সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৩:৩৯ অপরাহ্ন
শাকির বিপ্লব॥ তুমুল আলোচনার মাঝে অবশেষে প্রকাশ্যে আসলেন বরিশাল সিটি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ্। সোমবার দিনভর শহরের বিভিন্ন এলাকায় নিম্ন শ্রেণির মানুষের খোঁজ খবর নেন এবং খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করেন তিনি। চলমান করোনা দুর্যোগে প্রায় ১৪ দিন অন্তর্ধান থাকার পর এই প্রথম তাকে রাজপথে প্রকাশ্যে দেখা যাওয়ায় তাঁকে নিয়ে বিতর্কসূচক আলোচনা ভিন্ন দিকে রূপ নিল।
দুর্যোগের এই ঘনঘটায় মেয়র সাদিক কেন লোকচক্ষুর অন্তরালে ছিলেন, তার কোন ব্যাখ্যা না দিয়ে আকার ইঙ্গিতে তিনি বোঝাতে চেয়েছেন, চিকিৎসকদের পরামর্শে নিজ ঘরেই হোম কোয়ারেন্টিনে ছিলেন। এবার আশ্বাস দিয়েছেন, করোনা ভাইরাস নিয়ে চলমান এই দুর্যোগ মোকাবেলায় তিনি যথার্থ ভূমিকা রাখবেন, তবে তাঁর সাথে সাক্ষাতের সুযোগ পাওয়া যাবে কিনা তা নিয়ে কোন মন্তব্য করেননি তিনি।
উল্লেখ্য, গত ১৭ মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবর্ষের অনুষ্ঠানমালার শেষ দিনে নিজেকে ব্যাপক উৎসাহ উদ্দীপনায় রেখে দলীয় নেতাকর্মীদের আন্দোলিত করে অনুষ্ঠানস্থল জেলা পরিষদের সুসজ্জিত পুকুরের আঙ্গিনামুখী স্রোত বইয়ে দেয়। আলোকিত করে গোটা বরিশাল নগরী। এই জমকালো অনুষ্ঠানের পরদিন থেকেই মেয়র সাদিক কোথায় আছেন, তা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে।
তাঁর কালিবাড়ির বাড়ি থেকে বলা হয়, তিনি ঘরে নেই। এমনকি কোথায় আছেন তারও কোন তথ্য দিতে ব্যর্থ হয় দায়িত্বপ্রাপ্ত কেয়ারটেকাররা। তাঁর ঘনিষ্টজনরা জানিয়েছেন, করোনা ভাইরাসের ভয়াবহতা এড়াতে মেয়র তার বাসভবনে অনুসারীদের যাতায়াত নিষিদ্ধ ঘোষণা করে তিনি না বলা পর্যন্ত সাক্ষাত বন্ধ রাখার কথা বলে অন্তর্ধানে চলে যান।
আসলে তিনি নিজ ঘরে অথবা বরিশাল ক্লাবে ছিলেন কিনা এ নিয়ে পরস্পরবিরোধী তথ্য দিয়ে তাঁর অনুসারীরাই নেতার খোঁজে মাঠে নামলে মেয়রের অর্ন্তধানের বিষয়টি আলোচনায় আসে। শুরু হয় তুমুল বিতর্ক। তাছাড়া ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ ব্যাতীত অন্যান্য রাজনৈতিক দল করোনা মোকাবেলা এবং সচেতনতা সৃষ্টিতে নানা কর্মসূচি দিয়ে মাঠের রাজনীতিতে ভিন্নতা সৃষ্টি করেন।
সেখানে শুধু মেয়র সাদিক আবদুল্লাহই নয়, গোটা আওয়ামী লীগের দায়িত্বশীল নেতাদের কাউকেই মাঠে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ফলশ্রুতিতে দুর্যোগে ক্ষমতাসীন দলের ভূমিকা নিয়ে তুমুল আলোচনায় বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ। নগর পিতা হিসেবে এই দুর্যোগে তাঁর ভূমিকা দেখতে বিভিন্ন মহলের প্রত্যাশা ছিল। অতীতের কর্মকান্ডে তাঁকে নানা কর্মসূচিতে ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে দেখা গেলেও করোনা ভাইরাস নিয়ে নিজেকে দূরত্ব রাখায় খোদ দলীয় কর্মী-অনুসারীরাই ক্ষুব্ধ হন।
