বৃহস্পতিবার, ২৮ নভেম্বর ২০২৪, ০২:৩৪ অপরাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক॥ ফরিদার স্বামী আনোয়ার হোসেন ব্যবসার কাজে বাইরে থাকেন। সকালে বেরিয়ে ফেরেন বিকেলে, আবার সন্ধ্যায় বের হয়ে গেলে ফেরেন মাঝরাতে। হঠাৎ একদিন দুপুরে বাসায় ফিরে স্ত্রী ফরিদার রুমে দেখতে পান স্থানীয় মুদি দোকানি মনিরকে।
আনোয়ারকে দেখেই বের হয়ে যায় মনির। তখনও বিছানা-ফরিদার পরনের কাপড় এলোমেলো। এর চেয়েও ভয়ঙ্কর বিষয় কনডমের ছেঁড়া প্যাকেট পড়েছিল বালিশের কাছেই। তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তা দেখছিলেন আনোয়ার। কিন্তু কোনো কথা বলেননি। নিরবে পাশের রুমে গিয়ে টিভি দেখছিলেন।
দিন যাচ্ছিলো আর ফরিদার জন্য অপেক্ষা করছিলো চমকের পর চমক। এক পর্যায়ে মনিরের সঙ্গে স্বাধীনভাবে মেলামেশার সুযোগ করে দেন স্বামী আনোয়ার হোসেন নিজেই। ঘটনাটি পুরান ঢাকার। শেষ পর্যন্ত আনোয়ার-ফরিদার কবল থেকে রক্ষা পেতে পালিয়ে যান মনির। সামাজিকতার কথা ভেবে বিষয়টি মামলা পর্যন্ত না গেলেও গড়িয়েছে থানা-পুলিশে। একটি সাধারণ ডায়রি করেছেন মনির।
মনিরের বাড়ি কিশোরগঞ্জে। পুরান ঢাকায় বড় বোনের বাড়িতে থাকেন। ভগ্নিপতির একটি মুদি দোকান রয়েছে লালবাগে। দুই কর্মচারীসহ ওই দোকানটি পরিচালনা করেন তিনি। ভগ্নিপতি গাড়ির ব্যবসা করেন। মাঝে-মধ্যে দোকানে পা রাখেন। দোকানে প্রতিদিন অনেক নারী-পুরুষের সঙ্গে কথা হয়, পরিচয় হয়। এরমধ্যেই এক নারীর সঙ্গে কথা বলতে বলতে চরম ভালোলাগার সৃষ্টি হয় একুশ বছর বয়সী মনিরের। ফর্সা, সুন্দর, সদা হাস্যোজ্জ্বল মুখের পয়ত্রিশ বছর উর্ধ্ব ওই নারীর নাম ফরিদা।
প্রথমে কেনাকাটা করতে এলে শুধু এই সংক্রান্ত কথাই হতো। তা সর্বোচ্চ দুই-এক মিনিট। তারপর ধীরে ধীরে ব্যক্তিগত বিষয়ে নানা জিজ্ঞাসা। কোথায় থাকেন, পরিবারে কে কে আছে, লেখাপড়া কোথায় করেছেন.. এরকম নানা জিজ্ঞাসা ওই নারীর। মনিরও জানতে চান ব্যক্তিগত নানা বিষয়। ফরিদা জানান, দোকানে বসে এতো কথা বলা ঠিক না। বাইরে কোথাও বসবেন। যেই কথা সেই কাজ। আবেগ প্রবণ মনির ফোন নম্বর আদান-প্রদান করেন। এভাবেই সম্পর্কের সূত্রপাত।
এক বিকালে দেখা হয় দু’জনের। পাশের একটি রেস্টুরেন্টে বসে কথা বলেন দীর্ঘ সময়। ফরিদা তার চাপা কষ্টের কথা বলেন। বিয়ে হয়েছে অনেক বছর। সংসারে কোনো সুখ নেই। স্বামী আনোয়ার বিয়ের আগে কাপড়ের ব্যবসা করতেন। ওই সময় থেকেই বন্ধুদের সঙ্গে গাঁজা সেবন করতেন আনোয়ার। অবশ্য বিয়ের আগে তা জানতেন না ফরিদা। বিয়ের পর জানতে পারেন শুধু গাঁজা না, মরণনেশা ইয়াবাতেও আসক্তি আছে তার।
জানার পর বাধা দেন ফরিদা। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি। ইয়াবা সেবনের কারণে সারারাত নির্ঘুম কাটাতে পারেন। দীর্ঘ সময় শারীরিক সম্পর্ক করতে পারতেন আনোয়ার। কিন্তু এ মেয়াদ দ্রুত ফুরিয়ে যায় বলেছিলেন চিকিৎসকরা। শরীরে কিছুই থাকে না। পুরোপুরি অক্ষম। অনোয়ারকে চিকিৎসকের কাছে নিয়ে যাওয়ার পরই বিষয়টি বুঝতে পারেন। কিন্তু ইয়াবা থেকে ফেরানো সম্ভব হচ্ছিলো না তাকে। মরণনেশা ইয়াবাতেই ডুবে রয়েছেন আনোয়ার। ব্যবসাও লাটে ওঠেছে। জমি বিক্রি করে চলতে হচ্ছে এখন। ভেবেছেন সংসার ছেড়ে চলে যাবেন ফরিদা। কিন্তু স্কুল পড়–য়া ছেলে সন্তানটির দিকে তাকিয়ে মাদকাসক্ত স্বামীর সংসারই করছেন। তাছাড়া সমাজও বিচ্ছেদটাকে ভালো চোখে দেখে না।
