রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:৫৬ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক:
নগরীতে অবস্থিত দেশের অন্যতম বৃহৎ ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান অপসোনিন গ্রুপের বর্জ্য শোধনাগার থাকলেও প্রতিষ্ঠানটির বিরুদ্ধে দূষিত তরল বর্জ্য নদীতে নির্গত করার অভিযোগ উঠেছে। ফলে নগরীর কোলঘেঁষে বয়ে যাওয়া কীর্তনখোলা নদীর প্রাণীকূল ও জীব-বৈচিত্র্য হুমকির মুখে পড়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। বরিশাল পরিবেশ অধিদফতরের দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা এ তথ্য জানিয়ে বলেছেন, অপসোনিনের প্রতিটি কারখানায় বর্জ্য শোধনাগার থাকলেও সেগুলো যথাযথভাবে স্থাপিত হয়নি। ফলে শোধনও সঠিকভাবে হচ্ছেনা।
এভাবে বর্জ্য নির্গমন করা অব্যাহত থাকলে কীর্তনখোলার জলজ প্রাণী ও জীববৈচিত্র্য চরমভাবে ক্ষতিগ্রস্থস্ত হবে। একই অভিযোগ করেছেন বরিশাল সিটি কর্পোরেশনের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। বরিশাল পরিবেশ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, অপসোনিন গ্রুপের দুটি প্রতিষ্ঠান নগরীর প্রাণকেন্দ্র বগুড়া রোডে অপসোনিন কেমিক্যালের কারখানা এবং দপদপিয়ায় গ্লোবাল ক্যাপসুলের কারখানা থেকে বিষাক্ত তরল বর্জ্য নির্গত করার প্রমাণ পাওয়া গেছে। নদীর তীরে স্থাপিত হওয়ায় গ্লোবাল ক্যাপসুলের বর্জ্য সরাসরি কীর্তনখোলায় নির্গত হয়। অপরদিকে অপসোনিন কেমিক্যালের দূষিত বর্জ্য ছাড়া হয় বগুড়া রোডের ড্রেনে।
ওই ড্রেনের সংযোগ ভাটারখাল হয়ে কীর্তনখোলায় মিশেছে। পরিবেশ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক আরেফিন বাদল বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে অপসোনিন গ্রুপের কর্মকর্তাদের একাধিকবার চিঠি দেয়া হয়েছে। নগরীর দপদপিয়া সংলগ্ন কীর্তনখোলার তীরে থাকা গ্লোবাল ক্যাপসুল কারখানায় নতুন শোধনাগার স্থাপনের জন্য সম্প্রতি তারা পরিবেশ অধিদফতরে ডিজাইন জমা দিয়েছেন। সেটি এখন পরিবেশ অধিদফতরের কেন্দ্রীয় অফিসের অনুমোদনের অপেক্ষায় রয়েছে।
আর কেমিক্যাল কারখানাটি পর্যায়ক্রমে দপদপিয়ায় স্থানান্তরের কথা জানিয়েছে অপসোনিন কর্তৃপক্ষ। পরিবেশ অধিদফতরের বিভাগীয় অফিসের সহকারী বায়োকেমিস্ট মোন্তাসির রহমান জানান, সর্বশেষ গত বছর ৬ আগস্ট অপসোনিন কেমিক্যালের এবং ২৫ জুলাই গ্লোবাল ক্যাপসুলের তরল বর্জ্যরে সংগৃহীত নমুনা পরীক্ষা করা হয়েছে। এতে যে মাত্রা পাওয়া গেছে তা সবই নদীর জলজ প্রাণীকূল ও জীববৈচিত্রের সহনীয় মাত্রার বাইরে। মোন্তাসির রহমান বলেন, অপসোনিনের এ দুটি কারখানার বর্জ্য শোধনাগার বিধিমতো স্থাপিত হয়নি। বিষয়টি প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বশীলদের বারবার লিখিতভাবে জানানো হয়েছে। সংগৃহীত নমুনা পরীক্ষার ফলাফলে উল্লেখ রয়েছে, তরল বর্জ্যরে দ্রবীভূত অক্সিজেনের সহনীয় মাত্রা হচ্ছে প্রতি লিটারে ৪ দশমিক ৫ থেকে ৮ মিলিগ্রাম।
অপসোনিন কেমিক্যাল কারখানার নির্গত তরল বর্জ্যে আছে ৪ দশমিক ১ মিলিগ্রাম। সিওডি’র অক্সিজেন চাহিদার সহনীয় মাত্রা ২০০ মিলিগ্রাম হলে নির্গত বর্জ্যে আছে ২১০ মিলিগ্রাম। আবার দপদপিয়া গ্লোবাল ক্যাপসুলের বর্জ্যরে দ্রবিভূত অক্সিজেনের মাত্রা আছে ৩ দশমিক ২ মিলিগ্রাম। সিওডির মাত্রা ২৪৮ মিলিগ্রাম। বিষাক্ত বর্জ্য নির্গত করার অভিযোগ অস্বীকার করে অপসোনিন গ্রুপের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোঃ হানিফ বলেন, তাদের সবগুলো কারখানার শোধনাগার সঠিকভাবে স্থাপিত হয়েছে। শোধনও সঠিকভাবে হচ্ছে। পরিবেশ অধিদফতরের অভিযোগ ভিত্তিহীন।
পরিবেশ অধিদফতর লিখিতভাবে জানিয়েছে এ কথার জবাবে অপসোনিনের ওই কর্মকর্তা বলেন, কখনোই তারা লিখিতভাবে কোন অভিযোগ পাননি। পরিবেশ অধিদফতরের মতো একই অভিযোগ করে বিসিসির ভারপ্রাপ্ত স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডাঃ রবিউল ইসলাম বলেন, বগুড়া রোডের কারখানা সংলগ্ন সিটি কর্পোরেশনের ড্রেন অপসোনিন সীমানা প্রাচীর দখল করে নিয়েছে। কারাখানা থেকে গরম পানি জাতীয় বিষাক্ত বর্জ্য ড্রেনে নির্গত হচ্ছে। বিসিসির পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা প্রাণহানির আশঙ্কায় ওই ড্রেন পরিস্কার করতে চায়না। স্বাস্থ্য কর্মকর্তা আরও বলেন, তিনি বিষয়টি মেয়র সেরনিয়াবাত সাদিক আব্দুল্লাহকে জানিয়েছেন। মেয়র দ্রুত এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
Leave a Reply