অনেক দায়িত্বশীল আওয়ামী লীগ নেতাও অভিন্ন মনোভাব পোষণ করলেও ভয়ে মুখ খুলতে পারেননি বলে এই প্রতিবেদকের কাছে সংগঠনের মহানগরের এক নেতা অনেকটা আফসোসের সুরে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন। কোন কোন মহলের দাবী ‘দুর্যোগে মেয়র মাঠে নেই’ এই নিয়ে মিডিয়ায় শিরোনাম হলে মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ্ বিষয়টি আমলে আনেন।
এরপরেই সিটি কর্পোরেশনের উদ্যোগে নগরীর বিভিন্ন স্থানে হাত ধৌতকরণের ব্যবস্থা করতে দেখা যায়। কিন্তু প্রত্যাশা অনুযায়ী সিটি কর্পোরেশন অথবা মহানগর আওয়ামী লীগের পক্ষ থেকে সচেতনতামূলক কোন প্রচারণা দেখা যায়নি। ফলে করোনা নিয়ে মেয়র সাদিকের এই নেতিবাচক মনোভাব কেন, তা নিয়ে নগরবাসীর মধ্যে চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে শোনা যায়।
মেয়রের পারিবারিক সূত্রের দাবী, পরিস্থিতির ভয়াবহতার আলোকে তিনি নিজের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্নতায় ঘরে ছিলেন। আম জনতার মন্তব্য যে, এক্ষেত্রে তিনি মাঠে অনুপস্থিত থাকলেও তাঁর বিশাল কর্মীবাহিনীকে ওয়ার্ডভিত্তিক মাঠে নামিয়ে দিয়ে নিজের অবস্থান সুদৃঢ় রাখতে পারতেন। রাজনৈতিক ক্ষেত্রে দূরদর্শীতার পরিচয় দিলেও এক্ষেত্রে অপরিপক্কতার বিষয়টি স্পষ্ট হওয়ায় তাঁর আগামী রাজনীতির পথ কতটা মসৃণ হয়, সেই প্রশ্নটি কেউ কেউ সামনে আনতে চাইছেন।
আবার কেউ বলছেন, বর্তমানে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে থাকা অবস্থায় যখন নগরবাসীর পাশে থাকতে ব্যর্থ হলেন, তখন ক্ষমতাবিহীন সাদিক আবদুল্লাহ্র অস্তিত্ব কতটা সুদৃঢ় হয় সেটাও আলোচনায় প্রাধান্য পাচ্ছে। এতসব বিতর্ক ভেঙে সোমবার নিজের অবস্থান জানান দিয়ে নগরবাসীর পাশে থাকার প্রতিশ্রুতি দেন। ধারণা, তারই আলোকে মেয়র সাদিক কথা রাখলেন এবং মাঠে নেমে জনতার সাথে কুশল বিনিময়ের পাশাপাশি করোনা ভাইরাস নিয়ে আতঙ্কগ্রস্ত না হওয়ার আহ্বান রাখেন।
এসময় মহানগরের বেশ কয়েকজন নেতাসহ তাঁর বিশ্বস্ত সহচর নিরব হোসেন টুটুলকে সঙ্গী হিসেবে দেখা যায়। অথচ মেয়রের অন্তর্ধানকালীন সময়ে কোন নেতাকেই রাজপথ তো দূরের কথা নেতাকর্মীদের সাথে দেখা সাক্ষাত বন্ধ করে গৃহবন্দীর ন্যায় দিন পার করছিলেন। এতে প্রমাণ করে সাদিক বিহীন বরিশাল মহানগর আওয়ামী কতটা প্রাণহীন।
তারপরও আশার আলো শেষাবধি সিটি কর্পোরেশনের কর্ণধর ও আওয়ামী লীগের প্রাণভোমরা সাদিক আবদুল্লাহ করোনা নিয়ে মাঠে সরব উপস্থিতি ইতিবাচক ভূমিকা হিসেবেই অনেকে এখন দেখছেন এবং বিতর্কের অবসান টানতে পারবেন বলে উদীয়মান এই নেতার প্রতি অনেকের দৃঢ় প্রত্যাশা রাখতে দেখা বা শোনা যায়। বিশেষ করে মেয়র সাদিক আবদুল্লাহ্ দরিদ্র মানুষের মাঝে খাদ্যসামগ্রী বিতরণ করে প্রথম দিনেই আলোচনায় এসে বিতর্কের ছেদ টানতে চাইছেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।
Leave a Reply