সোমবার, ১৩ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:১৮ পূর্বাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ বছরের চাকা ঘুরে আর সড়কে মৃত্যুর সংখ্যা না কমে উল্টো বাড়ছে। সারাদেশের মতো ঠাকুরগাঁও জেলার চিত্র প্রায় একই। উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের রংপুর বিভাগের অত্যন্ত ব্যস্ততম জেলা ঠাকুরগাঁও। দেশের শেষ প্রান্ত পঞ্চগড়ের বাংলাবান্ধা স্থলবন্দর চালুর পরই বেশি ব্যস্ত হয়ে উঠেছে ঠাকুরগাঁও-দিনাজপুর-রংপুর মহাসড়ক।
প্রতিদিন পণ্যবাহী শত শত ট্রাক, যাত্রীবাহী বাস-কোচসহ বিভিন্ন যানবাহন চলাচল করছে ব্যস্ততম মহাসড়কে। আর সেই সঙ্গে ঠাকুরগাঁয় জেলায় আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে সড়ক দুর্ঘটনা। পুলিশ প্রশাসন, ফায়ার সার্ভিস ও হাসপাতাল থেকে প্রাপ্ত পরিসংখ্যান বলছে, গত বছর এ জেলায় সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন ২৫ জন। আর আহতের সংখ্যা কমপক্ষে চার হাজার। আবার আহতদের মধ্যে কারো কারো স্বাভাবিক জীবন কেড়ে নিয়েছে পঙ্গুত্ব।
ঠাকুরগাঁও সদর হাসপাতালের আবাসিক মেডিকেল অফিসার মো. রকিবুল আলম বলেন, প্রতিদিনই সড়ক দুর্ঘটনায় আহতদের চিকিৎসা দিতে হচ্ছে। আশঙ্কাজনক হলে রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়া হয়। দুর্ঘটনায় আহতদের সঙ্গে মাঝে মধ্যে লাশও হাসপাতালে আসে। তিনি বলেন, দুর্ঘটনা কোনভাবেই কমিয়ে আনা যাচ্ছে না। কার আগে কে যাবে সে প্রতিযোগিতা করতে গিয়ে ওভারটেকিং ও ওভার স্প্রিড স্বাভাবিক নিয়ম হয়ে গেছে। অপরদিকে পণ্যবাহী ট্রাকের ওভার লোডিংয়ের কারণেও সড়ক-মহাসড়কে ঘটছে দুর্ঘটনা।
এদিকে জেলা ফায়ার সার্ভিস, পুলিশ প্রশাসনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, সড়কে অব্যবস্থাপনা, অসচেতনা এবং বেপরোয়া ভাবে গাড়ি চালানোর কারণে প্রতিনিয়ত ঠাকুরগাঁওয়ে সড়ক দুর্ঘটনা ঘটছে। এর বাইরে দুর্ঘটনার কারণ হচ্ছে ফিটনেসবিহীন যানবাহন এবং জাল লাইসেন্স নিয়ে গাড়ি চালানো। তবে পুলিশ বলছে, মহাসড়কে ফিটনেসবিহীন যানবাহন চলাচল বন্ধে অভিযান পরিচালনা করা হয়। তারপরও এসব যানবাহন চলাচল থেমে নেই।
ঢাকায় নিয়মিত যাতায়াত করেন ঠাকুরগাঁওয়ের একজন কাপড় ব্যবসায়ী জানান, মাঝে মধ্যে মনে হয় গাড়িতে বসে হাওয়ায় ওড়ছি। আল্লাহর দরবারে দু’হাতে তুলে নির্বাক হয়ে বসে থাকা ছাড়া কিছুই করার থাকেনা। এদিকে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হানিফ পরিবহনের একজন চালক জানান, সংসার আছে বলেই বাড়তি আয়ের জন্য দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছার চেষ্টা করি। না ঘুমিয়ে ফিরতি বাস নিয়ে ফেরার তাড়া থাকে।
বিআরটিএ এর সহকারি পরিচালক উওম কুমার জানান, জেলায় প্রতিমাসে ৮০০ থেকে এক হাজার লাইসেন্সের আবেদন জমা পড়ে। পরীক্ষা নিয়েই লাইসেন্স প্রদান করা হয়। সড়কে দুর্ঘটনার বিষয়ে জেলা প্রশাসক ড. একে এম কামরুজ্জামান বলেন, বিভিন্ন ধরনের জনসচেতনতামূলক আলোচনাসহ নিয়মিত মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে। মহাসড়কের দুই পাশ কিছুটা বাড়নোসহ রোড ডিভাইডার স্থাপন করা হয়েছে। তিনি মনে করেন অতীতের চেয়ে সড়ক দুর্ঘটনা কিছুটা কমে এসেছে।
এদিকে সড়কে প্রাণহানীর কারণে উদ্বেগ উৎকন্ঠায় রয়েছেন স্থানীয় জনগণ। বিশেষ করে সকাল-সন্ধ্যায় অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটছে। জেলার বিশিষ্টজনরা বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা কমিয়ে আনতে হলে দূরত্ব অনুযায়ী ট্রাক-বাসে চালকের সংখ্যা দুইজন নিয়োগ দিতে হবে। আর তা করা না হলে দুর্ঘটনার লাগাম কোনোভাবেই টেনে ধরা যাবে না।
Leave a Reply