বুধবার, ১৫ জানুয়ারী ২০২৫, ০৭:১৮ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক:- বরিশাল জেলার মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলাধীন শ্রীপুর ইউনিয়নের বাহেরচর গ্রামের তিন সন্তানের জননীকে যৌতুক দাবিতে পুড়িয়ে হত্যার চেষ্টা মামলার আসামীদের বিরুদ্ধে হাইকোর্টের ওয়ারেন্ট থাকা সত্ত্বেও ২লাখ টাকা ঘুষ বিনিময়ে পুলিশের অব্যাহতি চেয়ে আদালতে আবেদন করেছেন পুলিশ।
বাদীর বিরুদ্ধে ১৭ ধারায় মামলা রুজু করার প্রস্তুতি সম্পন্ন করায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের আবেদন করে বাদী জাহানারা বেগম।আদালতের বিচারক মামলার বাদীর আবেদন মঞ্জুর করে আদেশের জন্য আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ধার্য করেন।স্হানীয় বাসিন্দা-প্রত্যাক্ষদর্শী স্বাক্ষী-পুলিশ ও মামলার ইজাহারের অভিযোগের ভিত্তিতে আদালতের জিআরও শ্রী সুবল জানিয়েছেন,চলতি বছরের ২৯ এপ্রিল ২০১৯ গভীররাতে অনুমান দেড়টায় বাদী জাহানারা বেগম প্রতিবেশীর ডাকে সাড়া দিয়ে তার বসত ঘরের পেছনের দরজা খুলে বের হলে বাদীর স্বামী সুলতান হাওলাদার ও তার সহযোগী বন্ধু সোহেল বয়াতি,গিয়াস শরীফ জাহানারাকে ঝাপটিয়ে ধরেছে।জাহানারা ডাক-চিৎকার দিলে জাহাঙ্গীর নাইয়া,মাইদুল বয়াতী মুখ চেপে ধরে গামছা দিয়ে মুখ বেঁধে ফেলেছে।
আনোয়ার হোসেন রাড়ী,কাজী আবু তালেব কোলে তুলে ঝাগাইয়া পাকের ঘরের পিছনে জঙ্গলে নিয়ে যায়।শাজাহান শরীফ বেঁতের লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মারার নির্দেশ দেন।বাবুল হাওলাদার বর্নিত আসামীদের পুড়িয়ে হত্যার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন,মামলা করার সাধ মেটাতে পারছে না।শরীরের সব ব্লেড দিয়ে কেঁচো,তারপর সারা শরীরের আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দাও।সুলতান হাওলাদারের বড়ভাই বাবুলের হুকুমে সুলতান হাওলাদার,সোহেল বয়াতি,গিয়াস শরীফ,জাহাঙ্গীর নাইয়া জাহানারার শরীরের বিভিন্ন স্থানে সিগারেট ছ্যাঁকা দিয়েছে।
এমনকি লজ্জা স্থানেও সিগারেটের ছ্যাঁকা দিয়ে বলেন,আর কখনও কামড়ানো থাকবে না।সোহেল বয়াতি ও গিয়াস শরীফকে জাহানারাকে ব্লেড দিয়ে বুকের স্তনে ও যৌনাঙ্গে সহ সর্বশরীরে কেঁচে ক্ষত-বিক্ষত করে রক্তক্ষয়ী জখম করেছে।
অতঃপর সুলতান হাওলাদার জাহানারা বেগমের বুকে প্যাড়া দিয়ে বলেছেন,জনমের মতো খোরপোষন দিয়ে যাবো।এখনি তোরে পেট্রোল দিয়ে পুড়িয়ে হত্যা করবো।শাজাহান শরীফ বলেছেন এতো সময় পার করিছ না,বোকারা পোড়াইয়া মারলে মামলা হবে।গলায় রশি দিয়ে গাছের সাথে ঝুলিয়ে রাখো।তাহলেই আত্মহত্যা বলে চালিয়ে দেয়া যাবে। জাহানারা এই কথা শুনে জোরপূর্বক ডাক দেয়ার চেষ্টা করেছিলেন। তার মা শাহানুর গোংরানীর শব্দ শুনে তাড়াতাড়ি বাহির হলে অভিযুক্তরা ছেড়ে পালিয়ে যায়।
পরে শ্রীপুর ক্যাম্পের পুলিশকে খবর দিলে পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই মোঃ হুমায়ূন কবীর এসে উপস্থিত হয়ে আলামত জব্দ করেছে। দ্রুত চিকিৎসা সেবা প্রদানের লক্ষ্যে নিজেই স্প্রিডবোডের ড্রাইভারকে ফোন করেছেন।স্প্রিডবোডযোগে বরিশাল শেরে- ই বাংলা মেডিকেল কলেজ(শেবাচিম) হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়। বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালের জরুরী বিভাগে ভর্তি করা হয়েছে।পরেরদিন সকালে শেবাচিম হাসপাতালের ওসিসিতে ভর্তি রেফার করা হয়েছে।
