সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ০৯:২৭ অপরাহ্ন
রিয়াজ মাহমুদ আজিম ॥ জমিজমা বিরোধের জের ধরে ইয়াবা দিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে গিয়ে নিজেরাই কুপোকাত হয়ে এখন শ্রীঘরে। ঘটনাটি রায়পাশা-কড়াপুর ইউনিয়নের। গত বুধবার কড়াপুর ইউনিয়নের পাঁচগাও গ্রামের মৃত আব্দুল খালেকের পুত্র হাবিব (৪০) নামে ভাড়ায় চালিত এক মটরসাইকেল চালককে ১১ পিস ইয়াবা সহ প্রতিপক্ষরা পুলিশে খবর দিয়ে ধরিয়ে দেয়। এরপর এয়ারপোর্ট থানার অফিসার ইনচার্জ বিচক্ষণ কর্মকর্তা এস.এম. মাহবুব-উল-আলম আটককৃত হাবিবকে জিজ্ঞাসাবাদ করে বিষয়টি সন্দেহজনক মনে হয়। তাৎক্ষণিক থানার এসআই আবুল বাসারের নেতৃত্বে একটি টিম ঘটনাস্থলে পাঠান তিনি। ঘটনাস্থলে গিয়ে হাবিবের বক্তব্য অনুসারে সরেজমিন তদন্ত করেন তারা। এতে বেড়িয়ে আসে থলের বিড়াল। ষড়যন্ত্রকারী চাচাতো ভাইয়েরা একই গ্রামের মোঃ স্বরুপ আলী খানের ছেলে মাদক ব্যবসায়ী বাবুল খান (৪২) ও দক্ষিণ কড়াপুরের ওয়াজেদ আলী খানের ছেলে মাদক ব্যবসায়ী আলতাফ হোসেন খানকে ২০ হাজার টাকার চুক্তিতে হাবিবকে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর চুক্তি করে। তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে বাবুল খান ও আলতাফ হোসেনকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়। আটককৃত বাবুল খান স্বীকার করেন, ষড়যন্ত্রের শিকার হাবিবের চাচাতো ভাইয়ের (যশোর জেলা কারাগারের কারারক্ষী) সাথে ২০ হাজার টাকার চুক্তিতে তারা ইয়াবা দিয়ে হাবিবকে ফাঁসানোর চেষ্টা চালিয়েছে। তিনি আরো বলেন, চুক্তি মোতাবেক ১৯ হাজার টাকা তাদেরকে দেয়া হয়েছিল। জানা যায়, ষড়যন্ত্রের শিকার হাবিবের সাথে তার চাচাতো ভাইদের জমি-জমা নিয়ে বিরোধ চলছিল। আর তারই জের ধরে চাচাতো ভাইয়েরা দুইজন ইয়াবা ব্যবসায়ীকে দিয়ে হাবিবকে ফাঁসানোর চক্রান্ত করে। যার ধারাবাহিকতায় আটককৃত ষড়যন্ত্রকারী বাবুল খান ও আলতাফ খান হাবিবকে ভাড়ায় নিয়ে যাওয়ার সময় ইয়াবাগুলো মটরসাইকেলের সিটের নিচে লুকিয়ে রাখে। পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী মামলার অন্যান্য আসামীরা পথিমধ্যে মটর সাইকেল থামিয়ে ইয়াবা সহ ধরছে বলে পুলিশকে খবর দেয়। হাবিব জানান, তার চাচাতো ভাইদের সাথে জমিজমা নিয়ে বিরোধ চলে আসছিল। পূর্বে তিনি মাইক্রোবাস চালালেও চোখে সমস্যা থাকায় বর্তমানে ভাড়ায় চালিত মটরসাইকেল চালিয়ে কোনমতে সংসার চালাচ্ছেন। হয়রাণীর শিকার হাবিব আরো বলেন, ওসি স্যারকে সকল ঘটনা খুলে বললে তিনি বিষয়টি সঠিক তদন্ত করেছেন। এজন্যই আমি এ ষড়যন্ত্র থেকে রক্ষা পেয়েছি। এদিকে ষড়যন্ত্রকারী বাবুল খান ও আলতাফ খানকে গ্রেফতার করলেও অপর ষড়যন্ত্রকারীরা পলাতক রয়েছে। এ ঘটনায় এয়ারপোর্ট থানার এসআই আবুল বাসার বাদী হয়ে নামধারী ৭জনকে আসামী করে একটি মামলা দায়ের করেছেন (যার নং ১৬)। মামলার পলাতক আসামীরা হলেন, কুলকানা গ্রামের সৈজুদ্দিন তালুকদারের ছেলে মোঃ আবুল কালাম তালুকদার ও মোঃ আবুল হোসেন তালুকদার, একই গ্রামের ফজলুল হক তালুকদারের ছেলে গিয়াসউদ্দিন তালুকদার, জিন্নাত আলী খানের ছেলে হালিম খান এবং মোঃ আলম হাওলাদারের ছেলে মিজানুর রহমান হাওলাদার। এয়ারপোর্ট থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এস.এম. মাহবুব-উল-আলম এ প্রতিবেদককে জানান, রায়পাশা-কড়াপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান খোকন তাকে ফোন দিয়ে বলেন, ইয়াবাসহ একজনকে আটক করেছে জনতা। এমন সংবাদের ভিত্তিতে সেখানে ফোর্স পাঠিয়ে হাবিবকে থানায় নিয়ে আসা হয় এবং তার কাছ থেকে ১১ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার করা হয়। এরপর থানা কম্পাউন্ডে আটককৃত হাবিবকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে হাবিবের বক্তব্য রহস্যজনক মনে হওয়ায় এসআই বাসারের নেতৃত্বে একটি টিম ঘটনাস্থলে পাঠান তিনি। এরপরই ঘটনার মূল রহস্য বেড়িয়ে আসে এবং ষড়যন্ত্রকারী দুইজনকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি বলেন, মাদকের বিরুদ্ধে স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী, আইজিপি মহোদয় কঠোর অবস্থানে রয়েছেন। তবে কাউকে যেন মিথ্যে হয়রাণী না করা হয় এজন্যই আটককৃত হাবিবকে জিজ্ঞাসাবাদ করে প্রকৃত ঘটনা জানার চেষ্টা করি। তিনি আরো বলেন, একজন নিরীহ লোককে ইয়াবা দিয়ে ফাঁসানোর চেষ্টাকারীদের বিরুদ্ধে মামলা দেয়া হয়েছে এবং দুইজনকে আটক করা হয়েছে। অপর আসামীদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে।
Leave a Reply