শনিবার, ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৪৬ অপরাহ্ন
নিয়ামুর রশিদ শিহাব:
‘ও কি গাড়িয়াল ভাই, কত রব আমি পন্থের দিকে চাইয়া রে..’গ্রামবাংলা সেই চিরচেনা গান এখন আর শোনা যায় না। গ্রামবাংলার আঁকাবাঁকা মেঠো পথে ধীরে ধীরে চলা ঐতিহ্যবাহী সেই গরুর গাড়ী আর দেখা যায়না। কালের বির্বতনে আধুনিকতার ছোয়ায় গ্রামবাংলার জনপ্রিয় গরুর গাড়ি এখন শুধুই স্মৃতি বহন করে!
এক সময় গ্রাম-বাংলার জনপদে চলাচলে একমাত্র বাহন ছিল গরুর গাড়ী। মাত্র দুই যুগ আগেও পণ্য পরিবহন ছাড়াও বিবাহের বর-কনে বহনে গরুর গাড়ী ছাড়া বিকল্প কোন বাহন কল্পনাই করা যেত না। সু-প্রাচীনকাল থেকে দেশের গ্রামীণ জনপদে যাতায়াত ও মালামাল পরিবহনের ক্ষেত্রে গরুর গাড়ির বহুল প্রচলন পরিলক্ষিত হতো।আধুনিকতার দাপটে হারিয়ে গেছে গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী গরুর গাড়ী। সেই সাথে হারিয়ে গেছে গাড়ীয়াল পেশাও।
অনুমান করা যাচ্ছে, খ্রিস্টপূর্ব ১৬০০ থেকে ১৫০০ সালের আগেই সিন্ধু অববাহিকা ও ভারতীয় উপমহাদেশের উত্তর-পশ্চিম অঞ্চলে গরুর গাড়ির প্রচলন ছিল, যা সেখান থেকে ক্রমে ক্রমে দক্ষিণেও ছড়িয়ে পড়ে। ঊনবিংশ শতাব্দীর বিভিন্ন জনপ্রিয় উপন্যাসেও দক্ষিণ আফ্রিকার যাতায়াত ও মালবহনের উপায় হিসেবে গরুর গাড়ির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ‘এইচ রাইডার হ্যাগার্ড’-এর বিখ্যাত উপন্যাস ‘কিং সলোমনস মাইনস’ নামক উপন্যাসেও গরুর গাড়ি সম্বন্ধে বর্ণনা রয়েছে। ইতিহাস থেকে জানা যায়, রাতে রাতে বিশ্রাম নেয়ার সময় বা বিপদে পড়লে তারা প্রায় গরুর গাড়িগুলোকে গোল করে সাজিয়ে এক ধরনের দুর্গ গড়ে তুলে তার মধ্যে আশ্রয় গ্রহণ করত। চেঙ্গিস খানের নাতি বাতু খানের নেতৃত্বে ত্রয়োদশ শতাব্দীতে রাশিয়া ও পূর্ব ইউরোপে যে মোঙ্গল আক্রমণ চলে সেখানে তার প্রতিরোধে স্থানীয় অধিবাসীদের দ্বারা গরুর গাড়ির ব্যবহার করা হয়েছিল।
সরেজমিনে গলাচিপা উপজেলার বিভিন্ন প্রান্ত ঘুরেও গরুর গাড়ীর সন্ধান মেলেনি। তখন গ্রামের এক বায়জেষ্ঠো লোক থেকে জানা গেলে, আগের দিনে গ্রামে চলাচলের একমাত্র বাহন ছিল গরুর গাড়ি। দুই যুগ আগেও গরুর গাড়িতে চড়ে বর-বধূ যেত। গ্রাম বাংলায় গরুর গাড়ি ছাড়া বিয়ে হতো না। এছাড়া মালামাল পরিবহনের একমাত্র বাহন ছিল এটি। কিন্তু বর্তমানে যন্ত্র আবিষ্কারের কারণে নানা গাড়ির ভিড়ে গরুর গাড়ীর প্রচলন নেই।
এ ব্যাপারে এক শিক্ষক জানান, রিকশা বা ঠেলাগাড়ির মতো গরুর গাড়িও ছিল একটি পরিবেশ বান্ধব যান। এতে কোনো জ্বালানি খরচ নেই। তেল, গ্যাস, বিদ্যুৎ ছাড়া চলা বাহনে, নেই কোনো শব্দ দূষণও। গরুর গাড়ি ধীর গতিতে চলে বলে তেমন কোনো দুর্ঘটনাও ঘটে না। কিন্তু যুগের পরিবর্তনে আমাদের প্রিয় এই গরুর গাড়ি প্রচলন আজ হারিয়ে যাচ্ছে। গরুর গাড়ি সংরক্ষণ না করলে ভবিষ্যত প্রজন্ম শুধু বইতে পাবে কিন্তু বাস্তবে আর দেখা যাবে না।
গলাচিপা, পটুয়াখালী।
Leave a Reply