সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ১০:২৯ অপরাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ দেখতে দেখতে পার হলো ৫০ বছর। নির্বাচন আসে, নির্বাচন যায়, নির্বাচিত হয় জনপ্রতিনিধি কিন্তু ভাগ্যের পরিবর্তন হয় না। এমন পরিস্থিতি নিয়ে বসবাস করে আসছেন তিতাস উপজেলার ৩ নম্বর বলরামপুর ইউপির বলরামপুর-দক্ষিণ বলরামপুর এই দুই গ্রামের মানুষ।
এই দুই গ্রামের সংযোগস্থলের মাত্র তিন কিলোমিটার কাঁচা সড়ক পাকা হওয়ার জন্য দুই গ্রামবাসী অপেক্ষা করছে দশকের পর দশক। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিরা নির্বাচনের সময় যে প্রতিশ্রুতি দেন নির্বাচিত হওয়ার পর তা ভুলে যান। কেউ কথা রাখেন না। ফলে দুই গ্রামের ১০ হাজার মানুষ নানা দুর্ভোগ আর দুর্যোগকে সঙ্গী করে মানবেতর জীবন যাপন করছেন এই কাঁচা সড়ক নিয়ে। বর্তমানে এই কাঁচা সড়কও ভেঙে খানা খন্দক হয়ে কূপে পরিণত হয়েছে। এই তিন কিলোমিটার সড়কটিকে দেখার যেন কেউ নেই।
বলরামপুর-দক্ষিণ বলরামপুর এই দুই গ্রামের প্রায় ৩ কিলোমিটার সড়ক এলাকাবাসীর দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বর্ষাকালে কাঁচা সড়কে বৃষ্টির পানি সরে এমনভাবে গর্তের সৃষ্টি হয়েছে, দেখে মনে হয় যেন এক একেকটা একটা কূপ।
সড়কটি সংস্কারের জন্য এলাকাবাসী স্বাধীনতার পর থেকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, এমপি ,মন্ত্রী, উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে দাবি জানিয়ে এলেও কেউ তাদের দাবির প্রতি ভ্রুক্ষেপ করেনি। আর সড়কে চলাচল করতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে পড়েছেন অনেক পথচারী।
সরেজমিনে দেখা যায়, উত্তর বলরামপুর-দক্ষিণ বলরামপুর কাঁচা সড়কটির ওপর এ গ্রামের লোকজন নির্ভরশীল। এলাকার লোকজন এ সড়ক দিয়েই যাতায়াত করছেন। শুধু তাই নয় ওই এলাকার স্কুল-কলেজগামী ছাত্র-ছাত্রীরাও এ সড়কের ওপর নিভর্রশীল। সর্বোপরি এলাকার কৃষকেরা তাদের উৎপাদিত ধান-পাটসহ অন্যান্য পণ্য বাজারজাত করতে এ সড়ক দিয়েই বিভিন্ন স্থানে পাঠাতে হয়। এ ছাড়া বিকল্প কোনো সড়ক নেই। ফলে কৃষকেরা ধানসহ অন্যান্য পণ্য বাজারজাত করতে মারাত্মক অসুবিধায় পড়ছেন।
স্থানীয়রা জানান, নির্বাচনের সময় অনেকেই এই ৩ কিলোমিটার কাঁচা সড়কটি পাকা করে দিবে বলে কথা দিয়েছেন। কিন্তু নির্বাচন চলে গেলে এই সড়ক ও এলাকাবাসীর দুর্দশার কথা করোরই মনে থাকে না।
উত্তর বলরামপুর থেকে দক্ষিণ বলরামপুর গ্রামের শেষ পর্যন্ত কাঁচা সড়কটি প্রায় তিন কিলোমিটার অংশ সেই প্রথম থেকেই বেহাল অবস্থা। জায়গায় জায়গায় খানা-খন্দ ও সড়কের মাটি সরে বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়ে মানুষের চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে।
এতে চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন চলাচলরত সাধারণ মানুষ। গত কয়েক দিনের টানা বর্ষণে এই ভোগান্তি চরম আকার ধারণ করেছে। চলতে গিয়ে প্রতিদিন নাকাল হতে হচ্ছেন এ গ্রামের প্রায় ছয় হাজার ভোটারসহ প্রায় ১০ হাজার মানুষের।
এলাকার রাজনৈতিক নেতা মো. সারোয়ার হোসেন বলেন, ভাঙা এ সড়কে প্রতিদিন আমাদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। পথচারীদের দুর্ভোগের পাশাপাশি আমাদের ভোগান্তি হচ্ছে ব্যবসা-বাণিজ্যে। এই সড়কটি খুব দ্রুত বাস্তবায়ন করা হোক, তার জন্য আমরা তিতাস হোমনার এমপি সেলিমা আহমাদ (মেরী) , উপজেলা চেয়ারম্যান মো. পারভেজ হোনেস সরকার ও ইউপি চেয়ারম্যান মো. নুর নবীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।
সংশ্লিষ্ট ওর্য়াড মেম্বার মো. মামুন ভুইয়া বলেন, আমাদের এ গ্রামের বেহাল সড়কে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তি হয় রোগীদের। অনেক সময় মৃত ব্যক্তির খাটিয়ায় বহন করে রোগীদের নিয়ে যেতে হয় হাসপাতালে। বিশেষ করে অ্যাম্বুলেন্সে যেসব রোগী আসতেন তাদের যন্ত্রণা অনেকাংশে বেড়ে যায়। কাঁচা বেহাল সড়কে সবচেয়ে বেশি কষ্ট হয় অন্তঃসত্ত্বাদের। কারণ, জরুরি মুহূর্তে অথবা গুরুতর অবস্থায় অ্যাম্বুলেন্সে বা কোনো সিএনজি করে তাদের হাসপাতালে আনতে হয়। সে সময়ে কোনো অ্যাম্বুলেন্স বা সিএনজি ঢোকানো যায় না।
বলরামপুর ইউপি চেয়ারম্যান মো. নুর নবী বলেন, সড়কটি সংস্কারের জন্য স্বাধীনতার পর থেকে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, এমপি ,মন্ত্রী, উপজেলা চেয়ারম্যানের কাছে দাবি জানিয়ে এলেও কেউ তাদের দাবির প্রতি ভ্রুক্ষেপ করেনি। সরকারি ও ব্যাক্তিগত অর্থায়নে সুদিনকালে কাজ করি, কিন্তু বর্ষা ও বৃষ্টির সিজন এলেই শুরু হয়ে যায় ভাঙন আর ভোগান্তি। এ বিষয়টি মাসিক উন্নয়ন সভায় আমি এমপি সেলিমা আহমাদ (মেরী) ও উপজেলা চেয়ারম্যান পারভেজ হোসেন সরকারের সামনে উপস্থাপন করলে সড়কটির এক কিলোমিটারের কাজ দ্রুত হবে বলে তারা আশ্বস্ত করেন।
ভুক্তভোগী দুই গ্রামের মানুষদের দাবি, গত ৫০ বছরেও তাদের এই কাঁচা সড়কটি পাকা হয়নি। নির্বাচন আসলে প্রার্থীরা আশ্বাস দেয় বিজয়ী হয়ে সব ভুলে যায়। এবার আমাদের বিশ্বাস তাদের এমপি মেরী আপা ও উপজেলার চেয়ারম্যান পারভেজ ভাই অবহেলিত এই দুই গ্রামের তিন কিলোমিটার সড়ক পাকা করে তাদের দুঃখ লাগবে ভুমিকা রাখবেন।
Leave a Reply