ফরিদারও জীবন আছে। যৌবন আছে। এখন তার একজন বন্ধু দরকার। অকপটে কথাগুলো মনিরকে বলেন তিনি। মনির বিষয়টি বুঝতে পেরে সেভাবেই সাড়া দেন। ছেলে স্কুলে-স্বামী বাইরে, তখনই মনিরকে বাসায় ডাকেন ফরিদা। একান্তে সময় কাটান দুইজন। সরু গলি দিয়ে ছয়তলা বাড়ির নিচ তলার ফ্ল্যাট। ফরিদার চেয়ে বয়সে অনেক ছোট ছেলেকে দেখে কেউ কিছু মনে করে না। অনেকটা স্বাধীনভাবেই আসা-যাওয়া করেন মনির।
মনিরের ভগ্নিপতি নাম-পরিচয় গোপন রাখার শর্তে জানান, তার অজান্তে দোকান থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ফরিদার বাসায় পৌঁছে দিতেন মনির। সেই হিসেব ছিলো না কোথাও। বিষয়টি জানতে পারেন বেশ পরে।
সাধারণত সকালে বাসা থেকে বের হয়ে বিকাল ৫টার দিকে বাসায় ফিরতেন ফরিদার স্বামী আনোয়ার। আবার বাসা থেকে বের হতেন সন্ধ্যায়। ফিরতেন গভীর রাতে। হঠাৎ এক দুপুরে বাসায় ফেরেন আনোয়ার। মনির তখন ফরিদার কক্ষে। ঘনিষ্ঠ মুহূর্তে দু’জন। কলিংবেলের শব্দ শুনে হতভম্ব ফরিদা। এই সময়ে আবার কে এলো। সাধারণত ফোন না দিয়ে বাইরের কেউ বাসায় আসে না। ধাক্কা দিয়ে মনিরকে সরিয়ে দরজার কাছে যান ফরিদা। ভেতর থেকে দেখতে পান বাইরে দাঁড়িয়ে আনোয়ার। দ্রুত স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করেন।
সময় ক্ষেপণ করলে আনোয়ার ভীষণ রেগে যাবেন। দরজা খুলে দেন। মনিরকে দেখতে পান শার্টের বোতাম লাগাচ্ছেন। তারপর দ্রুত বের হয়ে যান। ফরিদার চুল, শাড়ি, বিছানা এলোমেলো। বালিশের পাশে কনডমের ছেঁড়া প্যাকেট। তারপরও স্বাভাবিক আনোয়ার। পাশের রুমে বসে টিভি দেখছিলেন। রাতে ফরিদাকে কাছে টেনে জানান, তিনি যেহেতু অক্ষম। ফরিদার বন্ধু হিসেবে ওই ছেলেটা ভালোই হবে। স্বাধীনভাবে বাসায় তাকে ডেকে আনতে বলেন। রাতে-দিনে। স্বামী আনোয়ার হোসেনের কোনো আপত্তি নেই তাতে। তবে বাইরের কেউ যেনো না জানে। এজন্য যা হবে বাসাতেই। বিস্ময়ের শেষ নেই ফরিদার।
এরপর দিনের পর দিন স্বামীর সহযোগিতায় নিজ বাসাতেই পরকীয়া প্রেমিকের সঙ্গে মিলিত হতেন ফরিদা। পাশের রুমে বসে থাকতেন আনোয়ার। মনির ভেবে কূল পান না, এটা কিভাবে সম্ভব। কয়েক দিনের মধ্যেই বিষয়টি পরিস্কার হয়। মনিরের কাছে আনোয়ার দাবি করেন পাঁচ লাখ টাকা। ইতিমধ্যে গোপন ক্যামেরায় ফরিদার সঙ্গে অন্তরঙ্গ মুহূর্তের ভিডিও ধারণ করেছেন তিনি। টাকা না পেলে বউকে দিয়ে ধর্ষণ মামলা দেবেন। প্রয়োজনে ভিডিওগুলো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল করে দেবেন। একই সুরে কথা বলেন ফরিদাও। আনোয়ার তাকে আগেই বুঝিয়েছেন। দরকার টাকা। এক মনির গেলে আরেক মনির আসবে। মনিরের অভাব নেই।
ভগ্নিপতিকে না জানিয়ে কয়েক দফায় এক লাখ টাকা দেন মনির। এরপর দোকানের বেহাল অবস্থা দেখে নজর দেন ভগ্নিপতি। জানতে পারেন নেপথ্যের কাহিনী। এরই মধ্যে হুমকি দিতে থাকেন আনোয়ার। এক পর্যায়ে দোকান ছাড়েন মনির। এমনকি ঢাকা ছেড়ে চলে যান গ্রামের বাড়িতে। একটি জিডি করেন। শেষ পর্যন্ত স্থানীয় এক নেতার মাধ্যমে বিষয়টির সমাধান হয় বলে জানান মনিরের ভগ্নিপতি।
Leave a Reply