রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১০:২২ অপরাহ্ন
অনলাইন ডেস্ক: অনির্বাচিত কমিটির ধারা পাল্টে দিয়ে ২৬ বছর পর ছাত্রদলে নির্বাচিত কমিটি হতে যাচ্ছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী ১৪ সেপ্টেম্বর হবে সংগঠনটির কেন্দ্রীয় সম্মেলন।
শীর্ষ দুই পদে লড়ছেন মোট ২৭ জন প্রার্থী। ৫৬৬ জন ভোটারের কাছে নানা প্রতিশ্রুতি নিয়ে দিনরাত ছুটছেন প্রার্থীরা। ভোটাররাও বলছেন, ব্যক্তি দেখে নয়, সংগঠনের প্রতি ত্যাগ দেখে যোগ্যদের নির্বাচিত করবেন।
ছাত্রদলের কমিটি নিয়ে যখন এমন অবস্থা তখন দলের একাধিক কথিত ‘সিন্ডিকেট’ সদস্যরা দুশ্চিন্তায়। নেতাকর্মীরা বলছেন, দীর্ঘদিন ধরে সাবেক ছাত্রনেতাদের মধ্যে একাধিক ব্যক্তি নিজস্ব লোকদের পদে বসাতে কাজ করতেন। ফলে এতদিন অনির্বাচিত কমিটি হতো সংগঠনটিতে। তবে এবারের পরিস্থিতি পুরোটা ভিন্ন। তাই ইচ্ছা থাকলেও প্রত্যক্ষভাবে কমিটি নিয়ে দায়িত্বের বাইরে খুব বেশি চিন্তা করার সুযোগ পাচ্ছেন না এসব ‘সিন্ডিকেটের’ সদস্যরা।
অন্যদিকে কাউন্সিলের সিদ্ধান্তের আগে ছাত্রদলের বিদ্রোহীদের হাতে নাজেহালও হয়েছেন কেউ কেউ। যে কারণে নিজে থেকে কমিটি নিয়ে শরীরে ‘আঁচড়’ লাগাতে চাচ্ছেন না নেতারা।
ছাত্রদলের কমিটিতে প্রভাব রাখতেন নোয়াখালী অঞ্চলের একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানের নির্দেশনায় এবার সবকিছু হচ্ছে। আমরা বাস্তবায়ন করছি মাত্র। তিনি সব মনিটরিং করছেন। এবার আগের মতো ভাবার সুযোগ দেখি না।’
কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক পদে লড়ছেন এমন একজন প্রার্থী এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘যতটুকু জানি যারা সিন্ডিকেট করতেন তারা প্রত্যক্ষ নয়, পরোক্ষভাবে হয়তো পছন্দের প্রার্থী নিয়ে কথাবার্তা বলছেন। যে কারণে কম হলেও তাদের নিয়ে শঙ্কা আছে। তবে ভোটাররা সচেতন। আকার ইঙ্গিত কতটুকু কাজে লাগবে বলা মুশকিল।’
ছাত্রদলের সবশেষ রাজিব-আকরাম কমিটি দীর্ঘদিন মেয়াদোত্তীর্ণ থাকার পর গত ৩ জুন ভেঙে দেয়া হয়। পরে জানানো হয় কাউন্সিলে হবে নতুন কমিটি। শুধু সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক পদে এ নির্বাচন হবে। সে লক্ষ্যে কাজ শুরু করে নির্বাচন পরিচালনা কমিটি। এখন চলছে শেষ মুহূর্তের কর্মযজ্ঞ।
ভোটগ্রহণের ভেন্যু এখনো চূড়ান্ত হয়নি। এটা বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ঠিক করবেন। তবে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন অথবা চেয়ারপারসনের গুলশান কার্যালয়ে ভোট নেয়া হতে পারে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের জন্য প্রার্থীদের নাম সংবলিত আলাদা রঙয়ের ব্যালট পেপার তৈরি হবে। এবং ভোটারের পাশাপাশি বাবার নামসহ আলাদা পরিচয়পত্র দেওয়া হবে।
সংগঠনটির ১০টি সাংগঠনিক বিভাগের ১১৬ শাখায় মোট ৫৬৬ জন ভোটার ভোট দেবেন। প্রার্থীরা ১ সেপ্টেম্বর মধ্যরাত পর্যন্ত প্রচার চালাতে পারবেন।
প্রতিষ্ঠার পর থেকে গত ৪০ বছরে ১৮টি কমিটি হয়েছে ছাত্রদলের। ১৯৭৯ সালে প্রথম কমিটি ছিল নির্বাচিত। এতে এনামুল করিম সভাপতি ও আ ক ম গোলাম হোসেন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। সবশেষ নির্বাচিত কমিটি হয় ১৯৯২ সালে। কমিটির সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক ছিলেন যথাক্রমে রুহুল কবির রিজভী ও ইলিয়াস আলী।
বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালে ওই সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র খুনের ঘটনা ঘটার পর অল্প কিছুদিনের মধ্যে কমিটি ভেঙে দেওয়া হয়। পরের বছর, ১৯৯৩ সালে ফজলুল হককে সভাপতি ও নাজিম উদ্দিন আলমকে সাধারণ সম্পাদক করে ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় কমিটি গঠন করা হয়। এরপর থেকে ১০টি কমিটিই ছিল অনির্বাচিত।
আঞ্চলিক ভোটে প্রার্থীদের নজর
দুই পদের প্রার্থীরা সারা দেশে ছুটে বেড়ালেও সবার চিন্তায় নিজ নিজ অঞ্চলের ভোট দখলে রাখা। পাশাপাশি অন্য এলাকার ভোটও কীভাবে সংগ্রহ করা যায় সেই চেষ্টা চলছে।
২৯ শাখায় ১৩ ভোট নিয়ে ভোটারে এগিয়ে ঢাকা বিভাগে। আর মাত্র ছয় শাখায় ৩০ ভোট নিয়ে তলানিতে ফরিদপুর বিভাগ।
এ ছাড়া বরিশাল বিভাগের নয়টি শাখায় ৪৫, চট্টগ্রাম বিভাগের ১২ শাখায় ৫৮, কুমিল্লা বিভাগের ছয়টি শাখায় ৩০, খুলনা বিভাগের ১৪ শাখায় ৭০, ময়মনসিংহ বিভাগের নয় শাখায় ৪৫, রাজশাহী বিভাগের ১১ শাখায় ৫২, সিলেট বিভাগের সাতটি শাখায় ৩৫, রংপুর বিভাগের ১৩ শাখায় ৬৩ ভোট রয়েছে।
ছাত্রদলের নেতাকর্মীরা বলছেন, নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে এলাকাভিত্তিক ভোট যে যত বেশি পক্ষে টানতে পারবেন তারই জয়ী হওয়ার সম্ভবনা বেশি। এক্ষেত্রে সভাপতি পদে সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-গণশিক্ষা বিষয়ক সম্পাদক ফজলুর রহমান খোকন আছেন অনেকটা ভালো অবস্থানে। কারণ রংপুর ও রাজশাহী বিভাবে তিনি একমাত্র প্রার্থী।
নির্বাচনে সভাপতি পদে প্রার্থী আটজন। এর মধ্যে খোকন ছাড়া আলোচনার কাজী রওনকুল ইসলাম শ্রাবণ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক হাফিজুর রহমান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহসভাপতি সাজিদ হাসান বাবু। শেষ মুহূর্তে প্রার্থিতা পাওয়া মামুন খানের কথাও শোনা যাচ্ছে।
সভাপতি প্রার্থী হলেও শ্রাবণের পরিবারের সবাই আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের পদধারী নেতা। যে কারণে আলোচনায় থাকলেও শেষ পর্যন্ত পরিস্থিতি কী হবে তা বলা মুশকিল।
অন্যদিকে সাধারণ সম্পাদক পদে ১৯ জনের মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহসভাপতি আমিনুর রহমান, যুগ্ম সম্পাদক সাইফ মাহমুদ জুয়েল, তানজিল হাসান, শাহনেওয়াজ, ইকবাল হোসেন শ্যামল ও সাংগঠনিক সম্পাদক আবু তাহের।
সাধারণ সম্পাদক প্রার্থী তানজিল হাসান এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘সরকারবিরোধী আন্দোলন করতে গিয়ে মামলা-হামলার শিকার হয়েছি। ভোটাররা সুযোগ দিলে তৃণমূলের সঙ্গে সমন্বয় করে সংগঠনকে গতিশীল করতে কাজ করব। বেগম খালেদা জিয়ার মুক্তির আন্দোলন তরান্বিত করব। ক্যাম্পাসভিত্তিক রাজনীতি সক্রিয়ভাবে চালু করতে কাজ করব। এই কথাগুলোই ভোটারদের কাছে পৌঁছে দিচ্ছি।’
নড়চড় কম সিন্ডিকেটের
ছাত্রদলের নতুন কমিটি হওয়ার আগ থেকেই সিন্ডিকেট বলে পরিচিত বিএনপি নেতাদের এক ধরনের তোড়জোড় দেখা যেত। তবে এবারের চিত্র অনেকটা ভিন্ন।
সিন্ডিকেটের সদস্য বলে পরিচিতদের মধ্যে পছন্দের প্রার্থী আছে এমন নেতাদের মধ্যে সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, শফিউল বারী বাবু, আব্দুল কাদির ভূঁইয়া জুয়েল এবং সম্পাদক সাইফুল ইসলাম ফিরোজ, এ বি এম মোশাররফ হোসেন, হাসান মামুন, নুরুল ইসলাম নয়নদের কথা শোনা যায়।
তবে এবার এদের কেউ কেউ প্রত্যক্ষভাবে পছন্দের প্রার্থীদের জন্য কাজ করলেও সরাসরি মাঠে নেই। প্রভাবশালী সদস্য আমান উল্লাহ আমার দেশের বাইরে রয়েছেন। তার ঘনিষ্ঠ একজন ছাত্রনেতা এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘এবার ভাইয়ের (আমান) কোনো কাজ নেই। তারেক রহমান যেভাবেই চান সেভাবে হচ্ছে। এইজন্য সে নীরব।’
সূত্র: ঢাকা টাইমস
Leave a Reply