এ ঘটনাটি ব্যাপক আলোড়ন সৃষ্টি করে বরিশাল স্হানীয় ও জাতীয় পত্রিকা সহ অনলাইন পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশিত হওয়ায় পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে বরিশালের সহকারী পুলিশ সুপার (সার্কেল) মেহেন্দিগঞ্জ পুলিশ সদস্য সুবীরের মাধ্যমে লিখিত অভিযোগে জাহানারার বেগমের কাছ জোরপূর্বক স্বাক্ষর নেয়া হয়।
বাস্তবের ঘটনার সঙ্গে বাদীর ও প্রত্যক্ষদর্শীরা জানিয়েছেন,তাতেই প্রমাণ হচ্ছে শুরু থেকেই পুলিশ আসামীদের কাছ থেকে মোটা অংকের ঘুষ বিনিময়ে অতিউৎসাহী হয়ে গিয়াস শরীফকে আটকের পর আসামীদের বাঁচাতে ওই লিখিত অভিযোগে স্বাক্ষর নিয়েছে।মামলা গ্রহণের পর আসামীদের বিরুদ্ধে কোনোদিন পুলিশ গ্রেফতার অভিযান চালাতে পারেননি।আসামীরা ২৪দিন পুলিশের সঙ্গে ঘুরে বেড়ালেও পুলিশ গ্রেপ্তার না করায় সরকারের উচ্চ পর্যায়ে অবগত করায় হাইকোর্টে আত্মসমর্পণের পর ৬ সপ্তাহের অন্তবর্তীকালীন জামিন পেয়েছেন।
আসামীদের অন্তবর্তীকালীন জামিনের মেয়াদ শেষে বিচারিক আদালতে আত্মসমর্পণ না করে পুলিশের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন।
আসামীরা ৩০ জুনের মধ্যেই বিচারিক আদালতে হাজির হয়ে জামিন নেয়া কথা থাকলেও নেয়নি। উচ্চ আদালত অবমাননার দায়ে ওয়ারেন্ট ইস্যু করা হয়েছে।এছাড়াও ৭নং আসামি কাজী আবু তালেবের বিরুদ্ধে বিস্ফোরক দ্রব্য আইনে মামলার ওয়ারেন্ট ইস্যু থাকা সত্ত্বেও পুলিশের সঙ্গে ঘুরে বেড়ায়।এসব বিষয়ে আদালতে বাদীর পক্ষে আবেদন করায় বাদীর অভিযোগ আমলে নিয়ে আদালত সরাসরি ওয়ারেন্ট ইস্যু পূর্বক পুলিশকে বাদীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নির্দেশ দিয়েছেন।
তবে পুলিশের এসআই কমল চন্দ্র দে বাদীর কাছে মামলার চার্জশিট অনুমোদন ও দাখিল করা বাবদ খরচ ৫০ হাজার টাকা দাবি করে।বাদী জাহানারা ৫ হাজার টাকা দিয়েছে।মামলার অভিযোগপত্র দাখিলের পর আরও ৫ হাজার টাকা দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।
তবুও মন ভরেনি,মানুষ রুপি নরপশু পুলিশ কর্মকর্তার। তার পুরো ৫০ হাজার টাকা না দিলে আসামীদের পক্ষে প্রতিবেদন দেয়া হবে।মিথ্যা নারী নির্যাতন মামলা দায়েরের জন্য আপনাকে জেলে যেতে হবে।আপনার বিরুদ্ধে ১৭ ধারায় মামলা রুজু করা হবে।
এছাড়াও বিভিন্ন ধরনের হুমকি-ধামকি দিয়ে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে আসছিলেন।পুলিশের উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে।এই বাস্তবতাকে কাজে লাগিয়েছে পুলিশ।ওয়ারেন্ট ইস্যুর পর তড়িঘড়ি করে বাদী জাহানারা বেগমের বিরুদ্ধে পুলিশ সুপারের কাছে ১৭ ধারায় মামলা দায়েরের অনুমতি চেয়ে ৮ জুলাই ২০১৯ আবেদন করেছেন।
তারই ধারাবাহিকতায় ১০ জুলাই ২০১৯ আসামীদের অব্যাহতি চেয়ে আবেদন থানার অফিসার ইনচার্জ(ওসি) মোঃ আবিদুর রহমান এর কাছ থেকে অনুমোদন করিয়েছে।
আসামীর সাথে একাধিকবার বৈঠক শেষে ১৭ জুলাই ২০১৯ এএসপি(সার্কেল) মেহেন্দিগঞ্জ সুকুমার রায় এর অনুমোদন সাপেক্ষে চুড়ান্ত রিপোর্ট জমা দিয়েছেন।বাদী জাহানারা বেগম পুলিশের প্রতিবেদন ও অতিউৎসাহী হয়ে মামলা গ্রহণ করা সহ সকল ঘটনার পূর্নরায় বিচার বিভাগীয় তদন্তের মাধ্যমে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ বিচারের দাবি জানিয়েছে।আদালত বাদীর জবানবন্দি রেকর্ড পূর্বক আবেদন মঞ্জুর করে উক্ত আদেশ দিয়েছেন।
বিস্তারিত আসছে…
Leave a Reply