মঙ্গলবার, ২৬ নভেম্বর ২০২৪, ০২:২৩ পূর্বাহ্ন
ভয়েস অব বরিশাল ডেস্ক।। মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রার সাথে উত্তর-পূবের হিমের হাওয়ায় দক্ষিণাঞ্চলের জেলে আর কৃষি শ্রমিকরা অনেকটাই বেকার। চরম বিপর্যয়ের কবলে এ অঞ্চলের দ্বিতীয় বৃহৎ দানাদার খাদ্য ফসল বোরো বীজতলারও। উঠতি গোল আলুর জমিও লেট ব্লাইট রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। জনস্বাস্থ্যের জন্যও হুমকি সৃষ্টি হয়েছে।
স্বাভাবিকের চেয়ে ২.১ ডিগ্রী সেলসিয়াস কম, ৯.৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস তাপমাত্রার সাথে কনকনে ঠান্ডা হাওয়ায় জেলেদের পক্ষে নদীতে নাও ভাসান প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। ফলে ভরা মৌসুমে মৎস্য আহরণ প্রায় বন্ধ। বাজারেও সরবরাহে ঘাটতি সৃষ্টি হয়েছে। একই অবস্থা ফসলের মাঠেও। রবির ভরা মৌসুমে মাঠে মাঠে বোরো আবাদের সাথে গোল আলু, গম সহ শীতকালীন বিভিন্ন সবজির পরিচর্যা জরুরী হলেও গত দুদিন কনকনে শীতে নদ-নদী আর ফসলের মাঠে দাঁড়ানই যাচ্ছে না।
বরিশালে শনিবার সকালে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৯.৪ ডিগ্রী সেলসিয়াস। যা স্বাভাবিকের ২.১ ডিগ্রী কম। আবহাওয়া বিভাগের মতে উপ-মহাদেশীয় উচ্চচাপ বলয়ের বর্ধিতাংশ, ভারতের পশ্চিমবঙ্গ ও তৎসংলগ্ন বাংলাদেশের পশ্চিমাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে মৌসুমী স্বাভাবিক লঘুচাপ অবস্থান করছে। বরিশাল ও গোপালগঞ্জ সহ দেশের বিভিন্ন এলাকার ওপর দিয়ে বহমান মৃদু শৈত্য প্রবাহ অব্যাহত থাকার কথা জানিয়ে রোববারের পরবর্তী ৪৮ ঘন্টায় তাপমাত্রা বাড়বে বলেও জানিয়েছে আবহাওয়া বিভাগ।
এদিকে মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের জনজীবনও প্রায় বিপর্যস্ত অতি জরুরী প্রয়োজন ছাড়া গত দুদিন কেউ ঘর থেকে বের হননি। সাপ্তাহিক ছুটির দিনের সাথে শৈত্য প্রবাহে বরিশাল মহানগরীর রাস্তাঘাটেও খুব জনসমাগম লক্ষ করা যায়নি।
তবে এরচেয়েও বড় বিপর্যয় ঘটতে যাচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের অর্থনীতির সব চেয়ে বড় অনুষঙ্গ কৃষি ও মৎস্য সেক্টরে। মৌসুমের দ্বিতীয় দফার শৈত্য প্রবাহে বোরো বীজতলা কোল্ড ইনজুরির সাথে গোল আলুর জমি ছত্রাকবাহী লেট ব্লাইট রোগে আক্রান্ত হবার প্রবনতা ক্রমশ বাড়ছে।
চলতি মৌসুমে পৌষের শেষভাগে ঘন কুয়াশার সাথে তাপমাত্রার পারদ স্বাভাবিকের নিচে নেমে যাওয়ায় বোরো বীজতলা একদফা ক্ষতির শিকার হয়। বরিশাল কৃষি অঞ্চলের ১১ জেলায় চলতি মৌসুমে প্রায় ৩ লাখ ৪০ হাজার হেক্টর জমিতে বোরো আবাদের মাধ্যমে প্রায় ১৫ লাখ টন চাল উৎপাদনের লক্ষ্য থাকলেও ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে নিম্নচাপ ‘জাওয়াদ’এর প্রভাবেও বোরো বীজতলা এবং গোল আলু সও উঠতি আমন সহ বিভিন্ন রবি ফসলের ক্ষতির পরিমাণ ছিল প্রায় ১শ কোটি টাকা।
এ বিরূপ আবহাওয়া জনস্বাস্থ্যের জন্যও বিরূপ পরিস্থিতির সৃষ্টি করছে। গত এক সপ্তাহে ঠান্ডাজনিত কারণে বিপুল সংখ্যক শিশু ও বয়োবৃদ্ধ নানা রোগে আক্রান্ত হয়েছেন বলে চিকিৎসকগন জানিয়েছেন। হাসপাতালগুলোতেও এধরনের রোগীর সংখ্যা ক্রমশ বাড়ছে বলে জানা গেছে।
Leave a Reply