শুক্রবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৫, ০১:৪৪ পূর্বাহ্ন
নিজস্ব প্রতিনিধি॥ শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের সেই মাদকাসক্ত কর্মচারী গালকাটা মামুনের বিরুদ্ধে এবার ক্ষেপেছে সাধারণ কর্মচারীরা। আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ওষুধ চোর চক্রের অন্যতম হোতা গালকাটা মামুনকে বদলী সহ শাস্তির আল্টিমেটাম দিয়েছেন তারা।
অন্যথায় সকল পর্যায়ের চতুর্থ শ্রেণি’র কর্মচারীরা কর্মবিরতি’র মত কর্মসূচি দেয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে মামুন কর্তৃক হাসপাতালের এক কর্মচারীকে লাঞ্ছিত করার ঘটনার জের ধরে এই আল্টিমেটাম দেয়া হয়েছে।
যদিও হাসপাতাল পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন জানিয়েছেন কর্মচারীদের মধ্যকার দ্বন্দ্বের অবসান ঘটানো হয়েছে। সেই সাথে গালকাটা মামুনের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা সহ বদলীর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
লাঞ্চিত হওয়া অফিস সহায়ক কামরুজ্জামান লিখন জানান, মঙ্গলবার দুপুর দেড়টার দিকে চতুর্থ শ্রেণি স্টাফ কোয়ার্টার সংলগ্ন চরের বাড়ির বাসিন্দা রনি নামের যুবক তার খালাকে মেডিসিন বহিঃর্বিভাগে ১০৫ নম্বর কক্ষে ডাক্তার দেখাতে নিয়ে আসে।
পরিচিত হওয়ায় ডাক্তার দেখানো শেষে রনি’র হাতে থাকা ব্যবস্থাপত্র নিয়ে পাশর্^বর্তী অপর ব্যক্তিকে সহযোগিতার জন্য বলেন। এটা দেখা মাত্রই সেখানে উপস্থিত থাকা বিতর্কিত ও মাদকাসক্ত কর্মচারী গালকাটা মামুন ঝাপিয়ে পড়ে চিকিৎসকের চেম্বারের সহকারী লিখনের ওপর। তাকে ডায়াগনস্টিক সেন্টারের দালাল আখ্যা দিয়ে অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও শারীরিকভাবে লাঞ্চিত করে।
বিষয়টি নিয়ে ক্ষুব্ধ হন অন্যান্য সাধারণ কর্মচারীরা। তাৎক্ষনিকভাবে লিখনকে লাঞ্চিত করার প্রতিবাদ জানান তারা। এমনকি কর্মচারীরা বিষয়টি নিয়ে হাসপাতাল পরিচালক ডা. বাকির হোসেন ও আউটডোর ডক্টর্স এ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ডা. সৌরভ সুতর এর নিকট অভিযোগ করেন। তাদের কাছে মামুনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানান।
লিখন বলেন, পরিচালক স্যার এবং ডা. সৌরভ সুতর স্যার সহ অন্যান্য স্যারেরাও বিষয়টি নিয়ে হতবাক হয়েছেন। মামুনের এমন কর্মকান্ডে তারাও অনেকটা বিব্রত। তাই বিষয়ে তারা ব্যবস্থা গ্রহন করবেন বলে আশ^স্থ করেছেন। তাছাড়া বিষয়টি নিয়ে সন্ধ্যায় চতুর্থ শ্রেণি কর্মচারী কল্যান সমিতির সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেখানে মামুনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানানো হয়েছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে ব্যবস্থা গ্রহন না করলে সকল কর্মচারী কর্মবিরতিতে যাবে বলেও নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়েছে।
খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, শেবাচিম হাসপাতাল থেকে সরকারি ওষুধ চুরির ঘটনার অন্যতম হোতা সেফালী বেগম এর ছেলে মামুন ওরফে গালকাটা মামুন। ওষুধ চুরি এবং তা পুকুরে ভাসিয়ে দেয়ার ঘটনায় মা সেফালী বেগমের সাথে পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয় গালকাটা মামুনও। কিন্তু মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তার কারসাজিতে চার্জশীট থেকে বাদ পড়ে যায় মামুন।
এছাড়াও তার বিরুদ্ধে এক ইউপি সদস্যকে হত্যার চেষ্টার ঘটনায় মামলা রয়েছে। সেই মামলার চার্জশীটের তথ্য গোপন করে শেবাচিম হাসপাতালে সরকারি চাকরিতে যোগ দেয় মামুন। এর পর থেকেই একের পর এক অপকর্মের সৃষ্টি করে যাচ্ছে গালগাটা মামুন। সর্বশেষ গণপূর্ত উপ-বিভাগের এক উপ-সহকারী প্রকৌশলীকে অকথ্য ভাষায় গালাগাল দেয় মামুন।
ওই ঘটনায় পরিচালকের কাছে বিচার দিলে তিনি মামুনকে ক্ষমা চেয়ে ছেড়ে দেন। তার আগে হাসপাতালের মধ্যে গাঁজা সেবনের সময় শিক্ষার্থীদের হাতে আটক হয় গালগাটা মামুন। এসময় তার কাছ থেকে কিছু পরিমান গাঁজাও উদ্ধার করা হয়। তখন তাকে গণধোলাই দেয়ার পাশাপাশি মামুনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের দাবী জানানো হয় পরিচালকের নিকট।
সবশেষ গতকাল মঙ্গলবার হামলা করা হয়েছে কর্মচারীর উপর। এছাড়াও মাদকাসক্ত গালকাটা মামুন হাসপাতালের কোন কর্মচারীকেই তোয়াক্কা করছে না।
সবাইকেই অকথ্য ভাষায় গালাগাল সহ বিভিন্নভাবে লাঞ্চিত করে আসলেও কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহন করছেন না।এ প্রসঙ্গে হাসপাতাল পরিচালক ডা. মো. বাকির হোসেন বলেন, মঙ্গলবার কর্মচারীদের নিয়ে যে ঘটনা ঘটেছে সেটা এরই মধ্যে সমাধান করা হয়েছে। তাছাড়া অভিযুক্ত কর্মচারী মামুনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। আমরা তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থার অংশ হিসেবে তাকে বদলী করা হবে।
Leave a Reply