বুধবার, ২৭ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫২ পূর্বাহ্ন
তানজিল জামান জয়, কলাপাড়া(পটুয়াখালী) প্রতিনিধি।। বঙ্গোপসাগরের লোনা জলে নেমেছে হিন্দু সম্প্রদায়ের হাজারো নর-নারী। মানতকারীরা মাথার কেশ ন্যাড়াসহ প্রায়শ্চিত্ত ও পিন্ড দান করেন। পূণ্যের আশায় বেলপাতা, ফুল, ধান, দূর্বা, হরীতকী, ডাব, কলা, তেল, সিঁদুর সমুদ্রের জলে অর্পণ করেন। পূণ্যার্থীরা পূর্ণিমার মধ্যে উলুধ্বনি ও মন্ত্রপাঠ করে গঙ্গা¯œানের মধ্য দিয়ে শেষ করেছেন এ বছরের রাস পূজা। আকাশে চাঁদের হাসি। হালকা কুয়াশায় ভেজা জোছনার আলো। সারা রাত কেউ ঘুমায়নি। পূর্ব আকাশে ভোরের পূর্ণিমা তিথির নতুন সূর্য ওঠার অপেক্ষা। উষালগ্নে কুয়াকাটা সমুদ্র সৈকতে বিভিন্ন সম্প্রদায়ের হাজার হাজার নর-নারী মিলিত হয়েছে। পূণ্যার্থী ও দর্শনার্থীদের মিলন মেলায় পরিনত হয়েছে। আকাশে উড়ছে বাহারী রংঙের বেলুন। তবে চলমান বৈশ্বিক করোনাভাইরাসের কারণে মেলা অনুষ্ঠিত হয়নি। সীমিত আকারে শুধু মাত্র রাস পূজা উদযাপন করা হয়েছে।
আগত পূণ্যার্থী ও দর্শনার্থীরা আজ সোমবার (৩০ নভেম্বর) সকালে থেকে নিজ গন্তব্যে ফিরে গেছেন। প্রতি বছরের ন্যায় এ বছরের রাসলীলা উৎসবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে পূন্যার্থী ও দর্শনার্থীর সমাগম ঘটেনি এমনটাই জানিয়েছেন রাসমেলা উদযাপন কমিটি। রবিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে মেলার উদ্বোধন করেন কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী অফিসার আবু হাসনাত মোহাম্মাদ শহিদুল হক। এসময় প্রশাসনের কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, জাগতিক পাপ মুছে যাবে। এই মনোষকামনায় পূর্ণিমাতিথীতে সনাতন ধর্মাবলম্বী নারী-পুরুষ কুয়াকাটায় সমুদ্রে পূণ্যস্নান করেন। করোনা ভাইরাসের কারণে কোন অনুষ্ঠানের আয়োজন না থাকলেও সূর্যোদয়ের সাথে সাথে বঙ্গোপসাগরের নীল জলে পূণ্যস্নান করেন পূণ্যার্থীরা। পঞ্জিকা মতে রবিবার দুপুর ১ টা ৫৪ মিনিটে পূর্ণিমাতিথী শুরু হয়েছে। তা থাকবে আজ সোমবার বিকেল তিনটা পর্যন্ত। এ তিথিতেই পূণ্যার্থীদের গঙ্গা¯œানের সময় নির্ধারণ করা হয়। পূণ্যের আশায় এ বছরও সৈকতে সমাগম হয়েছে দূর দূরান্ত থেকে পূণ্যার্থী, দর্শণার্থী ও সাধু সন্ন্যাসী। এদের নিরাপত্তায় মোতায়েন করা হয়েছে অতিরিক্ত পুলিশ।
এদিকে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় শনিবার রাতে শ্রী শ্রী মদন-মোহন সেবাশ্রমে অধিবাসের মধ্য দিয়ে পাঁচদিন ব্যাপী শুরু হয়েছে শ্রীশ্রী কৃষ্ণের রাস উৎসব। মন্দির প্রাঙ্গণে স্থাপন ১৭ জোড়া রাধা কৃষ্ণের যুগল প্রতিমা। এসময় ভাগবত পাঠ, আরতি, উলু ও শঙ্খধ্বনি এবং নাম কীর্তনে মুখরিত হয়ে ওঠে পুরো মন্দির প্রাঙ্গণ। কুয়াকাটায় গঙ্গা ¯œান শেষে পূর্ণ্যার্থীরা রাধা কৃষ্ণের যুগল প্রতিমা দর্শন করবে। তবে এ বছর করোনা ভাইরাসের কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এ রাস উদ্যাপন করা হবে বলে আয়োজকরা জানিয়েছেন।
