রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৪:২৪ পূর্বাহ্ন
স্টাফ রিপোর্টার ॥ স্বর্ণ প্রতারক চক্রের কথা বরিশালের কারো অজানা নয়। যার শুরুটা হয়েছিলো কাউনিয়ার কুখ্যাত স্বর্ন প্রতারক শাবানা শাহিন দম্পতির হাত ধরে। তবে ভাগভাটোয়ারা দ্বন্দ্বে তাদের ব্যবসায় ফাটল ধরে এবং এক পর্যায় ওই প্রতারক দম্পত্তি স্বর্ণ রেখে মাদক ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। পরবর্তীতে যার হালধরে শাহিনের এক সময়ের শিষ্য কুখ্যাত স্বর্ণ প্রতারক কাওসার ওরফে সোনা কাওসার। গড়ে তোলে বিশাল প্রতারক চক্র। দীর্ঘদিন এই স্বর্ন প্রতারক চক্রের উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন নগরীতে আসা সাধারন মানুষ। কেউবা নিজের সহায় সম্বল বিক্রি করে বেঁচে থাকার জন্য নগরীতে চিকিৎসা করাতে এসে এই প্রতারক চক্রের ফাঁদে পড়ে হয়েছেন নিঃস্ব। ফলে প্রশাসনও নড়েচড়ে বসেন। ফলাফলও আসে আশানুরূপ। আইনশৃংখলা বাহিনীর অভিযানে এই প্রতারক চক্রের একাধিক সদস্য ধরা পড়লেও আইনের ফাঁক ফোকড় গলে পুনরায় বেড়িয়ে এসে বীরদর্পে চালিয়ে যায় তাদের প্রতারণা। তবে এই প্রতারক চক্রের গতিবিধির প্রতি লক্ষ্য রেখে অনুসন্ধানে বেড়িয়ে আসে এদের নকল সোনা তৈরীর আসল ঠিকানা। প্রতারক চক্রের এক সদস্যর স্বীকারোক্তিতে বেরিয়ে আসে বরিশাল নগরীর নথুল্লাবাদ হোসাইনিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন গণি স্বর্ণশিল্পালয় নামক জুয়েলার্সের নাম। ভুক্তভোগীদের অভিমত এই সোনা তৈরীর ঠিকানায় আইন শৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান চালালেই বেরিয়ে আসবে থলের বিড়াল এবং ধরা পড়বে স্বর্ন প্রতারক চক্রের মূল হোতাদের নাম। আর এদের নিয়ন্ত্রণ করা গেলেই রক্ষা পাবে সাধারণ মানুষ।
ভুক্তভোগী ও স্থানীয় সুত্রে জানা য়ায়, নগরীর কাউনিয়ায় দীর্ঘদিন যাবত নকল সোনা দিয়ে মানুষকে প্রতারনার ফাঁদে ফেলে নিস্বঃ করে চলছে একটি প্রতারক চক্র। চক্রের হোতা কাওছার ওরফে সোনা কাওছার আইন শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে ধরা পড়ে কারাগারে রয়েছে। ফলে বর্তমানে এই প্রতারক চক্রের নেতৃত্ব দিচ্ছে মফিজ ওরফে মজনুসহ কমপক্ষে ৭/৮ জনের একটি দল। স্থানীয়রা আরো জানায় প্রশাসনের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তার সাথে সখ্যতা গড়ে তুলে তাদের এই প্রতারণা চালিয়ে যাচ্ছে চক্রটি। অবশ্য এক্ষেত্রে অনেক সময় ওয়ারেন্ট বা তালিকাভুক্ত কিছু আসামী ধরতে মাঝে মাঝে প্রশাসনকে সহযোগিতা করে তারা। আর স্থানীয়রা তাদের এই প্রতারণা কাজে বাধা দিলে নিজেদের আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সোর্স পরিচয় দিয়ে তাদেরকে হেনস্থা করারও হুমকি দেয় প্রতারক চক্রটি।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, এই প্রতারক চক্রের সদস্যরা নথুল্লাবাদ কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল এলাকায় রিক্সাচালকবেশে অপেক্ষা করে। নিজেদের টার্গেট অনুযায়ী লোক না হলে তারা উল্টো-পাল্টা ভাড়া দাবী করে। ২০ টাকার ভাড়ার স্থলে তারা একশ’ টাকা ভাড়া চায়। নগরীতে আসা নতুন লোক হলে তারা এত বেশি ভাড়া হলেও রিক্সায় উঠে। এরপর ওই প্রতারক রিক্সাচালক যাত্রীর গন্তব্যে না গিয়ে নথুল্লাবাদ খালপাড় সড়কে ঢুকে পড়ে। সুযোগ বুঝে প্রতারক চক্রের অপর সদস্যরা নকল সোনা রাস্তায় ফেলে রেখে ফাঁদে ফেলে যাত্রীদের। সহজ-সরল মানুষগুলোও লোভে পড়ে নকল সোনা নিয়েই হয়ে যায় নিঃস্ব। এত নকল সোনা কোত্থেকে আসে তা সঠিকভাবে বলা না গেলেও ওই প্রতারক চক্রের এক সদস্যর সরল স্বীকারোক্তিতে বেরিয়ে আসে নকল সোনা তৈরীর আসল ঠিকানা। নগরীর নথুল্লাবাদ হোসাইনিয়া মাদ্রাসা সংলগ্ন গনি স্বর্ণ শিল্পালয় নামক জুয়েলার্সের মালিক গনির মাধ্যমে এই প্রতারক চক্রের হোতা মফিজ ওরফে মজনু নকল সোনা তৈরী করিয়ে আনে।
ওই সূত্র ধরে খোঁজ-খবর নিয়ে জানা যায়, জিয়া সড়ক এলাকার বাসিন্দা গনি এক সময় নগরীর কাটপট্টি এলাকার একটি জুয়েলারী দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করতো। সেখান থেকেই প্রতারক কাওছারের সাথে পরিচয় হয় গনির। রাতারাতি ধনী হওয়ার লোভে পেয়ে বসে তাকে। তার সাথে যুক্ত হয় কাজীপাড়া এলাকার সবুজ। দু’জনে মিলে স্বর্ণ প্রতারনা ব্যবসার জন্য নথুল্লাবাদে গনি স্বর্ণ শিল্পালয় নামক জুয়েলার্সের দোকান দেয়। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ওই জুয়েলারীতে বসেই নকল সোনা তৈরীর পাশাপাশি জুয়ার আসর বসে প্রতিদিন। আর জুয়ারীদের কাছ থেকে স্বর্ণের চেইন, আংটি ইত্যাদি প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়ে নেয় গনি ও সবুজ। এগুলো শো করেই জুয়েলারী ব্যবসা চালায় তারা।
এ সব অভিযোগের ব্যাপারে গনির সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে তিনি ব্যস্ত রয়েছে জানিয়ে বলেন, ভাইজান আমি আপনার সাথে পরে দেখা করবো।
Leave a Reply