শুক্রবার, ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ০১:৫৫ পূর্বাহ্ন
ঝালকাঠি প্রতিনিধি॥ ঝালকাঠির নলছিটিতে সরকারের বোরো সংগ্রহ কার্যক্রমের চাল মিল মালিক ভর্তুকি দিয়ে দিতে চাইলেও না নেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে খাদ্যগুদাম কর্মকর্তার (ওসিএলএসডি) বিরুদ্ধে। মোটা অঙ্কের ঘুষ না দেওয়ার কারণে মানসম্মত চালও গুদামে ঢুকতে দিচ্ছেন না ওই কর্মকর্তা। এতে চার কোটি টাকার চাল প্রস্তুত করে বিপাকে পড়েছেন সুগন্ধা অটো রাইস অ্যান্ড অ্যাগ্রো ফুড প্রসেসিং কর্তৃপক্ষ। এ ঘটনায় অটোরাইস মিলের পক্ষ থেকে খাদ্য বিভাগের বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ে অভিযোগ দেওয়া হয়েছে। এ ব্যাপারে খাদ্যমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন মিলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. জিল্লুর রহমান খান।
অভিযোগে জানা যায়, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী জেলা খাদ্য বিভাগ ৩৬ টাকা কেজি দরে ১১৯১ মেট্রিকটন চাল সংগ্রহের জন্য উন্নতমানের চাল উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান ‘সুগন্ধা অটো রাইস অ্যান্ড অ্যাগ্রো ফুড প্রসেসিং’ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ৩০ এপ্রিল চুক্তি করে। চুক্তি অনুযায়ী বোরো ধান কিনে চাল উৎপাদন শুরু করে মিল কর্তৃপক্ষ। প্রথম দফায় চাল দিতে গেলে নলছিটি খাদ্য পরিদর্শক (ওসিএলএসডি) গুদামে চাল প্রবেশে বাধা দেন। তিনি মিল কর্তৃপক্ষের কাছে মোটা অঙ্কের ঘুষ দাবি করেন। পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে গত ২৪ জুন ৫১ মেট্রিকটন চাল গুদামে নেওয়া হয়। বাকি চালগুলো প্রস্তুত করে পাঠানো হলে আবারো ঘুষ দাবি করে চাল গুদামে প্রবেশ করতে দেননি ওই কর্মকর্তা। গুদাম থেকেই চাল মিলে ফেরত নিয়ে আসতে বাধ্য হয় কর্তৃপক্ষ। এ অবস্থায় সরকারের সঙ্গে কেজিপ্রতি চার টাকা ভর্তুকি দিয়েও চুক্তি করে বিপাকে পড়েছেন মিল কর্তৃপক্ষ। আগামী ৩০ আগস্টের মধ্যে খাদ্য বিভাগ চাল না নিলে চার কোটি ১০ লাখ টাকা ক্ষতির সম্মুখীন হবে জেলার একমাত্র অটোরাইস মিলটি।
গত ২৮ জুন বরিশাল আঞ্চলিক খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ে অভিযোগ দিয়েও কোনো সুফল পাওয়া যায়নি। ওই কার্যালয়ের এক কর্মকর্তাকে বিষয়টি তদন্ত করার নির্দেশ দেওয়া হয়। পর দিন নলছিটি খাদ্যগুদামে তদন্তে আসেন আঞ্চলিক কার্যালয়ের কেমিস্ট মো. বোরহান উদ্দিন। তাঁর সামনে বসেই নলছিটির খাদ্য পরিদর্শক (ওসিএলএসডি) আনোয়ার হোসেন সুগন্ধা অটোরাইস মিলের ব্যবস্থাপক রেজাউল করিমের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। ব্যবস্থাপককে গুদাম এলাকা থেকে বের করে দেওয়া হয়। এ ব্যাপারে আরো একটি অভিযোগ গত ৩০ জুন বরিশাল আঞ্চলিক কার্যালয়ে দেওয়া হয়।
মিলটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক জিল্লুর রহমান খান অভিযোগ করেন, সরকার আমাদের সঙ্গে যে চুক্তি করেছে, তা বাস্তাবায়ন না করতে পারলে সিকিউরিটি মানি আটকে যাচ্ছে। এমনকি আমাদের প্রতিষ্ঠান কালো তালিকাভুক্তও হতে পারে। আর এসব কিছুর জন্য দায়ী নলছিটি উপজেলা খাদ্য পরিদর্শক এইচ এম আনোয়ার হোসেন। আমরা ৩০০ মেট্রিকটন চাল প্রস্তুত করে মিলে রেখেছি, বাকিগুলোও প্রস্তুতের কাজ চলছে। সব মিলিয়ে এখনো ১১৪০ মেট্রিকটন চাল খাদ্যগুদামে দিতে হবে। অভিযোগ অস্বীকার করে খাদ্য পরিদর্শক বলেন, চালের মান ভালো না থাকায়, গুদামে ওঠানো হয়নি। মানসম্মত চাল হলে অবশ্যই তা গ্রহণ করা হবে।
ঝালকাঠি জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক আবদুস ছালাম বলেন, আমরা মানসম্মত চাল নিতে প্রস্তুত আছি। তবে নলছিটি গুদামে কেন চাল গ্রহণ করা হচ্ছে না, এটা আমার জানা নেই। বিস্তারিত জেনে এবং মিল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে সমস্যা সমাধান করা হবে।
Leave a Reply