শুক্রবার, ২২ নভেম্বর ২০২৪, ০৫:২৬ অপরাহ্ন
নিজস্ব প্রতিবেদক: বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের (শেবাচিম) সকল প্রকার অনিয়ম-দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা দূর করে দলমত নির্বিশেষে সকলের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে হাসপাতালের পরিচালককে ৭ দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের নেতৃবৃন্দ। এই ৭ দিনের মধ্যে হাসপাতালে দৃশ্যমান পরিবর্তন দেখতে চান তারা। এছাড়া দলীয় প্রভাবমুক্ত থেকে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে তারা বলেন, ছাত্ররা সবসময় পাশে আছে এবং থাকবে। যথাযথ দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে পরিচালককে স্বপদ থেকে ইস্তফা দেওয়ার দাবি জানান তারা।
আজ দুপুর ১২টার দিকে নেতৃবৃন্দ শেবাচিম পরিচালকের সাথে সাক্ষাত করে এ দাবি জানান তারা। পরে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছাত্র আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার খোঁজ খবর নেন নেতৃবৃন্দ।
দক্ষিণাঞ্চলের একমাত্র বৃহৎ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠান বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতারে দীর্ঘদিন ধরেই নানা সমস্যায় জর্জরিত। সময় মতো চিকিৎসক না থাকা, প্যাথলজিক্যাল পরীক্ষা নিরীক্ষা, দালালদের দৌড়াত্ম্য, দলীয় প্রভাব বিস্তার, রোগীদের হয়রাণী করার অভিযোগ দীর্ঘদিনের। গত ৫ আগস্ট ছাত্র আন্দোলনের মুখে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পদত্যাগ করার পর শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন অনিয়ম-দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনা প্রতিরোধে মাঠ পর্যায়ে কাজ শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা।
এরই অংশ হিসেবে শনিবার শেবাচিম হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. সাইফুল ইসলামের সাথে সাক্ষাত করেন বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়কসহ অন্যান্য সমন্বয়ক ও শিক্ষার্থীরা। এ সময় উপস্থিত ছিলেন হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. এসএম মনিরুজ্জামান, বরিশাল বিভাগীয় সমন্বয়ক শহীদুল ইসলাম শাহেদ, বরিশাল বিশ^বিদ্যালয়ের সমন্বয়ক মাইনুল ইসলাম, ওয়াহিদ হাসান ও মো. রাকিব আহম্মেদ। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন বরিশাল মহানগর বিএনপির সদস্য সচিব জিয়া উদ্দিন শিকদার, সাবেক কাউন্সিলর বিএনপি নেতা কেএম শহীদুল্লাহসহ অন্যান্যরা।
নেতৃবৃন্দ এ সময় বলেন, বরিশাল শেবাচিম হাসপাতালে কোন দালাল থাকতে পারবে না। হাসপাতালের কোন স্টাফ ডায়াগনস্টিক ব্যবসা করতে পারবে না। হাসপাতালে কোন ওষুধ কোম্পানীর রিপ্রেজেনটেটিভ এ্যালাউ করা যাবে না, আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের যথাযথ চিকিৎসা করতে হবে। নেতৃবৃন্দ বলেন, অনেক চিকিৎসক এখনো কাজে যোগ দেননি এবং বিএনপিপন্থী চিকিৎসকরা আওয়ামীলীগপন্থী রোগী আসলে চিকিৎসা সেবা দিচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে রয়েছে। এছাড়া দলীয় প্রভাব খাটানোরও অভিযোগ উঠেছে।
নেতৃবৃন্দ সকল চিকিৎসকদের দলীয় প্রভাবমুক্ত থেকে কাজ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, হাসপাতালে কোন ধরণের রাজনীতি থাকবে না। সকল চিকিৎসকদের নিরাপত্তার দায়িত্ব আমাদের। গোটা সংস্কার না হওয়া পর্যন্ত ছাত্ররা মাঠে থাকবে বলেও জানান নেতৃবৃন্দ। পরবর্তীতের ছাত্র আন্দোলনে আহত শিক্ষার্থীদের তালিকা এবং হাসপাতালে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ১৫টি দাবি সম্বলিত একটি পত্র দিয়ে পরিচালককে বলেন, আগামী ৭ দিনের মধ্যে হাসপাতালে দৃশ্যমান পরিবর্তন আনতে হবে।
বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. সাইফুল ইসলাম শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো পূরণের আশ^াস দিয়ে তাদের সহযোগিতা চান। এছাড়া হাসপাতালের কোন চিকিৎসক রবিবারের মধ্যে কাজে যোগ না দিলে ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি হাসপাতালের কোন আনসার, স্টাফ কিংবা চিকিৎসকদের কোন ধরণের ডায়াগনস্টিক সেন্টার বা দালাল সংশ্লিষ্টতা পেলে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানান।
বাজার মনিটরিংয়ে শিক্ষার্থীরা:
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের মুখে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর রাস্তা পরিস্কার ও ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের পাশাপাশি এবার বাজারগুলোতেও মনিটরিং কার্যক্রম শুরু করেছেন শিক্ষার্থীরা। শনিবার দ্বিতীয়দিনের ন্যায় নগরীর বিভিন্ন বাজার পরিদর্শন করেছেন বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা।
এরই অংশ হিসেবে নগরীর নতুনবাজার ও বাজার রোড, পোর্টরোড বাজার, নথুল্লাবাদ বাজার ও চৌমাথা বাজার পরিদর্শন করেছেন তারা। শিক্ষার্থীরা বলেন, মনিটরিংয়ে তারা বাজারে সঠিক মূল্য তালিকা প্রদর্শন হচ্ছে কিনা, সেই দরে পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে কিনা সেটা যেমন দেখছেন, তেমনি মেয়াদোত্তীর্ণ পণ্য বেচা-বিক্রিরোধেও ব্যবসায়ীদের সতর্ক করেছেন।
পাশাপাশি ভোক্তার অধিকার নিশ্চিত করতে ব্যবসায়ীদের কিছু নির্দেশনা দেওয়া হচ্ছে, যা পরবর্তী সময়ে কার্যকর করা হচ্ছে কিনা, সেটিও মনিটরিংয়ের মাধ্যমে দেখা হবে।
Leave a Reply