বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ০৫:০৬ পূর্বাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ বিয়ে করেই কাতার চলে যায় স্বামী। কথা ছিল এবার দেশে এসেই প্রিয় স্ত্রীকে ঘরে তুলে নেবেন। কিন্তু মানুষরূপী তিন নরপিশাচের বলি হয়ে চিরতরে চলে গেলেন গৃহবধূ রাবেয়া। বধূ হিসেবে স্বামীর বাড়ি আর যাওয়া হলো না তার। প্রকাশ্য দিবালোকে নিজ ঘরে তাকে ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়।
কুমিল্লার নাঙ্গলকোটে চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। হত্যাকারীদের মধ্যে দুই যুবক ঘরে ঢুকে এবং মধ্য বয়সী অন্যএ কজন ঘরের দরজায় পাহারা দিয়ে রাবেয়া আক্তারকে ধর্ষণের পর হত্যা করে।
রোববার বেলা ১১টার দিকে নাঙ্গলকোট উপজেলার জোড্ডা পশ্চিম ইউপির মান্দ্রা পূর্বপাড়া গ্রামে ঘটনাটি ঘটে। নিহত রাবেয়া আক্তার মান্দ্রা গ্রামের আলী মিয়ার ছোট মেয়ে। দিনভর বৃষ্টি থাকায় সন্ধ্যার দিকে ঘটনাটি প্রকাশ পায়। খবর পেয়ে পুলিশের চৌদ্দগ্রাম সার্কেলের সিনিয়র এএসপি সাইফুল ইসলাম, সিআইডি, পিবিআই, ডিবি এবং নাঙ্গলকোট থানা পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান।
সোমবার সকালে রাবেয়া আক্তারের বাবা আলী মিয়া চারজনের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাতনামা আরো তিন থেকে চারজনকে জনকে আসামি করে থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে হত্যা মামলা দায়ের করেন।
রোববার রাতে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়েছে। স্থানীয় ও মামলা সূত্রে জানা যায়, উপজেলার জোড্ডা পশ্চিম ইউপির মান্দ্রা পূর্বপাড়া গ্রামের আলী মিয়ার স্ত্রী জাহানারা বেগম রোববার বেলা ১১টার দিকে বাজার করতে স্থানীয় মান্দ্রা বাজারে যান। এ সুযোগে মোটরসাইকেলযোগে তিনজন লোক তাদের বাড়িতে প্রবেশ করে। তাদের মধ্যে দুই যুবক ঘরে ঢুকে ও একজন মধ্যবয়সী লোক ঘরের দরজায় পাহারায় থাকে। ওই সময় রাবেয়া আক্তারের বৃদ্ধ নানি জামিলা খাতুন (৭২) ঘরের বাইরে তরকারি কাটছিলেন।
পরে দুই যুবক ঘরের ভেতরে থাকা রাবেয়াকে ধর্ষণের পর গলা টিপে শ্বাসরোধ করে হত্যা করে বীরদর্পে বাড়ি থেকে চলে যায়। পরবর্তীতে দপুর ১২টার দিকে রাবেয়া আক্তারের মা জাহানারা বেগম মান্দ্রা বাজার থেকে বাড়ি ফিরে মা জামিলা খাতুনের কাছে মেয়ে রাবেয়া কোথায় জানতে চান?
এ সময় জামিলা খাতুন তার মেয়েকে বলেন, মোটরসাইকেলযোগে সম্ভবত ব্যাংকের তিনজন লোক এসেছে। রাবেয়া তাদের সঙ্গে ঘরের ভেতর কথা বলছে। বিষয়টি নিশ্চিত হতে সঙ্গে সঙ্গে জাহানারা বেগম ঘরে গিয়ে মেঝেতে মেয়ে রাবেয়া আক্তারের নিথর দেহ পড়ে থাকতে দেখেন। পরে তার কান্নাকাটিতে প্রতিবেশীসহ এলাকাবাসী জড়ো হয়।
খবর পেয়ে পুলিশের চৌদ্দগ্রাম সার্কেল সিনিয়র এএসপি সাইফুল ইসলাম, সিআইডি, পিবিআই এর স্পেশাল ক্রাইম সিন ম্যানেজমেন্ট টিম, ডিবির এলআই টিম এবং নাঙ্গলকোট থানা পুলিশের সদস্যরা ঘটনাস্থলে ছুটে যান।
দুই বছর আগে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের নুরপুর গ্রামের মাসুদ মজুমদারের ছেলে কাতার প্রবাসী মেহেদী হাছানের সঙ্গে রাবেয়ার বিয়ে হয়। আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো রাবেয়াকে শ্বশুর বাড়িতে তুলে না নেয়ায় সে বাবার বাড়িতে অবস্থান করেন।
রাবেয়ার মা জাহানারা বেগম বলেন, আমার মেয়ের সঙ্গে একই গ্রামের আবুল কালাম ও তার ভাই লিটনের বিরোধ চলে আসছিল। তারা বিভিন্ন সময়ে মেয়েকে হত্যার হুমকি দেয়। যা নিয়ে এলাকায় একাধিকবার সালিস বৈঠক হয়। আমার মেয়ের হত্যার সঙ্গে তারা জড়িত থাকতে পারে।
মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা থানা পুলিশ পরিদর্শক আশ্রাফুল ইসলাম বলেন, রাবেয়ার লাশ ময়নাতদন্তের জন্য কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। তার গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তাকে হত্যার ঘটনায় তার বাবা বাদী হয়ে এজহারনামীয় চারজনসহ অজ্ঞাতনামা তিন থেকে চারজনকে আসামি করে থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে হত্যা মামলা দায়ের করেছেন।
Leave a Reply