়ে শিক্ষা প্রকৌশল বিভাগের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারাও এমন কোনো তথ্য জানাতে পারেননি। প্রতিমাসে ভাড়া না কাটানোর বিষয়ে জানতে চাইলে প্রতি মাসে বাসা ভাড়া বাবদ টাকা উত্তোলনের কথা স্বীকার করে বলেন, সরকার চাইলে তিনি যে টাকা নিয়েছেন তা ফেরত দেবেন।

এ বিষয়ে কলেজটির শিক্ষক পরিষদের সদস্য সচিব গাজী জাফর ইকবাল বলেন, ‘একজন অধ্যক্ষের সামাজিক মর্যাদার সঙ্গে এই বাড়িটি যায় না। বিষয়টি আসলই বিব্রতকর।’ এদিকে বিষয়টিকে নৈতিক অবক্ষয় হিসেবে দেখছেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, সাধারণ মানুষ এবং একজন শিক্ষকের নৈতিকতার মান এক পর্যায়ে চলে এসেছে। এটা দুঃখজনক। তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেয়া উচিত। আমরাও সেই দাবি করব।’

সোশ্যাল মিডিয়াতে শেয়ার করুন



Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *










Facebook

© ভয়েস অব বরিশাল কর্তৃক সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত
Developed BY: AMS IT BD