উপজেলা প্রশাসন সূত্রে জানা গেছে, কুয়াকাটা পৌরসভার উদ্যোগে মন্দির ও সৈকত এলাকায় ভাসমান টয়লেট, পরিধেয় বস্ত্র পরিবর্তন সেড, পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। নিরাপত্তায় রয়েছেন দুইজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, কোস্টগার্ড, পুলিশ, র্যাব, মেডিকেল টিমসহ ফায়ার সার্ভিসের একটি দল। এছাড়া পুরো কুয়াকাটাকে সিসি ক্যামেরার আওতায় ছিলো। মুলত হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় উৎসব হলেও এতে অংশ নেয় সর্বস্তরের মানুষ। কুয়াকাটার সৈকত পরিনত হয় সার্বজনীন উৎসবে। রূপ নেয় সাস্প্রদায়িক সস্প্রীতির উৎসবে এমটাই জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
কলাপাড়া মদন-মোহন সেবাশ্রমের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. নাথুরম ভৌমিক জানান, শনিবার রাতে শ্রী শ্রী কৃষ্ণের রাস উৎসবের অধিবাস সম্পন্ন হয়েছে। এ উৎসব চলবে পাঁচদিন ব্যাপী। করোনা ভাইরাসের কারণে স্বাস্থ্যবিধি মেনে এ বছর পালন করা হয়।
অপরদিকে কুয়াকাটা হোটেল মোটেল সূত্রে জানা গেছে, এ বছর রাসমেলা ও গঙ্গাস্নান উৎসবে আবাসিক হোটেলগুলোতে তেমন একটি বুকিং হয়নি। প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাস পূজায় আগত পূণ্যার্থীদের নিরাপত্তা দিতে আনসার ভিডিপি, পুলিশ, র্যাব, গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে ফেলে পর্যটন নগরী কুয়াকাটাকে। বিভিন্ন পয়েন্টে সিসি ক্যামেরা ও চেক পোষ্ট এর মাধ্যমে পূন্যার্থীদের নজর রাখা হয়েছে।
মহিপুর থানা ওসি মো.মনিরুজ্জামান জানান, গঙ্গা ¯œান উপলক্ষ্যে তিন স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন পয়েন্টে সি-সি ক্যামেরা বসানো হয়েছে। থাকছে সাদা পোষাকে পুলিশের টহল। তবে নো-মাস্ক, নো-সার্ভিস বাস্তবায়নে সকল ধরণের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।
রাসমেলা উদযাপন কমিটির সভাপতি ও কলাপাড়া পৌর মেয়র বিপুল হওলাদার জানান, প্রায় দুই’শ বছর পূর্ণিমা তিথিতে এ রাসলীলা উৎসব ও মেলা চলে আসছে। দ্বাপর যুগে মানুষের দুঃখ-দুর্দশা, হিংসা, হানাহানি দেখে দুষ্টের দমন ও সৃষ্টের লালনের জন্য স্বয়ং ভগবান শ্রীকৃষ্ণ নাম ধারণ করে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হন।
কুয়াকাটা পৌর আওয়ামী লীগ যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক বাবু অনন্ত কুমার মুখার্জী জানান, ব্যাপক নিরাপত্তা, উৎসাহ উদ্দিপনা, ধর্মীয় ভাব গাম্ভীর্য, রাতভর শ্রী কৃষ্ণের নাম যজ্ঞ ও উলুধ্বনীর মধ্য দিয়ে হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের ঐতিহ্যবাহী ধর্মীয় অনুষ্ঠান গঙ্গাস্নান ও শ্রী কৃষ্ণের রাস পূজা সীমিত আকারে সম্পন্ন হয়েছে।
কুয়াকাটা ট্যুরিস্ট পুলিশ জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার সোহরাফ হোসেন বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে সীমিত পরিসরে রাস উৎসবের অনুমতি দেয়া হয়েছে। সকল আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর মতো কুয়াকাটার ট্যুরিস্ট পুলিশও সারা রাত পূণ্যার্থীদের নিরাপত্তায় কাজ করেছে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু হাসনাত মোহাম্মদ শহিদুল হক জানান, কুয়াকাটায় পূণ্যস্নানে আগত পূণ্যার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের সমন্বয় একটি নিরাপত্তা বেষ্টনী তৈরী করা হয়েছিলো।
Leave a Reply