রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ১২:১১ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক:বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দুই চিকিৎসকের মেয়েকে ভর্তি করতে ৩৩ লাখ টাকা ঘুষ নেয়া ও এমএলএসএস পদে থেকে স্টোর কিপারের বেতন নেয়া সেই জাহাঙ্গীর হোসেনের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্ত করতে বরিশাল সিভিল সার্জনকে তদন্তকারী কর্মকর্তা হিসেবে নিয়োগ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।
এছাড়া তদন্ত কর্মকর্তা অভিযুক্ত স্টোর কিপার জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে অভিযোগ সমূহের তদন্তপূর্বক প্রতিবেদন ১৫ কর্মদিবসের মধ্যে দাখিল করার জন্য বলা হয়েছে। গত ১৬ জানুয়ারী স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (প্রশাসন) ডা. আবুল কালাম আজাদ স্বাক্ষরিত এক স্মারকাদেশ সিভিল সার্জন কার্যালয়ে প্রেরণ করেন।
এছাড়া কলেজ অধ্যক্ষ, সিভিল সার্জন কার্যালয়ের মেডিকেল অফিসারের নিকট অনুলিপি প্রেরণ করা হয়েছে। ২০১৮ সালের ৯ ডিসেম্বর নিউজ পোর্টাল ভয়েস অব বরিশাল অনলাইন নিউজ পোর্টালে তার বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশিত হয়। পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশের পরপরই শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মাকসুমুল হক জাহাঙ্গীরকে তাৎক্ষনিক স্টোর কিপার থেকে ফিজিওলজি বিভাগে বদলী করেন। একই সাথে তার বেতন-ভাতাদিও বন্ধ করে দেয়া হয়।
এদিকে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে সিভিল সার্জন কার্যালয়ে জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে অভিযোগ তদন্তের চিঠি আসলে সে বিভিন্ন স্থানে তদবির চালাচ্ছে বলে জানা গেছে। কলেজ অধ্যক্ষ ডা. মাকসুমুল হক জানান, জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে সংবাদ প্রকাশের পরপরই আমরা তাৎক্ষনিক তাকে সেখান থেকে অন্যত্র সড়িয়ে দিয়েছি ও তার বেতন ভাতাদিও বন্ধসহ স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে অবগত করেছি। উল্লেখ্য শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে দুই চিকিৎসকের মেয়েকে ভর্তি করতে ৩৩ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ উঠে কলেজটির চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী (এমএলএসএস) জাহাঙ্গীর হোসেনের বিরুদ্ধে।
কিন্তু দুই শিক্ষার্থী ভর্তি হতে ব্যর্থ হওয়ায় এখন ওই টাকা ফেরত দিতে টালবাহানা করছেন জাহাঙ্গীর। এছাড়া এমএলএসএস হিসেবে কর্মরত থাকলেও তিনি স্টোরকিপার পদের বেতন নিচ্ছেন বলেও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে। ভুক্তভোগী শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কর্মরত দুই চিকিৎসক অভিযোগ করেন, তাদের দুই মেয়েকে মেডিক্যাল কলেজে চান্স পাইয়ে দিতে স্টোরকিপার জাহাঙ্গীর ৪০ লাখ টাকা দাবি করেন।
এর মধ্যে শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজের সহকারী অধ্যাপকের কাছ থেকে ১৩ লাখ ও মেডিক্যালের সহকারী পরিচালকের (প্রশাসন) কাছ থেকে ২০ লাখ টাকা করে মোট ৩৩ লাখ টাকা ঘুষ নেয় জাহাঙ্গীর। সহকারী অধ্যাপকের সুপারিশ থাকায় তাদের কাছ থেকে ৭ লাখ টাকা কম নেওয়া হয়। কিন্তু গত বছর এমবিবিএস পরীক্ষায় তাদের দুই মেয়ে একজনও পাস করতে পারেননি। অথচ পরীক্ষার আগে টাকা নেওয়ার সময় জাহাঙ্গীর শতভাগ নিশ্চয়তা দিয়েছিলেন।
ওই দুই চিকিৎসক আরও অভিযোগ করেন, টাকার বিনিময়ে এক চিকিৎসকের মেয়েকে জাহাঙ্গীর চান্স পাইয়ে দেওয়ার বিষয়টি তারা জানতে পারেন। তাই তার ওপর তাদের বিশ্বাস জন্মে। শের-ই-বাংলা মেডিক্যাল কলেজের প্রশাসনিক বিভাগ সূত্র থেকে জানা গেছে, জাহাঙ্গীর দীর্ঘদিন ধরে মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হওয়ার সুযোগের কথা বলে টাকা আদায় করছে।
তবে গত দুই বছর ধরে কড়াকড়ি থাকায় জাহাঙ্গীর তা করতে ব্যর্থ হয়ে। সূত্রে জানা গেছে, জাহাঙ্গীর স্টোরকিপার পদে থাকায় তাকে কলেজের ছাত্র শাখায় অফিস সহকারী হিসেবে কাজ করার অনুমতি দেয় কর্তৃপক্ষ।
সেই সুবাদে ছাত্রদের ভর্তি, যাবতীয় পরীক্ষার ফরম ফিলাপ, মাইগ্রেশনসহ সব ধরনের অফিসিয়াল গোপনীয় কাজকর্ম করার সুযোগ পায় সে।
এর মাধ্যমে ছাত্র-ছাত্রীদের মৌখিক ও প্রাকটিক্যাল পরীক্ষার রেজাল্ট শিটে নম্বর টেম্পারিং করে ফেল করা ছাত্রকে পাস করিয়ে দেওয়া, পাস করা ছাত্র-ছাত্রীদের ট্রান্সক্রিপ্ট দেওয়ার নামে অতিরিক্ত টাকা আদায় করার অভিযোগ পাওয়া যায় জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে।
এরপর বিষয়টি বিভিন্ন পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত হওয়ার তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। ওই সময়ে কমিটির কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে সুকৌশলে মুক্তি পায় জাহাঙ্গীর। ওই সূত্রটি আরও জানায়, জাহাঙ্গীর এমএলএসএস পদে নিয়োগ পাওয়ার এক বছরের মধ্যে স্টোরকিপারের দায়িত্ব পান। কিন্তু ওই পদের বিপরীতে কোনও কাগজপত্র নেই জাহাঙ্গীরের।
জাহাঙ্গীর হোসেন ওই দুই চিকিৎসকের দুই মেয়েকে মেডিক্যালে ভর্তির জন্য ৩৩ লাখ টাকা নেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। তিনি এ বিষয়ে এবারের মতো ক্ষমা প্রার্থনা করেন। এ বিষয়ে সিভিল সার্জন ডা. মনোয়ার হোসেন বলেন, জাহাঙ্গীরের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের একটি চিঠি পেয়েছি। আমরা তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা নিব।
Leave a Reply